সমগ্র মুসলিম জাতির উপর কর্তব্য হলো, আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেওয়া। অমুসলিমদেরকে আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেওয়া সমস্ত মুসলিমের উপর ওয়াজিব। কেননা, আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় গিরা খুলে যায়। আর মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় গিরা হচ্ছে কুফর এবং শিরকের গিরা। আর যখনই এ গিরাটি খুলে যায়, তখনই অন্যান্য সব গিরা খুলে যায়।
বিভিন্ন মাসআলা-মাসায়েলে ফাতাওয়া দেওয়ার বিষয়টি আলেমগণের সাথে নির্দিষ্ট। যার ফাতওয়া জানা থাকবে, তিনি ফাতওয়া দিবেন। আর জানা না থাকলে প্রশ্নকারীকে এমন সব আলেমের সন্ধান দিবেন, যাদেরকে আল্লাহ অধিক জ্ঞান, তীক্ষ্ণ বুঝ-শক্তি ও মুখস্থ-শক্তি দ্বারা বিশেষিত করেছেন। এক্ষেত্রে আলেমগণ ভাল কাজের দিক-নির্দেশনাকারী হিসাবে তা পালনকারীর মতই প্রতিদান পাবেন।
ছাহাবীগণের মধ্যে সবাই ফাওওয়া দিতেন না, বরং একজন আরেকজনের কাছে ফাতওয়া ঠেলে দিতেন। তাদের মাঝে খুব কম সংখ্যক মুফতীই ছিলেন। মুফতীগণের মধ্যে আলী, মু‘আয, যায়েদ ইবনে ছাবেত, ইবনে আববাস এবং ইবনে উমার (রা.) অন্যতম। অতএব, সবার জন্য ফাওওয়া দেয়া বৈধ নয়, যাতে মানুষ আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে (ভুল ফৎওয়ার কারণে) অসত্য কথা বলতে না পারে। সেজন্য আলেম এবং ফক্বীহগণই ফাওওয়া দিবেন। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ (43)) ... [النحل: 43]
‘যদি তোমরা না জান, তবে জ্ঞানীদের জিজ্ঞেস কর’ (সূরা আন-নাহল: ৪৩)।
তবে, দা‘ওয়াতী ক্ষেত্রে প্রত্যেকেই তার জ্ঞান অনুযায়ী এবং কুরআন জানা অনুপাতে দা‘ওয়াত দিবে। আর কুরআন জানার সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে, এক আয়াত। অতএব, এউম্মতের প্রত্যেকের উপর দা‘ওয়াতী কাজ, সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করা ওয়াজিব। ছালাত, যাকাত ইত্যাদির বিধি-বিধান নাযিল হওয়ার পূর্ব থেকেই ছাহাবীগণ আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াতী কাজ করতেন। মহান আল্লাহ এ মুসলিম জাতিকে দা‘ওয়াতের জন্য বাছাই করেছেন, যেমনভাবে তিনি তার দিকে আহবানকারী হিসাবে নবীগণকে মনোনীত করেছিলেন। তিনি তাদেরকে মর্যাদা দিয়েছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দানের দায়িত্ব দিয়েছেন।
১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (104)) ... [آل عمران: 104]
‘আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম’ (সূরা আলে ইমরান: ১০৪)।
২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ ) [التوبة: 71]
‘আর মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা ছালাত ক্বায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আত-তাওবা: ৭১)।
৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
(كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ مِنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ) [آل عمران: 110]
‘তোমরা হলো সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক’ (সূরা আলে ইমরান: ১১০)।