আমাদের মহান রব একক ও নজীর বিহীন হওয়ার গুণে গুণান্বিত। মাখলুকের মধ্যে কেউ তার গুণে ভূষিত নয়।

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

فَإِنَّ رَبَّنَا جَلَّ وَعَلَا مَوْصُوفٌ بِصِفَاتِ الْوَحْدَانِيَّةِ، مَنْعُوتٌ بِنُعُوتِ الْفَرْدَانِيَّةِ، لَيْسَ فِي مَعْنَاهُ أَحَدٌ مِنَ الْبَرِيَّةِ

আমাদের মহান রব একক ও নজীর বিহীন হওয়ার গুণে গুণান্বিত। মাখলুকের মধ্যে কেউ তার গুণে ভূষিত নয়।

..........................................................

ব্যাখ্যা: শাইখ ইমাম ইবনে আবীল ইয্ রহিমাহুল্লাহ এখানে এমন জিনিসের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার পবিত্রতা বর্ণনা করেছেন, যা তার সিফাত হিসাবে স্বীকৃত। আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সত্তাকে অনেক জিনিস থেকে পবিত্র করেছেন এবং তার পবিত্র সত্তার জন্য অনেক সুউচ্চ বিশেষণ সাব্যস্ত করেছেন। শাইখ এখানে আল্লাহর সিফাতের ব্যাপারে যে বাক্যটি উল্লেখ করেছেন, তা সূরা ইখলাসের মর্মার্থ থেকে নেয়া হয়েছে।

(قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، اللَّهُ الصَّمَدُ) ‘‘বল, আল্লাহ একক, অদ্বিতীয়। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। (সূরা ইখলাস: ১-২)। এটি নেয়া হয়েছে, قل هو الله أحد থেকে।

‘তিনি নজীরবিহীন গুণে গুণান্বিত। এটি নেয়া হয়েছে, اللَّهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ‘‘আল্লাহ অমুখাপেক্ষী[1] থেকে। তার কোন সন্তান নেই এবং তিনি কারোর সন্তান নন’’ (সূরা ইখলাস: ২-৩)।

মাখলুকের মধ্যে কেউ তার গুণে ভূষিত নয়। এটি নেয়া হয়েছে, আল্লাহ তা‘আলার বাণী: وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ ‘‘এবং তার সমতুল্য কেউ নেই’’ (সূরা ইখলাস:৪) থেকে। সেই সঙ্গে এ শেষোক্ত বাক্যটি প্রথমোক্ত বাক্যে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত সিফাতগুলোর তাগিদ স্বরূপ এবং তার পবিত্র সত্তা ও সিফাতের সদৃশ না থাকার দাবিকে শক্তিশালী করা হয়েছে। আর الوصف এবং النعت শব্দদ্বয় পরস্পর সমার্থবোধক। কেউ কেউ বলেছেন, উভয় শব্দের অর্থের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। তারা বলেছেন, আল্লাহর সত্তার জন্য রয়েছে সিফাত আর তার কর্মের জন্য হয় نعت বা প্রশংসা।

এমনি الوجدانية এবং الفردانية শব্দদ্বয়ও সমার্থবোধক। কেউ কেউ বলেছেন, উভয়ের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। তারা বলেছেন আল্লাহ তা‘আলার যাতের জন্য ব্যবহৃত হয় الوحدانية এবং তার সিফাতের জন্য হয় الفردانية।

মোট কথা আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় সত্তায় একক এবং তার সিফাতে অদ্বিতীয়। এ অর্থটি সঠিক। এতে আলেমদের কোনো মতভেদ নেই। তবে শব্দের মধ্যে শুধু এক প্রকার পুনরাবৃত্তি রয়েছে। এ কিতাবের বিভিন্ন স্থানে ইমাম ত্বহাবী এভাবে একই অর্থে একাধিক শব্দের পুনঃব্যবহার করেছেন। তবে কথা হলো আক্বীদাহ সংক্রান্ত কিতাবাদির তুলনায় ভাষণ-বক্তৃতা ও দুআর মধ্যে এ জাতিয় শব্দ উল্লেখ করা অধিক শোভনীয়। কেননা খুতবা ও ভাষণের মধ্যে ছন্দময় বাক্য উল্লেখ করা খুবই উপকারী।

স্রষ্টার সিফাতকে সৃষ্টির সিফাত থেকে পবিত্র করার ক্ষেত্রে لَيْسَ فِي مَعْنَاهُ أَحَدٌ مِنَ الْبَرِيَّةِ ‘‘মাখলুকের মধ্যে কেউ তার গুণে ভূষিত নয়’’ এ কথা বলার চেয়ে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ‘‘তার সদৃশ কোনো কিছুই নেই’’ (সূরা শূরা: ১১) বলাই অধিক পরিপূর্ণ।

[1]. আল্লাহ তাআলা কারোর উপর নির্ভরশীল নন এবং সবাই তার উপর নির্ভরশীল।