পূর্বে যেমন উল্লেখ হয়েছে যে, তিনি তাঁর কিয়াম রুকূর কাছাকাছি দীর্ঘায়িত করতেন, বরং কখনো এই পরিমাণ দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, দীর্ঘ সময় দাঁড়ানোর কারণে মন্তব্যকারী এমনও বলত যে, তিনি ভুলে গেছেন।[1]
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এতে স্থিরতার জন্য নির্দেশ দিতেন, তিনি ছালাতে ক্ৰটিকারীকে বলেছিলেনঃ
ثم ارفع رأسك حتى تعتدل قائما فيأخذ كل عظم مأخذه، وفي رواية : وإذا رفعت فأقام صلبك، وارفع رأسك حتى ترجع العظام إلى مفاصلها، وذكر له : أنه لاتتم صلاة لأحد من الناس إذا لم يفعل ذلك
অতঃপর তুমি তোমার মাথা এভাবে উঠবে যাতে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পার ও প্রত্যেকটি হাড় স্ব-স্ব স্থানে ফিরে যেতে পারে। অপর বর্ণনায় আছে যখন মাথা উঠবে তখন মেরুদণ্ডকে সোজা করবে এবং এমনভাবে মাথা উঠাবে যাতে হাড়গুলো স্বীয় জোড়ায় ফিরে যায়[2] এবং তাকে এও বলে দেন যে, কারো ছলাত ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণতা লাভ করবে না, যতক্ষণ না সে এ কাজগুলো করবে। তিনি বলতেনঃ
لا ينظر الله عز وجل الى صلاة العبد لا يقيم صلبه بين ركوعها وسجودها
আল্লাহ ঐ বান্দার ছালাতের দিকে তাকান না, যে ছালাতের রুকু ও সাজদার মধ্যে স্বীয় মেরুদণ্ড সোজা করে না।[3]
[2] বুখারী, মুসলিম। শুধু প্রথম শব্দে, দারিমী, হাকিম, শাফিঈ ও আহমাদ অপর শব্দে। এখানে عظام দ্বারা উদ্দেশ্য পীঠের মেরুদণ্ডে অবস্থিত পরস্পর মিলিত হাড় যেমন একটু পূর্বে রুকু থেকে সোজা হওয়ার অধ্যায়ে উল্লেখ হয়েছে। আর مفاصل হচ্ছে مفصل শব্দের বহুবচন যার অর্থঃ শরীরের প্রত্যেক দুই হাড়ের মিলন কেন্দ্র (জয়েন্ট)। দেখুন আল-মুজামুল অসীত্ব।
জ্ঞাতব্যঃ এই হাদীছের মর্ম সুস্পষ্ট। আর তা হচ্ছে এই যে, কাউমায় (দাঁড়ানোতে) ধীরস্থিরভাবে অবস্থান করা, পক্ষান্তরে মক্কা, মদীনা ও পার্শ্ববতীর্ণ অন্যান্য এলাকায় আমাদের যে ভাইগণ এ হাদীছ থেকে অত্র কাউমায় বাম হাত ডান হাতের উপরে রাখার বৈধতা প্রমাণ করেছেন তা হাদীছটির বর্ণনা সমষ্টি থেকে অনেক দূরে। যে হাদীছটি ফকীহদের নিকট ছালাতে ক্ৰটিকারীর হাদীছ নামে পরিচিত। বরং এহেন প্রমাণ গ্ৰহণ বাত্বিল। কেননা উল্লেখিত হাত রাখার কোন আলোচনা উপরোক্ত হাদীছের কোন সূত্রের কোন শব্দে প্রথম কিয়ামেই নেই। অতএব উল্লেখিত ধারণা করার ব্যাখ্যায় রুকুর পর বাম হাতকে ডান হাতের দ্বারা ধারণ করা কিভাবে সিদ্ধ হতে পারে? এই বক্তব্য হল ঐ অবস্থার জন্য প্রযোজ্য যখন হাদীছের শব্দ সমষ্টি এখানে উক্ত ব্যাখ্যার স্বপক্ষে শক্তি যোগায় অথচ এখানে তা না হয়ে শব্দগুলো পরিষ্কারভাবে এর বিপক্ষে প্রমাণ বহন করছে। সর্বোপরি উপরোক্ত হাত রাখার ব্যাপারে মূলতঃ হাদীছটিতে আদৌ কোন বক্তব্য নেই। কেননা عظام দ্বারা পিঠের হাড় উদ্দেশ্য যেমনটি পূর্বে উল্লেখ হয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পূর্বোক্ত কাজও এর সমর্থন করে। যাতে রয়েছে- اسوى حتى يعود كل فقار ومكانه অর্থঃ এমনভাবে সোজা হতেন যে, প্রত্যেকটি জোড়া স্ব-স্ব স্থানে ফিরে যেত। তাই ইনছাফ সহকারে চিন্তা করুন। এ বিষয়ে আমি মোটেও সন্দিহান নাই যে, এই কাউমায় বুকের উপর হাত রাখা ভ্ৰষ্টতাপূর্ণ বিদ'আত, কেননা ছালাতের ব্যাপারে এতসব হাদীছ থাকা সত্ত্বেও কোন একটি হাদীছে আদৌ এর উল্লেখ আসেনি। যদি এর কোন ভিত্তি থাকত তবে অবশ্যই আমাদের পর্যন্ত একটি সূত্রে হলেও কোন বর্ণনা এসে পৌছত। একথার সমর্থনে এও রয়েছে যে, সলাফদের মধ্যে কেউই এই আমল করেননি এবং আমার জানামতে কোন হাদীছের ইমাম তা উল্লেখও করেনি।
আর শাইখ তুওয়াইজিরী স্বীয় ‘রিসালার’ (১৮-১৯) পৃষ্ঠায় ইমাম আহমদ (রহঃ) থেকে যা উল্লেখ করেছেন তার সাথে উপরোক্ত বক্তব্যের কোন দ্বন্দ্ব নেই যাতে তিনি বলেছেনঃ রুকুর পরে কেউ ইচ্ছা করলে স্বীয় হস্তদ্বয় ছেড়েও দিতে পারে এবং বেঁধেও রাখতে পারে (এটা ছালিহ বিন ইমাম আহমদ তাঁর ‘মাসায়িল’ গ্রন্থের ৯০ পৃষ্ঠায় স্বীয় পিতা থেকে যা উল্লেখ করেছেন তারই অর্থ)। দ্বন্দ্ব হওয়ার কারণ এই যে, কথাটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেননি বরং তা তাঁর গবেষণা ও রাই প্রসূত কথা যা কখনো ভুল হয়ে থাকে। অতএব কোন বিষয় (যেমন উপস্থিত বিষয়টি) বিদাআত সাব্যস্ত হওয়ার উপর কোন বিশুদ্ধ দলীল পাওয়া গেলে কোন ইমামের মতে তা বিদ’আত হওয়ার পথে অন্তরায় হবেনা। যেমন ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ তাঁর কিছু কিতাবাদিতে এ বিষয়টি ধার্য করেছেন। বরং আমি ইমাম আহমদের এ বক্তব্যে এরই প্রমাণ পাচ্ছি যে, তাঁর নিকট উপরোক্ত হাত রাখা হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি কেননা তিনি তা করা ও না করার বেলায় এখতিয়ার দিয়েছেন। তবে সম্মানিত শাইখ কি একথা বলবেন যে, ইমাম রুকুর পূর্বেও হাত রাখার ক্ষেত্রে এখতিয়ার দিয়েছেন। অতএব সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, উপরোক্ত হাত রাখার বিষয়টি হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। আর এটাই উদ্দেশ্য ছিল। এটা ছিল এই মাসআলা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। তবে মাসআলাটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কিন্তু এখানে এর সুযোগ নেই বরং তার ঐ প্রতিবাদ পর্বেই রয়েছে যার ইঙ্গিত এই নতুন মুদ্রিত কিতাবের পঞ্চম ভূমিকার রয়েছে।
[3] ছহীহ সনদে আহমাদ ও ত্বাবারানী স্বীয় “আল-কাবীর’ গ্রন্থে।