রিয়াদ শহরে পড়া-শুনা করার জন্য আমি তরুণ বয়সেই আমার পরিবার ছেড়ে গিয়েছিলাম। আমি আমার কোন এক চাচার সাথে অত্যন্ত কঠোর পরিবেশে ছিলাম। প্রতিদিন সকালে মাদ্রাসায় যাওয়ার জন্য আমাকে ত্রিশ মিনিট হাটতে হতো এবং বাসায় ফিরে আসার জন্য দুপুরে প্রখর তাপে তিরিশ মিনিট হাটতে হতো। সকালের নাস্তা, দুপুরে খাবার এবং রাতের খাবার তৈরিতে আমি অংশ গ্রহণ করতাম। আমার কাজ ছিল ক্লীনার দিয়ে ঘর-দোর পরিষ্কার করা, রান্না ঘর পরিষ্কার করা এবং ঘর-দোর সাজানো। তা ছাড়া আমি পড়াশুনার ব্যাপারে কঠিন পরিশ্রম করতাম এবং মাদ্রাসার ক্রিয়া-কলাপে অংশগ্রহণ করার জন্যও সময় দিতাম। আমি সব সময়ই ভাল মান (গ্রেড) অর্জন করতাম যা আমাকে আরো কঠিন পরিশ্রম করতে তাড়া করত।
আমার একটাই মাত্র জামা ছিল যেটাকে সবসময় আমার নিজের হাতে পরিষ্কার করে ইস্তিরি করতে হতো। আমি বাসায়, মাদ্রাসায় এবং বিশেষ অনুষ্ঠানেও এই একই জামা পরিধান করতাম। কেননা, মামুলি প্রয়োজনাদির জন্যেই যেমন খাবার টাকা, ভাড়ার টাকার জন্যই আমার অধিকাংশ টাকা (যে সামান্য টাকা আমি বৃত্তি হিসেবে পেতাম) তা শেষ হয়ে যেত (তাই আমি ঘন ঘন নতুন পোশাক বানাতে বা কিনতে পারতাম না)। আমরা সব সময় একই অবস্থায় ছিলাম, অতএব আমরা আদৌ কখনো মাংস খেয়েছি কিনা তা ছিল বিরল এবং আমরা আদৌ কখনো ফল খেয়েছি কিনা তা ছিল (এমন কি) আরো বেশি বিরল।
আমরা সবাই পড়াশুনার ব্যাপারে কঠোর পরিশ্রম করতাম। কেননা মাসে মাত্র একবারই আমি বিশ্রাম করার সুযোগ পেতাম বা একটু মজা করতে বের হওয়ার সুযোগ পেতাম। আমাদের ধর্মীয় ও আরবী ভাষাতত্ত্ব গবেষণার মতো কঠিন বিষয়ের সাথে বীজগণিত, পাটীগণিত, ইংলিশ ও পদার্থ বিদ্যাসহ প্রায় সতেরটি বিষয় আমরা মাদ্রাসায় পড়াশুনা করতাম। আমি মাঝে মাঝে মাদ্রাসা থেকে আরবী কবিতার বই ধার করতাম এবং একটানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কবিতা পাঠে আচ্ছন্ন বা মগ্ন হয়ে থাকতাম।
এখন যখন আমার অতীতের সেসব দিনের কথা মনে পড়ে তখন আমার মনে পড়ে যায় যে, আমার সে সব কষ্ট সত্ত্বেও আমি সুখী ছিলাম এবং প্রতিরাতে শান্তিপূর্ণ ও শান্ত মনে ঘুমাতাম। পরবর্তীতে আমি আল্লাহর রহমতে একটি সুন্দর বাড়ি কিনলাম, আমি ভালো ভালো খেতাম, বিভিন্ন রকমের পোশাক পরতাম এবং সাধারণভাবে জীবন এক সমৃদ্ধ অবস্থার দিকে মোড় নিল। কিন্তু, এসব সত্ত্বেও আমি সেরূপ শান্তি অনুভব করিনি যেমনটি আমি তখন অনুভব করতাম। বর্তমানে জটিল জীবনের সাথে জটিল সমস্যা যুক্ত রয়েছে। সুতরাং একথা মনে করবেন না যে অল্প সম্পদ থাকাই আপনার দুঃখ ও দুশ্চিন্তার কারণ, কেননা, একথা সত্য নয়। যেসব লোকের শুধুমাত্র জীবনের মামুলি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আছে তাদের অধিকাংশেরই অধিকাংশ ধনীদের তুলনায় অধিকতর সুস্থ বিবেক ও অধিকতর শান্তিপূর্ণ অস্তিত্ব আছে।