পাখির জগতের মধ্যে থেকে এক বিখ্যাত হুদূহুদ পাখি এর প্রভুকে চিনত। আল্লাহ সুলাঈমান (আঃ) সম্বন্ধে বলেনঃ “তিনি পাখিদেরকে পরিদর্শন করে বললেন, “কি ব্যাপার! আমি হুদূহুদকে দেখছি না যে? না কি সে অনুপস্থিত? অবশ্যই অবশ্যই আমি তাকে ভীষণ শাস্তি দিব অথবা অতি অবশ্যই আমি ওকে জবাই করে দিব যদি না সে আমার নিকট তার অনুপস্থিতির স্পষ্ট যুক্তি পেশ করতে পারে।” কিন্তু ওটা দীর্ঘক্ষণ সেখানে থাকল না এবং আসার পর বলল, “আমি এমন জিনিসের জ্ঞান অর্জন করেছি যা আপনি জানেন না এবং আমি সাবা থেকে সত্য সংবাদ নিয়ে আপনার নিকট এসেছি।
আমি এমন এক মহিলাকে দেখতে পেলাম যিনি তাদেরকে শাসন করছেন এবং তাকে সম্ভাব্য সবকিছু দেয়া হয়েছে আর তার আছে এক বিশাল সিংহাসন। আমি তাকে ও তার জাতিকে আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করতে দেখলাম। কারণ, শয়তান তাদের নিকট তাদের আমলসমূহকে সুশোভিত করে দিয়েছে, এভাবে সে (শয়তান) তাদেরকে সঠিক পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছে, তাই তারা সঠিক পথ পাচ্ছে না। অর্থাৎ তারা সে আল্লাহকে সিজদা করছে না যিনি [এ অংশের আরেকটি জোরালো অর্থ হলো শয়তান তাদেরকে সঠিক পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছে এজন্য যে যাতে তারা সে আল্লাহ্কে সিজদা না করে যিনি] আসমানসমূহ ও জমীনে যা কিছু লুকায়িত আছে তা বের করেন এবং যা তোমরা গোপন রাখ আর যা তোমরা প্রকাশ কর তিনি তা জানেন। আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই, তিনি মহান আরশের অধিপতি।”
সুলাঈমান (আঃ) বলল, “আমি শীঘ্রই দেখব যে তুমি কি সত্য বলেছ নাকি তুমি মিথ্যাবাদী, আমার এই চিঠি নিয়ে গিয়ে তাদের নিকট (নিক্ষেপ করে) দাও, তারপর সরে গিয়ে (দূর থেকে গোপনে) লক্ষ্য কর তারা কী প্রতিক্রিয়া করে।” (২৭-সূরা নামলঃ আয়াত-২০-২৮)
হুদূহুদ (আদেশ অনুযায়ী) চলে গেল আর পরবর্তীতে সাবার রাণী ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কারণ এই ছিল যে, হুদূহুদ তার প্রভুকে চিনত। কিছু আলেম বলেছেন যে, “আজব ব্যাপার! ফেরাউনের চেয়েও হুদূহুদ বেশি বুদ্ধিমান ছিল, অবস্থা যখন ভালো ছিল ফেরাউন তখন কুফুরী করেছিল; এ কারণেই শেষ মুহুর্তের ঈমান তাকে সাহায্য করেনি। পক্ষান্তরে সুসময়ে হুদূহুদ এর প্রভুর প্রতি ঈমান রেখেছিল আর সে ঈমান তাকে তখন উপকার করেছিল যখন ব্যাপারটি জটিল ও কঠিন হয়ে গিয়েছিল।”
হুদহুদ বলেছিল- (শয়তান তাদেরকে সঠিক পথ থেকে ফিরিয়ে রেখেছিল এই আশংকায় যে,) তারা যেন সিজদা না করে আল্লাহকে যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর গোপন বস্তুকে প্রকাশ করেন, যিনি জানেন, যা তোমরা গোপন কর এবং যা তোমরা ব্যক্ত কর। (২৭-সূরা আন নামলঃ আয়াত-২৫)
ফেয়াউন বলেছিল, “আমি ছাড়া তোমাদের কোন ইলাহ আছে বলে আমার জানা নেই।” (২৮-সূরা আল কাসাসঃ আয়াত-৩৮)
যে নাকি হুদূহুদের চেয়েও কম বুদ্ধিমান এবং একটি পিপড়ার চেয়েও কম বুদ্ধি রাখে সে সত্যিই হতভাগা।
“তাদের অন্তর আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা বুঝে না, তাদের চোখ আছে, কিন্তু তা দ্বারা তারা দেখে না এবং তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে শোনে না।” (৭-সূরা আল আ'রাফঃ আয়াত-১৭৯)
মৌমাছির জগত তো বিস্ময়ে ভরা। এতে আল্লাহর যত্নের কথা আমাদের মনে পড়ে। ছোট মৌমাছিটি নিজের বাসা ছেড়ে আহার সন্ধানের উদ্দশ্যে বের হয়ে পড়ে। এটা ভালো, বিশুদ্ধ ও পবিত্র ফুলের উপর বসে মধু চুষে বের করে। এরপর এটা এমন এক তরল পদার্থ নিয়ে ফিরে আসে যা মানুষের জন্য ঔষুধের যোগান দেয়। আর এটা সর্বদাই নিজের বাসায় ফিরে আসে, কখনও পথ হারায় না।
“আর তোমার প্রভু মৌমাছির অন্তরে ইঙ্গিতে বলেছেন যে, ‘পাহাড়ে, গাছে আর মানুষেরা যে ঘর বানায় তাতে বাসা বানাও। তারপর সব ধরনের ফল-ফসলের ফুল থেকে মধু খাও, অতপর তোমার প্রতিপালকের সহজ পথ অনুসরণ কর। ওদের পেট থেকে নানা রংয়ের (মধুর) পানিয় বের হয় যাতে রয়েছে মানুষের জন্য শিফা বা রোগমুক্তি। নিশ্চয় চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।” (১৬-সূরা আন নাহলঃ আয়াত-৬৮-৬৯)
আপনি যখন এসব ঘটনা পড়েন তখন আপনার বুঝা উচিত যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে গোপন যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণ আছে এবং আপনার সকল প্রয়োজনের জন্য একমাত্র তার নিকটেই আপনার আবেদন ও প্রার্থনা করা উচিত। আপনার বুঝা উচিত যে, এ বিশ্ব জগতের অন্য সবাই দুর্বল ও অসহায়, তাদেরও দরকার আল্লাহর ইবাদত করা, তার নিকট রিযিক চাওয়া, স্বাস্থ্য চাওয়া এবং সুখ চাওয়া, কেননা, তিনিই সবকিছুর মালিক।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَنتُمُ الْفُقَرَاءُ إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ
“হে মানবসম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর নিকট মুখাপেক্ষী (অভাবী), কিন্তু আল্লাহ অমুখাপেক্ষী (সর্বপ্রকার অভাব ও প্রয়োজন থেকে মুক্ত), প্রশংসনীয়।” (৩৫-সূরা ফাতিরঃ আয়াত-১৫)
আল্লাহর প্রতি আপনার অবশ্যই অটল ঈমান (বিশ্বাস) থাকতে হবে এবং আপনার জানা উচিত যে, আপনার সকল আবেদন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা আল্লাহর অভিমুখী হতে হবে- দুর্বল অসহায় মানুষের অভিমুখী নয়। তখন আপনি সত্যি সত্যিই আপনার প্রতিপালকের অনুগ্রহরাজিকে অনুধাবন করতে পারবেন তখন আপনি চিরঞ্জীবের নিকট ক্ষণস্থায়ী জীবের প্রয়োজন, সর্বাপেক্ষা ধনীর নিকট গরীবের নির্ভরতার এবং সর্বশক্তিমানের নিকট দুর্বলের প্রার্থীত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তাকে অনুভব করতে পারবেন। সত্যিকার ক্ষমতা, সম্পদ এবং চিরস্থায়িত্ব একমাত্র আল্লাহরই।
আপনি যদি এসব কিছু বোঝেন তবে অবশ্যই আপনাকে আপনার জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে এবং একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। আপনি যদি তার নিকট ক্ষমা চান তবে তিনি আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন। যদি আপনি তার নিকট কিছু প্রার্থনা করেন তবে তিনি আপনাকে দিবেন। আপনি তার নিকট সাহায্য কামনা করেন তবে তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। আপনি যদি তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকেন (অর্থাৎ আপনি যদি তার শুকরিয়া আদায় করেন) তবে তিনি আপনার উপর তার অনুগ্রহরাজি বৃদ্ধি করে দিবেন।