আলী ইবনুল মাইমূনিল আব্বাসী নিজে একজন শাসক ও একজন খলিফার পুত্র ছিলেন। তিনি এক বিশাল প্রাসাদে ধনাঢ্য জীবন-যাপন করতেন। পৃথিবীর যা কিছুই তিনি পেতে চাইতেন তাই তার জন্য সহজপ্রাপ্য ছিল।
একদিন প্রাসাদের এক বারান্দা দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে মাঠে একলোক কঠোর পরিশ্রম করছে। আলী পরপর কয়েক দিন তার প্রতি অধিক থেকে অধিতর মনোযোগ দিলেন এবং লক্ষ্য করলেন যে সে সারাটা সকাল কাজ করার পর একটু বিরতি দেয় ও তখন অজু করে দুরাকাত সালাত আদায় করে, কেবলমাত্র সন্ধ্যা হলেই সে তার কাজ ছাড়ে ও বাড়িতে তার পরিবার পরিজনের কাছে যায়। তার সম্বন্ধে আরো কিছু জানার জন্য আলী একদিন তাকে দাওয়াত করলেন ও তাকে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি শীঘ্রই জেনে নিলেন যে কাজের লোকটির একজন স্ত্রী, দু’জন বোন ও একজন মা আছেন। এবং এদের সকলকেই তার দেখা শুনা করতে হয়। আর তাদের জন্যই তাকে এতটা অধ্যবসায়ের সাথে কাজ করতে হয়।
তিনি (সে কর্মচারীটি) সারাদিন রোযা রাখতেন ও সন্ধ্যা হলে দিনের উপার্জিত অর্থ দ্বারা (খাদ্য ক্রয় করে) রোযা ভাঙতেন। আলী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার কি কোন অভিযোগ আছে?” তিনি উত্তর দিলেন, “না, সকল প্রশংসা সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।”
এই সামান্য কর্মচারীর কথায় আলী এতটাই অভিভূত হয়ে পড়লেন যে, তিনি রাজপ্রাসাদ ও রাজপদ ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি দিলেন। কয়েক বছর পরে তাকে খোরাসানের নিকটবর্তী অঞ্চলে মৃত পাওয়া গিয়েছিল। তিনি কাঠমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেছিলেন এবং তার নতুন জীবনে তিনি এমন সুখ পেয়েছিলেন যা তার আগের জীবনে তার নিকট সম্পূর্ণ আজানা ছিল।
“পক্ষান্তরে যারা সৎপথে চলে আল্লাহ তাদের সৎপথে চলার ক্ষমতা আরো বাড়িয়ে দেন এবং তাদেরকে তাদের (প্রাপ্য) তাকওয়া দান করেন।” (৪৭-সূরা মুহাম্মদ বা কেতালঃ আয়াত-১৭)
এ ঘটনা আমাকে আসহাবে কাহাফের ঘটনা মনে করিয়ে দেয়। তারা এক রাজার নিকট তার রাজপ্রাসাদে থাকত। তবুও তারা নিজেদেরকে সংকীর্ণ। দ্বিধাগ্রস্ত ও সমস্যাগ্রস্ত মনে করত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধনাঢ্য জীবনে কুফুরী ও অপচয় প্রাধান্য পায়। তাই তারা সে স্থান ত্যাগ করে চলে গেল। তাদের একজন বলেছিলেনঃ “অতএব তোমরা গুহায় আশ্রয়গ্রহণ কর, তোমাদের প্রভু তোমাদের জন্য তার দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের কাজকে কার্যকর করবার বন্ধোবস্ত করবেন। (অর্থাৎ তিনি তোমাদের প্রয়োজনীয় খাবার, বাসস্থান ইত্যাদি তোমাদেরকে দিবেন।) (১৮-সূরা আল কাহাফঃ আয়াত-১৬)