মাহমুদ ইবনে মুহাম্মদ মাদানি নামক এক অন্ধ ব্যক্তির সাক্ষাকার আরবি দৈনিক পত্রিকা ‘উকাযে’ প্রকাশিত হয়েছিল। তিনি অন্যদের চোখের সাহায্যে আরবি সাহিত্যের পুস্তকাবলি পাঠ করেছেন। অন্যেরা যখন তাকে ইতিহাসের বহু-পুস্তক ও শ্রেষ্ঠ সাহিত্য কর্মের ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহ পড়ে শুনাত তখন সে তা মনোযোগ সহকারে শুনত। তিনি তার কোনো বন্ধুকে দিয়ে ভোররাত্রি তিনটা পর্যন্ত বই পড়িয়ে নিতেন। বর্তমানে তাকে সাহিত্য ও ইতিহাসের উৎস পুস্তক মনে করা হয়।
‘আশশারকুল আওসাত’ নামক পত্রিকার প্রবন্ধকার মুস্তফা আমীন লিখেছেন- “অত্যাচারী ও অন্যায়কারীদের সাথে মাত্র পাঁচ মিনিট ধৈর্য ধরুন। অল্প সময় পরেই চাবুক পড়ে যাবে। শিকল ভেঙে যাবে, বন্দী মুক্তি-পাবে এবং মেঘ অদৃশ্য হয়ে যাবে। তাহলে আপনার দায়িত্ব হলো শুধু ধৈর্য ধরা ও অপেক্ষা করা।”
একজন আরব কবি লিখেছেন-
ولرُبٌّ نازلةٍ يضيق بها الفتى * ذرعاً وعند الله منها المخرجُ
কতই না বিপদাপদে যুবকের মন ভেঙ্গে যায়! অথচ আল্লাহর নিকট তা থেকে পরিত্রাণের পথ আছে।
আমি একবার রিয়াদে মুফতি আলবানিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলাম। শাসক গোষ্ঠী কীভাবে তাকে কঠোর পরিশ্রম সহকারে বিশ বছর বন্দী করে রেখেছিল সে কথা তিনি আমাকে বলেছেন। জেল খানায় থাকাকালে তার দণ্ডাদেশ পালনকালে তিনি প্রায়ই অত্যাচার, অন্ধকার ও ক্ষুধার শিকার হতেন। ধরা পড়ার ভয়ে তিনি গোসল খানায় এক কোনায় গোপনে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতেন। এসব সত্ত্বেও তিনি আল্লাহর নিকট পুরস্কারের আশা করতেন ও ধৈর্য ধরতেন- অবশেষে তিনি মুক্তি পেয়েছেন।
“অতএব ভাব আল্লাহর নেয়ামত ও দান নিয়ে বিজয়ীবেশে ফিরে এসেছিল। (৩-সূরা আলে ইমরান আয়াত-১৭৪)
সাতাশ (২৭) বছর কারাবরণ সহ্যকারী এক সময়কার দক্ষিণ আফ্রিকার রাজা নেলসন মেন্ডেলার কথা ভেবে দেখুন। তিনি তার জাতির জন্য স্বাধীনতা চেয়েছিলেন এবং তিনি জুলুম নির্যাতনের শিকল ভেঙে ফেলার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ছিলেন অবিচল ও দৃঢ় এবং তাকে প্রায় এমন মনে হতো যে, তিনি মৃত্যুকে খুঁজছেন। ফলে তিনি তার লক্ষ্যে পৌঁছেছেন ও তার পার্থিব মৰ্যদা লাভ করেছেন। মহান আল্লাহ্ বলেছেন-
نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ
“(দুনিয়াতে) আমি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান পুরাপুরি দিব।” (১১-সূরা হুদ: আয়াত-১৫)
“যদি তোমরা কষ্ট ভোগ করতে থাক তবে তারাওতো তোমাদের মতো কষ্ট ভোগ করছে; অথচ তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে যে জান্নাতের পুরস্কার আশা করতে পার তারা তো সে জান্নাতের পুরস্কার আশা করতে পারে না।” (৪-সূরা আন নিসা: আয়াত-১০৪)
إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهُ
“যদি তোমাদের কোনো আঘাত লেগে থাকে তবে তাদেরওতো অনুরূপ আঘাত লেগেছিল।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৪০)