(الصلاة خير من النوم)
“আছ্ছালাতু খাইরুম্ মিনান্ নাওম” কথাটি ফজরের প্রথম আযানে বলতে হবে। যেমনটি হাদীছে এসেছেঃ “সকালের প্রথম আযান প্রদান করলে বলবে,
(الصلاة خير من النوم)
“আছ্ছালাতু খাইরুম্ মিনান্ নাওম” ঘুম থেকে নামায উত্তম। এটা প্রথম আযানে দ্বিতীয় আযানে নয়।
কিন্তু জানা দরকার এ হাদীছে প্রথম আযান বলতে কি বুঝানো হয়েছে? এটা হচ্ছে সেই আযান যা নামাযের সময় হওয়ার পর প্রদান করা হয়। আর দ্বিতীয় আযান হচ্ছেঃ ইক্বামত। কেননা ইক্বামতকেও ‘আযান’ বলা হয়েছে। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ
“প্রত্যেক দু’আযানের মধ্যবর্তী সময়ে ছালাত রয়েছে।” এখানে দু’আযান বলতে ‘আযান ও ইক্বামত’ উদ্দেশ্য।
ছহীহ্ বুখারীতে বলা হয়েছেঃ আমীরুল মু’মেনীন ঊছমান বিন আফ্ফান (রাঃ) জুমআর জন্য তৃতীয় আযান বৃদ্ধি করেন।
অতএব, বেলালকে প্রথম আযানে যে “আছ্ছালাতু খাইরুম্ মিনান্ নাওম” বলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ফজর নামাযের আযান।
ফজর উদিত হওয়ার আগে যে আযানের কথা পাওয়া যায় তা ফজরের আযান নয়। লোকেরা শেষ রাতের ঐ আযানকে ফজর ছালাতের প্রথম আযানরূপে আখ্যা দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ফজর ছালাতের জন্য নয়। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِنَّ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ لِيُوقِظَ نَائِمَكُمْ وَلِيَرْجِعَ قَائِمَكُمْ
“বেলাল রাতে আযান দিয়ে থাকে। যাতে করে ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হয় এবং নফল ছালাত আদায়কারী ফিরে যায়।” অর্থাৎ- ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হয়ে সাহূর খাবে আর ক্বিয়ামুল লায়ল বা তাহাজ্জুদ ছালাত আদায়কারী নামায শেষ করে সাহূর খাবে।
তাছাড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মালেক বিন হুওয়াইরিছকে বলেছিলেনঃ
فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أَحَدُكُمْ
“নামাযের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের মধ্যে একজন যেন আযান দেয়।” আর আমরা জানি যে, ফজর উদিত না হলে ছালাতের সময় উপস্থিত হবে না। অতএব ফজর হওয়ার আগের আযান ফজর ছালাতের জন্য নয়।
অতএব সাধারণভাবে মানুষ ফজরের আযানে যে “আছ্ছালাতু খাইরুম্ মিনান্ নাওম” বলে থাকে সেটাই সঠিক ও বিশুদ্ধ।
কিন্তু যারা ধারণা করে থাকে যে, প্রথম আযান বলতে ফজরের পূর্বের আযান উদ্দেশ্য তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক নয়। তারা দলীল পেশ করে থাকে যে, প্রথম আযান বলতে সেই আযানই উদ্দেশ্য যা শেষ রাতে নফল বা তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য দেয়া হয় এবং সেজন্য বলা হয়ঃ “আছ্ছালাতু খাইরুম্ মিনান্ নাওম” অর্থাৎ- ঘুম থেকে নামায উত্তম। এখানে ‘উত্তম’ শব্দটি দ্বারা বুঝা যায় এ আহবানটি নফল নামাযের জন্যই।
আমরা জবাবে বলবঃ ‘উত্তম’ শব্দটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব কাজের জন্যও ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ্ বলেন,
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ، تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
“হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহ্র পথে নিজেদের ধন্তসম্পদ ও জীবন পন করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম; যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে।” (সূরা ছফ্ফঃ ১০, ১১) আল্লাহ্ জুমআর ছালাত সম্পর্কে বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
“হে ঈমানদারগণ! যখন জুমআর দিনে ছালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহ্র যিকিরের প্রতি দ্রুত অগ্রসর হও, বেচা-কেনা ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম।” (সূরা জুমআঃ ৯) অতএব ‘উত্তম’ শব্দটি যেমন ফরয বিষয়ে ব্যবহার হয় তেমনি মুস্তাহাব ও নফলের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়।