এরপর ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) বলেন: ‘‘কিয়ামাতের দিন মীযানে (তুলাদন্ডে) আমল ওযন করাও সত্য।’’
মীযান অর্থ দাড়িপাল্লা বা পরিমাপ যন্ত্র। আখিরাতের হিসাব, শাস্তি ও পুরস্কারের অন্যতম বিষয় কর্মের ওযন। কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ কিয়ামাতের দিন মানুষের কর্ম ওজন করবেন এবং ওজনের জন্য মীযান বা তুলাদন্ড স্থাপন করবেন। মুতাযিলা ও সমমনা অনেকে বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে অতীতে বলতেন যে, মানুষের বিশ্বাস, কথা বা কর্ম তো কোনো পদার্থ নয়, কাজেই তা কিভাবে ওযন করা হবে? তারা ওযন বিষয়ক আয়াত ও হাদীসকে বিভিন্ন রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করতেন। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআত এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের বক্তব্য বাহ্যিক ও সরল অর্থে গ্রহণ করে বলেছেন যে, কিয়ামাতের দিন মানুষের বিশ্বাস, কথা ও কর্ম সবই ওযন করা হবে। ওযনের প্রকৃতি মহান আল্লাহ জানেন। এ বিষয়ক কয়েকটি আয়াত দেখুন:
وَنَضَعُ الْمَوَازِينَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا وَكَفَى بِنَا حَاسِبِينَ
‘‘এবং কিয়ামাত-দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায় বিচারের তুলাদ-। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি তিল পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও আমি তা উপস্থিত করব; হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।’’[1]
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ فَمَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ بِمَا كَانُوا بِآَيَاتِنَا يَظْلِمُونَ
‘‘সে দিনের ওজনের বিষয়টি সত্য। যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই সফলকাম হবে; আর যাদের পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজদের ক্ষতি করেছে, যেহেতু তারা আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করত।’’[2]
فَأَمَّا مَنْ ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ وَأَمَّا مَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُمُّهُ هَاوِيَةٌ
ّ‘‘তখন যার পাল্লা ভারী হবে সে তো লাভ করবে সন্তোষজনক জীবন, কিন্তু যার পাল্লা হালকা হবে তার স্থান হবে ‘হাবিয়া’ (গভীর গর্ত)।’’[3]
হাদীস শরীফে এ বিষয়ে অগণিত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
[2] সূরা (৭) আ’রাফ: ৮-৯ আয়াত।
[3] সূরা (১০১) কারিয়া: ৬-১১ আয়াত।