কুরআনে বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিয়ামাতের দিন কোনো শাফা‘আত কবুল করা হবে না, আল্লাহ ছাড়া কেউ শাফা‘আতের অধিকার রাখবে না এবং আল্লাহ ছাড়া কোনো শাফা‘আতকারী থাকবে না। কয়েকটি আয়াত দেখুন:
وَاتَّقُوا يَوْمًا لا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلا هُمْ يُنْصَرُونَ
‘‘তোমরা সে দিনকে ভয় কর, যে দিন কেউ কারো কাজে আসবে না এবং কারো শাফাআত (সুপারিশ) স্বীকৃত হবে না এবং কারো নিকট হতে ক্ষতিপূরণ গৃহীত হবে না এবং তারা কোন প্রকার সাহায্য পাবে না।’’[1]
وَاتَّقُوا يَوْمًا لا تَجْزِي نَفْسٌ عَنْ نَفْسٍ شَيْئًا وَلا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلا تَنْفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَلا هُمْ يُنْصَرُونَ
‘‘তোমরা সে দিনকে ভয় কর যে দিন কেউ কারো উপকার করবে না এবং কারো নিকট হতে কোন ক্ষতিপূরণ গৃহীত হবে না এবং কোন শাফাআত কারো উপকারে লাগবে না এবং তারা কোন সাহায্যও পাবে না।’’[2]
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا أَنْفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لا بَيْعٌ فِيهِ وَلا خُلَّةٌ وَلا شَفَاعَةٌ
‘‘হে মু’মিনগণ, আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে তোমরা ব্যয় কর সে দিন আসার পূর্বে- যে দিন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব এবং শাফাআত থাকবে না।’’[3]
أَأَتَّخِذُ مِنْ دُونِهِ آَلِهَةً إِنْ يُرِدْنِ الرَّحْمَنُ بِضُرٍّ لا تُغْنِ عَنِّي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَلا يُنْقِذُونِ
‘‘আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্য ইলাহ গ্রহণ করব? দয়াময় আল্লাহ আমার অমঙ্গল চাইলে তাদের শাফাআত-সুপারিশ আমার কোন কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে উদ্ধার করতে পারবে না।’’[4]
وَأَنْذِرْ بِهِ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَنْ يُحْشَرُوا إِلَى رَبِّهِمْ لَيْسَ لَهُمْ مِنْ دُونِهِ وَلِيٌّ وَلا شَفِيعٌ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
‘‘তুমি এ দ্বারা তাদেরকে সতর্ক কর যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের প্রভুর নিকট সমবেত করা হবে এমন অবস্থায় যে, তিনি ব্যতীত তাদের কোনো অভিভাবক থাকবে না এবং কোনো শাফাআতকারীও থাকবে না; হয়ত তারা সাবধান হবে।’’[5]
وَذَكِّرْ بِهِ أَنْ تُبْسَلَ نَفْسٌ بِمَا كَسَبَتْ لَيْسَ لَهَا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلِيٌّ وَلا شَفِيعٌ
‘‘এ দ্বারা তাদেরকে উপদেশ দাও, যাতে কেউ নিজ কৃত কর্মের জন্য ধ্বংস না হয়, যখন আল্লাহ ব্যতীত তার কোনো অভিভাবক থাকবে না এবং কোনো সুপারিশকারীও থাকবে না।’’[6]
مَا لَكُمْ مِنْ دُونِهِ مِنْ وَلِيٍّ وَلا شَفِيعٍ أَفَلا تَتَذَكَّرُونَ
‘‘তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই এবং সুপারিশকারীও নেই; তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না।’’[7]
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لا يَضُرُّهُمْ وَلا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلا فِي الأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ
‘‘তারা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত করে তারা তাদের ক্ষতিও করে না উপকারও করে না। তারা বলে এরা আল্লাহর কাছে আমাদের শাফাআতকারী। বল, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশম-লী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান পবিত্র এবং তাদের শির্ক থেকে তিনি অতি ঊর্ধ্বে।’’[8]
قُلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
‘‘বল, সকল সুপারিশ আল্লাহরই, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই; অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তন করবে।’’[9]
এ সকল আয়াতে বাহ্যত শাফা‘আত অস্বীকার করা হয়েছে। এ সকল আয়াত থেকে মু’তাযিলা ও অন্যান্য ফিরকা দাবি করে যে, কিয়ামাতের দিন কারো শাফা‘আতে কোনো পাপীর ক্ষমালাভের ধারণা বাতিল ও ভিত্তিহীন।
বস্ত্তত এ সকল আয়াতে মূলত শাফা‘আত বিষয়ে মুশরিকদের বিশ্বাস খন্ডন করা হয়েছে। আমরা ইতোপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, ওহীর জ্ঞানের সাথে কিছু কল্পনা যোগ করে কাফিরগণ বিশ্বাস করত যে, আল্লাহর ফিরিশতাগণ, নবীগণ বা প্রিয়পাত্রগণ শাফা‘আতের ক্ষমতা ও অধিকার সংরক্ষণ করেন। মহান আল্লাহ তাদেরকে এ ধরনের ক্ষমতা ও অধিকার দিয়ে দিয়েছেন। তারা তাদের ইচ্ছামত যাকে ইচ্ছা সুপারিশ করে মুক্তি দিতে পারবেন। মহান আল্লাহ তাদের এ ভ্রান্ত বিশ্বাস খন্ডন করে জানিয়েছেন যে, শাফা‘আতের মালিকানা, অধিকার ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর।
অন্যান্য আয়াতে শাফা‘আতের স্বীকৃতি উল্লেখ করা হয়েছে। যিনি শাফা‘আত করবেন তিনি যদি শাফা‘আত করার জন্য মহান আল্লার অনুমতি গ্রহণ করেন এবং যার জন্য শাফা‘আত করবেন তার প্রতি যদি মহান আল্লহ সন্তুষ্ট থাকেন তবে সেক্ষেত্রে শাফা‘আত করার সুযোগ আল্লাহ প্রদান করবেন। যার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট নন তার জন্য কেউই শাফা‘আত করবে না। সর্বাবস্থায় শাফা‘আত গ্রহণ করা বা না করা মহান আল্লাহর ইচ্ছা। এ অর্থের কয়েকটি আয়াত দেখুন:
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلا بِإِذْنِهِ
‘‘কে সে যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করবে?’’[10]
يُدَبِّرُ الأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ
‘‘তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর অনুমতি লাভ না করে সুপারিশ করার কেউ নেই।’’[11]
لا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلا مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا
‘‘শাফাআতের মালিকানা তাদের কারো নেই। তবে ব্যতিক্রম সে ব্যক্তি যে দয়াময়ের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে।’’[12]
يَوْمَئِذٍ لا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلا
‘‘দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত কারো সুপারিশ সে দিন কোন কাজে আসবে না।’’[13]
وَلا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إِلا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ
‘‘যাকে অনুমতি দেয়া হয় সে ব্যতীত আল্লাহর নিকট কারো সুপারিশ কার্যকর হবে না।’’[14]
আমরা দেখেছি যে, কাফিরগণ ফিরিশতাগণের শাফাআত বিষয়ক বক্তব্য অপব্যাখ্যা করে ফিরিশতাগণের শাফাআত লাভের আশায় তাঁদের ইবাদত করত। কুরআনে তাদের এ বিভ্রান্তি অপনোদন করা হয়েছে। একস্থানে আল্লাহ বলেন:
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ لا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُمْ بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلا يَشْفَعُونَ إِلا لِمَنِ ارْتَضَى وَهُمْ مِنْ خَشْيَتِهِ مُشْفِقُونَ.
‘‘তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তিনি পবিত্র, মহান! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা আগে বেড়ে কথা বলে না; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে থাকে। তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত। তিনি যাদের প্রতি সন্তুষ্ট তাদের ছাড়া আর কারো জন্য তারা সুপারিশ করে না এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত।’’[15]
আল্লাহ ফিরিশতাদের বা অন্যান্য সম্মানিত সৃষ্টির ‘শাফা‘আতের’ সুযোগ অস্বীকার করেন নি, কাফিরদের ‘বিকৃতি’ খন্ডন করেছেন। কাফিরগণ আল্লাহর সাথে ফিরিশতা বা প্রিয় বান্দাগণের সম্পর্ককে পৃথিবীর রাজাবাদশার সাথে আমলা-চামচাদের সম্পর্কের মত মনে করেছে। অন্যায়কারী ব্যক্তি রাজার অজ্ঞাতে তার কোনো প্রিয়পাত্রকে তোয়াজ করে সুপারিশ আদায় করে নিতে পারে। আর এরূপ সুপারিশে শাসক বা রাজা প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন। আর এক্ষেত্রে সুপারিশ প্রার্থী উক্ত ‘আমলা’-কে যে কোনো প্রকারে ভক্তি বা তোয়াজ করে সুপারিশ আদায়ের চেষ্টা করেন। উক্ত রাজাকে যেমন ভক্তি তোয়াজ করেন, আমলাকেও তদ্রূপ বা তার চেয়ে বেশি করলেও অসুবিধা নেই।
মহান আল্লাহ তাদের বিভ্রান্তির স্বরূপ তুলে ধরেছেন। ফিরিশতাগণ বা অন্যান্য ‘সম্মানিত বান্দাগণ’ ‘আল্লাহর বান্দা’। তাঁরা ‘আল্লাহর সন্তান’ নন। তাঁদের কোনো ঐশ্বরিক ক্ষমতা নেই বা ‘ইবাদত (চূড়ান্ত ভক্তি) লাভের অধিকার নেই। ফিরিশতাগণ বা আল্লাহর অন্যান্য প্রিয় বান্দগণের সুপারিশ কখনোই জাগতিক রাজা-বাদশাহগণের কাছে আমলাদের সুপারিশের মত নয়। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। ফিরিশতাগণ বা নেক বান্দাগণ সদা সর্বদা তাঁরই ভয়ে ভীত। তাঁরা শুধু আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্যই আল্লাহর কাছে শাফাআত করেন। যাদেরকে আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদের জন্য তাঁরা আল্লাহর কাছে শাফাআত করেন না। সর্বোপরি কার জন্য কার সুপারিশ গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়ে মহান আল্লাহই সবচেয়ে বেশি ও ভাল জানেন।
এ বিষয়ে অন্যত্র আল্লাহ বলেন:
وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلا مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى
‘‘আকাশে কত মালাক (ফিরিশতা) রয়েছে তাদের কোনো সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না, যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টি অনুসারে কাউকে অনুমতি দেন।’’[16]
এভাবে কুরআন ‘মালাক’গণের শাফা‘আত অস্বীকার করছে না। তবে তাঁদের শাফা‘আতের মালিকানা বা ক্ষমতার ধারণা অস্বীকার করছে। শাফা‘আতের মালিকানা ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা যখন অনুমতি প্রদান করবেন সে তখন কেবলমাত্র যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট রয়েছেন তাদেরই জন্য সুপারিশ করবেন।
উপরের আয়াতগুলি থেকে আমরা নিম্নের বিষয়গুলো বুঝতে পারি:
(১) শাফা‘আতের মালিকানা একমাত্র আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো শাফা‘আতের কোনো মালিকানা, ক্ষমতা বা অধিকার নেই।
(২) আল্লাহ অনুমতি দিলে কেউ শাফ‘আত করতে পারবেন।
(৩) যার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট শুধু তাকেই অনুমতি প্রদান করবেন।
(৪) আল্লাহর অনুমতিক্রমে ফিরিশতাগণ সুপারিশ করবেন বলে কুরআনে স্পষ্টত বলা হয়েছে। এছাড়া অন্য কারা তাঁর অনুমতিক্রমে সুপারিশ করতে পারবেন তা স্পষ্টত উল্লেখ করা হয় নি। হাদীস শরীফে এ বিষয়ক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
(৫) যে ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করা হবে তার জন্য আল্লাহর অনুমোদন পূর্বশর্ত।
(৬) যে ব্যক্তির প্রতি স্বয়ং আল্লাহ সন্তুষ্ট রয়েছেন সে ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো জন্য কেউ সুপারিশ করবেন না।
বিভিন্ন হাদীসে বলা হয়েছে যে, কিয়ামাতের দিন নবীগণ ও অন্যান্য মানুষ এবং মানুষের বিভিন্ন আমল শাফা‘আত করবে এবং তাদের শাফা‘আত কবুল করা হবে। এ সকল হাদীসের বিস্তারিত আলোচনার জন্য বৃহৎ পরিসরের প্রয়োজন। হাদীসে বর্ণিত শাফা‘আতের পর্যায়গুলো নিম্নরূপে ভাগ করা যায়:
(১) শাফা‘আতে উযমা (الشفاعة العظمى) বা মহোত্তম শাফা‘আত। এদ্বারা বিচার শুরুর জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করা বুঝানো হয়। বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, কিয়ামাতের দিন মানুষ বিভিন্ন নবী-রাসূলের নিকট গমন করে ব্যর্থ হয়ে সর্বশেষ মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নিকট গমন করবেন। তিনি সমগ্র মানব জাতির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শাফা‘আত করবেন, মানুষদের বিচার শেষ করে দেওয়ার জন্য।
(২) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শাফা‘আতে মহান আল্লাহ তাঁর উম্মাতের অনেক গোনাহগারকে ক্ষমা করবেন।
(৩) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শাফা‘আতে অনেক পাপী মুসলিম জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করবেন।
(৪) উম্মাতে মুহাম্মাদীর অনেক নেককার মানুষ শাফা‘আত করবেন।
(৫) সন্তানগণ তাদের পিতামাতাদের জন্য শাফা‘আত করবে।
(৬) কুরআন তার পাঠক ও অনুসারীদের জন্য শাফা‘আত করবে।
(৭) সিয়াম ও অন্যান্য ইবাদত শাফা‘আত করবে।
কেউ যদি আল্লাহ থেকে বিমুখ থাকে, ঈমান বিশুদ্ধ না করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা না করে কিন্তু কোনো ফিরিশতা, নবী বা ওলীকে বিশেষভাবে ভালবাসে, তাঁকে ভক্তি-সম্মান করে বা সর্বদা তাঁর জন্য দু‘আ করে এবং আশা করে যে, উক্ত ফিরিশতা, নবী বা ওলী তাকে সুপারিশ করে আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে রক্ষা করবেন তবে তা ভিত্তিহীন দুরাশা ও শিরকের রাজপথ ছাড়া কিছুই নয়।
পক্ষান্তরে কেউ যদি ঈমান ও তাওহীদ বিশুদ্ধ করেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন, কিন্তু মানবীয় দুর্বলতায় বা শয়তানের প্ররোচনায় কবীরা গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়েন তবে মহান আল্লাহ তাঁর আন্তরিকতা ও চেষ্টার প্রতি সন্তুষ্ট হলে তাঁর কোনো সম্মানিত বান্দাকে তার জন্য শাফা‘আত করার অনুমতি প্রদান করবেন। মূল বিষয় আল্লাহর সন্তুষ্টি। মহান আল্লাহ কোনো পাপী বান্দার তাওহীদ ও ঈমানে সন্তুষ্ট হলে তিনি নিজেই তাঁকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। অথবা তাঁর কোনো সম্মানিত বান্দাকে সম্মান করে তার জন্য শাফা‘আতের অনুমতি দিতে পারেন।
মু’তাযিলাগণ শাফা‘আতে উযমা স্বীকার করে; কারণ তা তাদের মূলনীতির পরিপন্থী নয়। পাপী মুমিনের জন্য শাফা‘আত বিষয়ক অন্যান্য আয়াত ও হাদীসকে তারা শাফা‘আতে উযমা বলে ব্যাখ্যা করে। আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীগণ সহীহ হাদীসে প্রমাণিত সকল প্রকারের শাফা‘আতেই বিশ্বাস করেন। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, শাফ‘আতের মালিকানা একমাত্র মহান আল্লাহরই। তিনি যার উপর সন্তুষ্ট হবেন তার জন্য তিনি দয়া করে শাফা‘আতের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি যার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন তার জন্য তাঁর অনুমতিপ্রাপ্ত কেউ শাফা‘আত করলে তিনি ইচ্ছা করলে তা কবুল করে গোনাহগার মুমিনকে ক্ষমা করতে পারেন।
[2] সূরা (২) বাকারা: ১২৩ আয়াত।
[3] সূরা (২) বাকারা: ২৫৪ আয়াত।
[4] সূরা (৩৬) ইয়াসীন: ২৩ আয়াত।
[5] সূরা (৬) আন‘আম: ৫১ আয়াত।
[6] সূরা (৬) আন‘আম: ৭০ আয়াত।
[7] সূরা (৩২) সাজদা: ৪০ আয়াত।
[8] সূরা (১০) ইউনুস: ১৮ আয়াত।
[9] সূরা (৩৯) যুমার: ৪৪ আয়াত।
[10] সূরা (২) বাকারা: ২৫৫ আয়াত।
[11] সূরা (১০) ইউনুস: ৩ আয়াত।
[12] সূরা (১৯) মারইয়াম: ৮৭ আয়াত।
[13] সূরা (২০) তাহা: ১০৯ আয়াত।
[14] সূরা (৩৪) সাবা: ২৩ আয়াত।
[15] সূরা (২১) আম্বিয়া: ২৬-২৯ আয়াত।
[16] সূরা (৫৩) নাজম: ২৬ আয়াত।