আল-ফিকহুল আকবর আল-ফিকহুল আকবারের বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)

বিশ্ব পরিচালনায় বা সৃষ্টির কল্যাণ-অকল্যাণে আল্লাহ ছাড়া কারো কোনো অলৌকিক ক্ষমতা আছে, কেউ জাগতিক উপকরণ ছাড়া ইচ্ছা করলে কারো মঙ্গল-অমঙ্গল করতে পারেন বা আল্লাহ কাউকে এরূপ ক্ষমতা প্রদান করেছেন বলে বিশ্বাস রুবুবিয়্যাতের শিরক। আরবের কাফিররা এরূপ শিরকে নিপতিত হতো। আল্লাহ তাঁর ফিরিশতাগণকে বিভিন্ন দায়িত্ব প্রদান করেন, নবী-রাসূলগণ এবং নেককার বান্দগণকে ভালবাসেন, ইচ্ছা করলে তাঁদের দুআ কবুল করেন, তাঁদের মাধ্যমে কোনো অলৌকিক কর্ম সম্পাদন করেন, কিন্তু কখনোই তিনি কাউকে কোনো অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেন না। কিন্তু কাফিরগণ বিশ্বাস করত যে, ফিরিশতাগণ, নবীগণ ও অন্যান্য মাহবূব বান্দগণকে আল্লাহ এরূপ ক্ষমতা প্রদান করেন।

তারা বিশ্বাস করত যে আল্লাহই একমাত্র সর্বশক্তিমান প্রতিপালক এবং সকল ক্ষমতা তাঁরই। তবে তিনি করুণাবশত তাঁর কোনো কোনো বান্দাকে বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেন। তাঁরা আল্লাহর ‘‘ভান্ডার’’ বা ‘‘ধন’’ গ্রহণ করে তা বণ্টন করার ক্ষমতা পান। এ জন্যই তারা হজ্জের তালবিয়ায় বলত: ‘‘আপনার কোনো শরীক নেই, তবে আপনি নিজে যাকে আপনার শরীক বানিয়েছেন সে ছাড়া। এরূপ শরীকও আপনারই মালিকানাধীন, ... সে ও তার সকল কর্তৃত্ব ও রাজত্ব আপনারই অধীন...।’’

এ প্রসঙ্গে ‘আল-ফিকহুল আবসাত’ গ্রন্থে ইমাম আবূ মুতী বালখী বলেন:


قُلْتُ لأَبِيْ حَنِيْفَةَ أَخْبِرْنِيْ عَنِ الإِيْمَانِ قَالَ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَتَشْهَدَ بِمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبُهِ وَرُسُلِهِ وَجَنَّتِهِ وَنَارِهِ وَقِيَامَتِهِ وَخَيْرِهِ وَشَرِّهِ وَتَشْهَدَ أَنَّهُ لَمْ يُفَوِّضِ الأَعْمَالَ إِلَى أَحَدٍ.


‘‘আমি আবূ হানীফাকে বললাম: আমাকে ঈমানের পরিচয় জানান। তিনি বলেন: তুমি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। এবং তুমি সাক্ষ্য দেবে তাঁর ফিরিশতাগণের, এবং তাঁর গ্রন্থসমূহের, এবং তাঁর রাসূলগণের এবং তাঁর জান্নাতের, তাঁর জাহান্নামের, কিয়ামতের এবং তাঁর মঙ্গল-অমঙ্গলের। তুমি আরো সাক্ষ্য দেবে যে, তিন তাঁর কর্মকান্ডের দায়িত্ব কাউকে প্রদান করেন নি।’’[1]

[1] ইমাম আবূ হানীফা, আল-ফিকহুল আবসাত (আল-আলিম ওয়াল মুতাআলিস্নমসহ), পৃ. ৪৩