কোনো কোনো আলিম ও গবেষক দাবি করতেন যে, ইমাম আযম কোনো গ্রন্থ রচনা করেন নি। হিজরী ষষ্ঠ শতকে প্রসিদ্ধ শাফিয়ী ফকীহ ও দার্শনিক ইমাম ফাখরুদ্দীন রাযী (৫৪৪-৬০৬হি) তাঁর রচিত মানাকিবুশ-শাফিয়িয়্যা গ্রন্থে এ ধারণা ব্যক্ত করেছেন যে, ইমাম আবূ হানীফা (রাহ)-এর রচিত কোন গ্রন্থই বিদ্যমান নেই।[1] পক্ষান্তরে অন্যান্য অনেক আলিম তাঁর রচিত কয়েকটি গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, প্রাচীন যুগের অন্যান্য প্রসিদ্ধ আলিমগণের ন্যায় ইমাম আবূ হানীফা (রাহ)-এর নামেও অনেক জাল গল্প, কাহিনী, মত, বক্তব্য ও গ্রন্থ পরবর্তী যুগে প্রচারিত হয়েছে। বিশেষত ইমাম আবূ হানীফার পক্ষে ও বিপক্ষে বাড়াবাড়ি ও জালিয়াতির প্রবণতা ছিল খুবই বেশি, যার নমুনা আমরা দেখেছি। এক্ষেত্রে সত্য ও মিথ্যা যাচাইয়ের জন্য আলিমগণ কয়েকটি বিষয় বিচার করেছেন: (১) জীবনীকারদের বক্তব্য, (২) সনদ যাচাই ও (৩) গ্রন্থের বিষয় ও ভাষা বিচার করা।
কোনো মনীষী কোনো গ্রন্থ রচনা করেছেন কিনা সে বিষয়ে জানতে তাঁর সমসাময়িক বা নিকটবর্তী লেখকদের বক্তব্য দেখতে হয়। তাঁর সমসাময়িক বা কাছাকাছি যুগের গবেষক বা জীবনীকারগণ যদি তাঁর রচিত কোনো গ্রন্থের উল্লেখ করেন তবে জানা যায় যে, উক্ত লেখকের নামে উক্ত গ্রন্থটি তাঁর মৃত্যুর আগে বা পরেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল।
মুসলিম উম্মাহর অনন্য বৈশিষ্ট্য সনদ সংরক্ষণ। শুধু হাদীসের ক্ষেত্রেই নয়, লিখিত গ্রন্থগুলোর ক্ষেত্রেও তাঁরা সনদ সংরক্ষণ করেছেন। তাবিয়ীদের যুগ থেকে শুরু করে পরবর্তী শতশত বৎসর যাবৎ যত গ্রন্থ রচিত হয়েছে সকল গ্রন্থের পান্ডুলিপির শুরুতে পাঠক দেখবেন যে, গ্রন্থটির লেখক থেকে শুরু করে পান্ডুলিপির মালিক বা বর্ণনাকারী পর্যন্ত সনদ উক্ত পান্ডুলিপির উপর লেখা রয়েছে। এ সকল সনদ অধ্যয়ন করে খুব সহজেই গ্রন্থটি প্রকৃতই উক্ত আলিমের লেখা কিনা তা নিশ্চিত করা যায়।
যে গ্রন্থের পান্ডুলিপির কোনো নির্ভরযোগ্য সনদ নেই বা তার কোনো প্রাচীন পান্ডুলিপি নেই এবং পূর্ববর্তী লেখকগণ যে গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেন নি তা জাল বলে বুঝা যায়।