৪৮. গুনাহ্’র কারণে গুনাহ্গার নিজকেই ভুলে যায় যেমনিভাবে আল্লাহ্ তা‘আলাও তাকে ভুলে যান। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَلَا تَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوْا اللهَ فَأَنْسَاهُمْ أَنْفُسَهُمْ، أُوْلٰٓئِكَ هُمُ الْفَاسِقُوْنَ»
‘‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভুলে গিয়েছে। যার ফলে আল্লাহ্ তা‘আলা (শুধু তাদেরকেই ভুলে যান নি) বরং তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছেন। এরাই তো সত্যিকার পাপাচারী’’। (হাশ্র : ১৯)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«نَسُوْا اللهَ فَنَسِيَهُمْ»
‘‘তারা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভুলে গিয়েছে। সুতরাং তিনিও তাদেরকে ভুলে গিয়েছেন’’। (তাওবাহ্ : ৬৭)
আল্লাহ্ তা‘আলা কাউকে ভুলে গেলে তার কল্যাণ চান না যেমনিভাবে কেউ নিজকে ভুলে গেলে তার সুখ, শান্তি ও কল্যাণ সম্পর্কে সে আর ভাবে না। তার নিজের দোষ-ত্রুটিগুলো আর তার চোখে পড়ে না। যার দরুন সে তা সংশোধনও করতে চায় না। এমনকি তার রোগের কথাও সে ভুলে যায়। তাই সে রোগগুলোর চিকিৎসাও করতে চায় না। সুতারাং এর চাইতেও দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? তবুও এ জাতীয় মানুষের সংখ্যা আজ অনেক বেশি। তারা দীর্ঘ আখিরাতকে ক্ষণিকের দুনিয়ার পরিবর্তে বিক্রি করে দিয়েছে। সুতরাং তারা সদা সর্বদা ক্ষতি ও লোকসানেরই ভাগী। লাভের নয়।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«أُوْلَآئِكَ الَّذِيْنَ اشْتَرَوُا الْـحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ، فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ، وَلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ»
‘‘এরাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে ক্রয় করে নিয়েছে। সুতরাং তাদের আযাব আর কম করা হবে না এবং তাদেরকে কোন ধরনের সাহায্যও করা হবে না’’। (বাক্বারাহ্ : ৮৬)
আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:
«فَمَا رَبِحَتْ تِجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوْا مُهْتَدِيْنَ»
‘‘সুতরাং তাদের বাণিজ্য লাভজনক হয় নি এবং তারা এ ব্যাপারে সঠিক কোন দিক-নির্দেশনাও পায় নি’’। (বাক্বারাহ্ : ১৬)
প্রত্যেকেই নিজ জীবন নিয়ে ব্যবসা করে। তবে তাতে কেউ হয় সফলকাম। আর কেউ হয় ক্ষতিগ্রস্ত।
আবূ মা’লিক আশ্‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
كُلُّ النَّاسِ يَغْدُوْ، فَبَائِعٌ نَفْسَهُ، فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوْبِقُهَا.
‘‘প্রত্যেকেই নিজ জীবনকে কোন কিছুর বিনিময়ে বিক্রি করে। তাতে কেউ নিজ জীবনকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে নেয়। আর কেউ উহাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়’’। (মুসলিম ২২৩)
ঠিক এরই বিপরীতে বুদ্ধিমানরা আখিরাতকেই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তারা নিজের জান ও মালের পরিবর্তে জান্নাত খরিদ করেন। তারা এ দুনিয়ার জীবনটাকে ক্ষণস্থায়ী মনে করেন। তবে কিয়ামতের দিন সবার নিকটই এ কথার সত্যতা সুস্পষ্টরূপে উদ্ভাসিত হবে। দুনিয়ার জীবনটাকে সবার নিকট তখন খুব সামান্যই মনে হবে।
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ كَأَنْ لَّمْ يَلْبَثُوْا إِلاَّ سَاعَةً مِّنَ النَّهَارِ يَتَعَارَفُوْنَ بَيْنَهُمْ»
‘‘আর তুমি ওদেরকে সে দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দাও যে দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তাদেরকে একত্রিত করবেন (কিয়ামতের মাঠে) তখন তাদের এমন মনে হবে যে, তারা দুনিয়াতে একটি দিনের কিছু অংশই অবস্থান করেছে এবং তা ছিলো পরস্পর পরিচিত হওয়ার জন্যই’’। (ইউনুস্ : ৪৫)
তবে যারা উক্ত ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত তাদের জন্যও আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে ক্ষতি পূরণের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে এবং যারা নিজ জান ও মালের পরিবর্তে জান্নাত খরিদ করতে পারছেন না তাদের জন্যও আরেকটি সুব্যবস্থা তথা সুসংবাদ রয়েছে। যা নিম্নরূপ:
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:
«التَّآئِبُوْنَ الْعَابِدُوْنَ الْـحَامِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرَّاكِعُوْنَ السَّاجِدُوْنَ الَامِرُوْنَ بِالْـمَعْرُوْفِ وَالنَّاهُوْنَ عَنِ الْـمُنْكَرِ وَالْـحَافِظُوْنَ لِـحُدُوْدِ اللهِ، وَبَشِّرِ الْـمُؤْمِنِيْنَ»
‘‘তারা তাওবাকারী, ইবাদাতগুযার ও আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসাকারী, রোযাদার, রুকূ’ ও সিজদাহ্কারী, সৎ কাজের আদেশকর্তা ও অসৎ কাজ থেকে বাধা প্রদানকারী এবং আল্লাহ্ তা‘আলার বিধানসমূহের হিফাযতকারী। (হে নবী!) তুমি এ জাতীয় মু’মিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও’’। (তাওবাহ্ : ১১২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত পণ্য সংগ্রহের আরেকটি সংক্ষিপ্ত পন্থা বাতলিয়েছেন। আর তা হচ্ছে নিম্নরূপ:
সাহ্ল বিন্ সা’দ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ يَّضْمَنْ لِيْ مَا بَيْنَ لَـحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْـجَنَّةَ.
‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার দু’ চোয়ালের মধ্যভাগ তথা মুখ এবং দু’ পায়ের মধ্যভাগ তথা লজ্জাস্থান হিফাযতের দায়িত্ব নিবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নেবো’’। (বুখারী ৬৪৭৪)