যুদ্ধ লব্ধ বন্টনের পর হাওয়াযিন গোত্রের এক প্রতিনিধিদল ইসলাম গ্রহণান্তে আগমন করলেন। এ দলের সদস্য সংখ্যা ছিল চৌদ্দ জন। এ দলের নেতা ছিলেন যুহাইর বিন সুরাদ। নাবী কারীম (ﷺ)-এর দুধ চাচা আবূ বারকানও ছিলেন এ দলে। প্রতিনিধিদল আরয করলেন, ‘আপনি দয়া করে আটককৃতদের এবং তাদের অর্থ সম্পদাদি ফেরত দিয়ে দিন।’ তাঁদের কথাবার্তায় এমন ভাব প্রকাশ পেল যেন অন্তর গলে যাবে।[1]
কবিতার ভাষায় তা ছিল নিম্নরূপ:
فامنن علينا رسول اللهِ في كـرم ** فإنـك المرء نرجـوه وننتظر
امنن عَلٰى نسوة قد كنت ترضعها ** إذ فوك تملؤه من محضها الدرر
নাবী (ﷺ) বললেন,
(إِنَّ مَعِيْ مَنْ تَرَوْنَ، وَإِنَّ أَحَبُّ الْحَدِيْثِ إِلَىَّ أَصْدِقُهُ، فَأَبْنَاؤُكُمْ وَنِسَاؤُكُمْ أَحَبُّ إِلَيْكُمْ أَمْ أَمْوَالُكُمْ؟)
‘আমার সঙ্গে যে সকল লোকজন আছে তোমরা তো তাদের দেখতেই পাচ্ছ এবং আমি সত্য কথা অধিক ভালবাসি।’ সুতরাং তোমরা বল তোমাদের নিকট খুব প্রিয় বস্তু কোনটি? সন্তান সন্ততি না ধন-সম্পত্তি?’
তারা বলল যে, ‘আমাদের নিকট খানাদানী মর্যাদার তুল্য আর কোন কিছুই নেই।’
নাবী কারীম (ﷺ) বললেন,
(إِذَا صَلَّيْتُ الْغَدَاةَ ـ أَيْ صَلَاةَ الظُّهْرِ ـ فَقُوْمُوْا فَقُوْلُوْا: إِنَّا نَسْتَشْفِعُ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى الْمُؤْمِنِيْنَ، وَنَسْتَشْفِعُ بِالْمُؤْمِنِيْنَ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَّرُدَّ إِلْيِنَا سَبْيَنَا)
‘আচ্ছা আমি যখন যুহর সালাত শেষ করব তখন তোমরা উঠে দাঁড়িয়ে বলবে যে, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে মু’মিনদের জন্য এবং মু’মিনদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য সুপারিশকারী বানাচ্ছি। অতএব, আমাদের আটককৃতদের ফিরিয়ে দিন।’
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন সালাত সমাপ্ত করলেন তখন তারা তাই বলল, উত্তরে নাবী কারীম (ﷺ) বললেন, ‘এ অংশের সম্পর্কে যা আমার জন্য এবং বনু আব্দুল মুত্তালিবের জন্য আছে আমি যে সবই তোমাদের জন্য দিয়ে দিলাম এবং এখন আমি লোকজনদের নিকট তা জেনে নিচ্ছি। এর প্রেক্ষিতে আনসার ও মুহাজিরগণ দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আমাদের নিকট যা আছে তার সব রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য দিয়ে দিলাম। এরপর আকরা’ বিন হারিস বললেন, ‘কিন্তু ‘আমর ও বনু তামীম গোত্রের যা আছে তা আপনাকে দিলাম না।’ অতঃপর উয়ায়না বিন হিসন বললেন, ‘আমার এবং বনু ফাজারাদের নিকট যা রয়েছে তা আপনার জন্য নয়।’ আব্বাস বিন মেরদাস বললেন, ‘আমার এবং বনু সুলাইমদের যা কিছু আছে সে আপনার জন্য নয়। এর প্রেক্ষিতে বনু সুলাইম বললেন, ‘জী না, আমাদের সঙ্গে যা কিছু আছে তার সবই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য। সেহেতু আব্বাস বিন মিরদাস বললেন, ‘তোমরা আমাকে বেইজ্জত করে দিলে।’
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,
(إِنَّ هٰؤُلَاءِ الْقَوْمَ قَدْ جَاءُوْا مُسْلِمِيْنَ، وَقَدْ كُنْتُ اِسْتَأْنَيْتُ سَبْيَهُمْ، وَقَدْ خَيَّرُتُهْم فَلَمْ يَعْدِلُوْا بِالْأَبْنَاءِ وَالنِّسَاءِ شَيْئاً، فَمَنْ كَانَ عِنْدَهُ مِنْهُنَّ شَيْءٌ فَطَابَتْ نَفْسُهُ بِأَنْ يَّرُدَّهُ فَسَبْيِلُ ذٰلِكَ، وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَسْتَمْسَكَ بِحَقِّهِ فَلْيُرَدُّ عَلَيْهِمْ، وَلَهُ بِكُلِّ فَرِيْضَةٍ سِتُّ فَرَائِضَ مِنْ أَوَّلِ مَا يَفِيءُ اللهُ عَلَيْنَا)،
‘দেখ, এ সকল লোক ইসলাম গ্রহণের পর এসেছে এবং (এ উদ্দেশ্যেই) আমি তাদের আটককৃতদের বন্টনে বিলম্ব করেছিলাম। এখন আমি তাদেরকে অধিকার প্রদান করলাম। তবে তারা অন্য কিছুকে সন্তানাদির সমতুল্য মনে করে নি। অতএব, যার নিকট আটককৃত কোন কিছু রয়েছে এবং সন্তুষ্ট চিত্তে যদি সে তা ফেরত দেয় তাহলে সেটাই হবে সব চাইতে ভাল ব্যবস্থা। আর কেউ যদি নিজ অধিকার আটকিয়ে রাখতে চায় তবুও তা হবে তাদের আটককৃত। অতএব, তাদেরকে সে সব ফিরিয়ে দেবে। আগামীতে সর্বাগ্রে যে সরকারী সম্পদ অর্জিত হবে ওর মধ্য থেকে ফেরতদানকারীকে ইনশাআল্লাহ্ অবশ্যই একটির পরিবর্তে ছয়টি দেয়া হবে।’
লোকজনেরা বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য আমরা সব কিছুই সন্তুষ্ট চিত্তে ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত আছি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না যে, তোমাদের মধ্যে কে রাজী আছে এবং কে নেই, অতএব, তোমরা ফিরে যাও। তোমাদের প্রধানগণ তোমাদের ব্যাপারে আমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন। এরপর লোকজনেরা তাদের সন্তানাদি ফিরিয়ে দিলেন। শুধু উওয়ায়না বিন হিসন অবশিষ্ট রইলেন। তাঁর অংশে ছিল এক বৃদ্ধা মহিলা। তিনি প্রথমে তাঁকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করলেও পরে ফিরিয়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) প্রত্যেক বন্দীকে মুক্তিদানের সময় এক খানা করে কিবতী চাদর প্রদান করলেন।