১। ইমাম মালেক (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন যে, ব্যক্তি যাদু করে তার জন্য আল্লাহ তায়ালার এই বাণী প্রযোজ্যঃ
وَلَقَدْ عَلِمُوا لَمَنِ اشْتَرَاهُ مَا لَهُ فِي الْآخِرَةِ مِنْ خَلَاقٍ
অর্থঃ “নিশ্চয় তারা জানে যে, যা তারা ক্রয় করেছে আখেরাতে এর
জন্য কোন অংশ নেই।" (সূরা বাকারাঃ ১০২) অতঃপর বলেনঃ আমার অভিমত হল, যাদুকরকে হত্যা করা, যদি সে যাদু কর্ম করে থাকে।
২। ইবনে কুদামা (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ যাদুকরের শাস্তি হত্যা। আর এই অভিমত পোষণ করেছেন, উমর, উসমান বিন আফফান, ইবনে আমর বিন আব্দুল আযীয, আবু হানীফা এবং ইমাম মালেক।
৩। ইমাম কুরতুবী (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন, মুসলিম মনিষীদের মাঝে মুসলিম যাদুকর ও (অমুসলিম) যিম্মী যাদুকরের শাস্তির ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম মালেক (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন যে, যখন মুসলমান যাদুকর কুফুরি কালামের মাধ্যমে যাদু করে তবে তাকে হত্যা করা হবে। আর তার তাওবা ও গ্রহণীয় হবে না। আর না তাকে তাওবা করতে বলা হবে। কেননা এটা এমন বিষয় যার দ্বারা আল্লাহর নির্দেশকে লঙ্ঘন করা হয়। এজন্য আল্লাহ তায়ালা যাদুকে কুফুরি বলে আখ্যায়িত করেছেন।
وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّىٰ يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ
অর্থঃ “তারা যাকেই যাদু বিদ্যা শিখাতো তাকে বলে দিত যে তোমরা (যাদু শিখে) কুফুরি করো না, নিশ্চয়, আমরা তোমাদের জন্য পরীক্ষা।” (সূরা বাকারাঃ ১০২)
আর এই অভিমত পোষণ করেছেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আবু সাওর, ইসহাক এবং আবু হানীফা (রাহেমাহুমুল্লাহ)।
৪ । ইমাম ইবনে মুনযির বলেন যখন কোন ব্যক্তি স্বীকার করে যে, সে কুফুরি কালামা দিয়ে যাদু করেছে, তখন তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। যদি সে তাওবা না করে থাকে। এমনিভাবে কারো কুফুরীর যদি প্রমাণ ও বর্ণনা সাব্যস্ত হয়ে যায়, তবুও তাকে হত্যা করা ওয়াজিব। আর যদি তার কথা কুফুরি না হয় তবে তাকে হত্যা করা বৈধ হবে না। আর যদি যাদুকর তার যাদু দ্বারা কাউকে হত্যা করে তবে তাকেও হত্যা করা হবে আর যদি ভুলক্রমে হত্যা করে তবে তাতে দিয়াত দিতে হবে।
৫। হাফেজ ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ মনীষীগণ আল্লাহ তায়ালার নিম্নোল্লিখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণ করেছেন যাতে যাদুকর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
وَلَوْ أَنَّهُمْ آمَنُوا وَاتَّقَوْا
অর্থাৎ “যদি তারা ঈমান আনয়ন করত এবং আল্লাহকে ভয় করত।" সুতরাং এই আয়াত দ্বারা অনেকেই যাদুকরকে কাফের বলে মত পোষণ করেছেন। আবার অনেকেই অভিমত পোষণ করেছেন যে, সে কাফের তো নয় তবে তার শাস্তি শিরচ্ছেদ কেননা ইমাম শাফেয়ী (রাহেমাহুল্লাহ), আহমদ বিন হাম্বল (রাহেমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, তারা উভয়ে বলেনঃ বলেছেন যে, তিনি বাজলা বিন আব্দকে বলতে শুনেছেন যে, উমর বিন খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এ মর্মে নির্দেশ জারি করেছেন যে, প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ ও মহিলার শিরচ্ছেদ করে দাও। তিনি বলেন যে, তিনি তিনটি যাদুকর মহিলাকে হত্যা করেছেন। ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেন যে, ইমাম বুখারী (রাহেমাহুল্লাহ) এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন। (বুখারীঃ ২/২৫৭)
ইবনে কাসীর (রাহেমাহুল্লাহ) বলেনঃ সহীহ বিশুদ্ধ বর্ণনায় আছে যা হাফসা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তাকে তার এক বান্ধবী যাদু করেছেন। অতঃপর তার নির্দেশে যাদুকরকে হত্যা করা হয়েছে।
ইমাম আহমদ থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর তিন সাহাবা থেকে যাদুকরকে হত্যার ফতোয়া রয়েছে। (তাফসীর ইবনে কাসীরঃ ১/১৪৪)
মূলকথাঃ পূর্বের আলোচনা হতে বুঝা যায় যে, ইমাম শাফেয়ী (রাহেমাহুল্লাহ) ছাড়া জমহুর উলামা যাদুকরকে হত্যার মত পোষণ করেন, তিনি বলেনঃ যাদুকরের যাদু দ্বারা যদি কেউ মারা যায়, তবে তার (কিসাসের) পরিবর্তে তাকে হত্যা করা হবে।