উত্তর: আমরা বলি যে, ‘আরশের উপরে আল্লাহর সমুন্নত হওয়া একটি বিশেষ ধরণের সমুন্নত হওয়া। যা আল্লাহর বড়ত্ব ও সম্মানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আল্লাহ সমস্ত মাখলুকের উপরে হওয়ার সাথে ‘আরশের উপরে সমুন্নত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। এ জন্যই এ রকম বলা ঠিক হবে না যে, আল্লাহ মাখলুকাতের উপর সমুন্নত হলেন অথবা আকাশের উপরে কিংবা জমিনের উপরে। অথচ তিনি সকল বস্তুর উপরে। অন্যান্য মাখলুকাতের ক্ষেত্রে আমরা বলি আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিনসহ সকল মাখলুকের উপরে আছেন। আর ‘আরশের ক্ষেত্রে বলব যে, আল্লাহ ‘আরশের উপরে সমুন্নত (مستوي)। সুতরাং ইসতিওয়া (সমুন্নত হওয়া) গুণটি সাধারণভাবে উপরে হওয়া থেকে ভিন্ন প্রকৃতির। এ জন্যই ‘আরশের উপরে আল্লাহর সমুন্নত হওয়া গুণটি আল্লাহর ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত এবং তা আল্লাহর কর্মগত গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত। আর মাখলুকের উপরে হওয়া আল্লাহর সত্বার সাথে সম্পর্কিত গুণ, যা আল্লাহর সত্বা হতে কখনো বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়। আল্লামা ইবন তাইমিয়া দুনিয়ার আকাশে আল্লাহর অবতরণ সংক্রান্ত হাদীসে এরূপ ব্যাখ্যাই প্রদান করেছেন।
যদি বলা হয় আল্লাহ ছয়দিনে আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার পর ‘আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন। তার পূর্বে তিনি ‘আরশের উপরে ছিলেন না। ইসতিওয়া অর্থ বিশেষ এক ধরণের উপরে হওয়া। তাই কোনো বস্তু অন্য বস্তুর উপরে সমুন্নত হওয়ার অর্থ বস্তুটি তার উপরে আছে; কিন্তু উপরে থাকলেই সমুন্নত হওয়া জরুরি নয়। এজন্যই প্রতিটি উপরের বস্তুকে সমুন্নত বলা যায় না। তার বিপরীতে প্রতিটি সমুন্নত বস্তুই অপর বস্তুর উপরে বিরাজমান।
আমাদের কথা, আল্লাহর শানে যে ধরণের সমুন্নত হওয়া প্রযোজ্য তিনি সে রকমভাবেই ‘আরশে আযীমে সমুন্নত -এর অর্থ এই যে, ‘আরশের উপরে আল্লাহর সমুন্নত হওয়া আল্লাহর অন্যান্য সিফাতের মতোই। আল্লাহর যাবতীয় গুণাবলী আল্লাহর ক্ষমতা ও বড়ত্ব অনুযায়ী তাঁর সাথে প্রতিষ্ঠিত। ‘আরশের উপরে তাঁর সমুন্নত অন্য কোনো মাখলুকাতের সমুন্নত হওয়ার মত নয়। আল্লাহর সত্বা যেহেতু অন্য কোনো সত্বার মত নয়, তাই তাঁর সিফাতও অন্য কোনো সিফাতের মত নয়। বলেন,
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ﴾ [الشورا: ١١]
“তাঁর অনুরূপ কোনো কিছু নেই। তিনি সব কিছু দেখেন এবং শুনেন।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
আল্লাহর সত্বার মত কোনো সত্বা নেই এবং আল্লাহর গুণাবলীর মতো কোনো গুণাবলীও নেই। একজন বিদ‘আতী লোক ইমাম মালেক রহ.-কে জিজ্ঞাসা করল যে, আল্লাহ ‘আরশের উপরে কি অবস্থায় সমুন্নত আছেন? উত্তরে মহামান্য ইমাম বললেন, ‘আরশের উপরে আল্লাহর সমুন্নত হওয়া একটি জানা বিষয়। এর পদ্ধতি কেউ অবগত নয়। তার উপরে ঈমান আনয়ন করা ওয়াজিব। তবে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা বিদ‘আত।’ পরবর্তী বিদ্যানগণ সকল সিফাতের ক্ষেত্রে ইমাম মালেক রহ.-এর এ উক্তিটিকে একটি মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন।