উত্তর: আমরা আমাদের সকল ভাইকে প্রজ্ঞা, সদুপদেশ এবং সদ্ভাবে তর্কের মাধ্যমে আল্লাহ্র পথে দা‘ওয়াতী কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নছীহত করছি। দা‘ওয়াতী এই সার্বজনীন পদ্ধতি বিদ‘আতী ও বিভ্রান্ত দলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। সুতরাং মুমিন ব্যক্তি কোনো বিদ‘আত দেখলে অবশ্যই সে সাধ্যানুযায়ী শরঈ পদ্ধতিতে তার বিরোধিতা করবে। আর দ্বীনের ভেতরে মানুষ যেসব নতুন নতুন বিষয়ের সৃষ্টি করে দ্বীনের সাথে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, সেগুলোই বিদ‘আত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করে, যা তার মধ্যে নেই, তা-ই প্রত্যাখ্যাত’। তিনি অন্যত্র বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো আমল করল, যার প্রতি আমাদের নির্দেশনা নেই, তা-ই প্রত্যাখ্যাত’। বিদ‘আতের কিছু উদাহরণ হচ্ছে: রাফেযী মতবাদ, মু‘তাযিলা মতবাদ, মুরজিয়া মতবাদ, খারেজী মতবাদ, মীলাদুন্নবী অনুষ্ঠান উদযাপন, কবরের উপর ঘর-বাড়ি-গম্বুজ ইত্যাদি নির্মাণ, কবরের উপরে মসজিদ নির্মাণ। যাহোক, যারা বিদ‘আত করবে, তাদেরকে নছীহত করতে হবে, কল্যাণের পথে তাদেরকে আহ্বান করতে হবে এবং শর‘ঈ দলীল-প্রমাণ দিয়ে তাদের সৃষ্ট বিদ‘আতের বিরোধিতা করতে হবে। সাথে সাথে তাদের অজানা হকের কথাটি তাদেরকে বিনম্রভাবে, সুন্দর পদ্ধতিতে এবং স্পষ্ট প্রমাণাদি দ্বারা শিখিয়ে দিতে হবে। তা হলে তারা হয়তো হক কবূল করবে।
বর্তমানে সৃষ্ট বিভিন্ন নতুন দলে যোগদানের বিষয়ে আমার বক্তব্য হচ্ছে, এসব দলাদলি পরিহার করে কুরআন ও সুন্নাহ্র পথে পরিচালিত হওয়া সবার জন্য যরূরী। এক্ষেত্রে সবাই পরস্পরকে একনিষ্ঠভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করবে। আর এ পদ্ধতিতে তারা আল্লাহ্র দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ أَلَآ إِنَّ حِزۡبَ ٱللَّهِ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٢٢ ﴾ [المجادلة: ٢٢]
‘জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম’ (আল-মুজাদালাহ ২২)। তিনি তাদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী তুলে ধরে বলেন,
﴿ لَّا تَجِدُ قَوۡمٗا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ يُوَآدُّونَ مَنۡ حَآدَّ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ ﴾ [المجادلة: ٢٢]
‘যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না’ (আল-মুজাদালাহ ২২)। অন্যত্র তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ١٥ ءَاخِذِينَ مَآ ءَاتَىٰهُمۡ رَبُّهُمۡۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَبۡلَ ذَٰلِكَ مُحۡسِنِينَ ١٦ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ وَفِيٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ حَقّٞ لِّلسَّآئِلِ وَٱلۡمَحۡرُومِ ١٩ ﴾ [الذاريات: ١٥، ١٩]
‘আল্লাহভীরুরা জান্নাতে ও প্রস্রবণে থাকবে। এমতাবস্থায় যে, তাদের পালনকর্তা যা তাদেরকে দেবেন, তারা তা গ্রহণ করবে। নিশ্চয়ই ইতিপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ, তারা রাতের খুব সামান্য অংশে ঘুমাত, রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত এবং তাদের ধন-সম্পদে যাচনাকারী ও বঞ্চিতের অধিকার ছিল’ (আয-যারিয়াত ১৫-১৯)। এগুলিই হচ্ছে আল্লাহ্র দলের সদস্যদের বৈশিষ্ট্য; তারা কুরআন-সুন্নাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষাবলম্বন করে না। কুরআন-সুন্নাহ্র দিকে মানুষকে দা‘ওয়াত দেওয়া এবং ছাহাবায়ে কেরাম, সালাফে ছালেহীন ও তাদের অনুসারীদের পথে চলা ছাড়া তারা অন্য কোনো দলে যোগদান করে না।
আল্লাহ্র দলের লোকেরা অন্যান্য সকল দল ও সংগঠনের লোকদেরকে নছীহত করে এবং তারা তাদেরকে কিতাব ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরার এবং তাদের মধ্যে বিবাদীয় বিষয়কে এতদুভয়ের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। তারা বলে কুরআন-সুন্নাহ উভয়ের সাথে অথবা যে কোনো একটির সাথে যা মিলে যাবে, তা-ই হক। পক্ষান্তরে যা মিলবে না, তা পরিহার করা অপরিহার্য। এই শাশ্বত মূলনীতি জামা‘আতুল ইখওয়ান, আনছারুস-সুন্নাহ, জাম্ইয়াহ শারইয়াহ, তাবলীগ জামা‘আত অথবা ইসলামের দিকে সম্বন্ধিত অন্য যে কোনো দল বা সংগঠনের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। উপরিউক্ত মূলনীতির মাধ্যমে সবার সংঘবদ্ধ এবং একক দলে পরিণত হওয়া সম্ভব, যে একক দল আল্লাহ্র দল তথা ‘আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত’-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলবে। মনে রাখতে হবে, শরী‘আত বিরোধী বিষয়ে কোনো দল বা সংগঠনের অন্ধভক্তি দেখানো বৈধ নয়।([1])