অনেক সময় মুহাদ্দিসগণের মতভেদ একান্তই পরিভাষাগত। উপরে আমরা দেখেছি যে, মিথ্যাবাদী রাবীর পরিচয় জ্ঞাপনে এবং জাল হাদীস চিহ্নিতকরণে মুহাদ্দিসগণ একাধিক পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। এতে কখনো দেখা যায় যে, একটি হাদীসকে একজন মুহাদ্দিস ‘মুনকার’ বা ‘বাতিল’ বলছেন এবং অন্যজন তাকে ‘মাউযূ’ বলছেন। এরূপ একটি পরিভাষাগত বিষয় ‘যয়ীফ’ শব্দের ব্যবহার। ইলমুল হাদীসের পরিভাষায় সকল প্রকার অগ্রহণযোগ্য হাদীসকেই ‘যয়ীফ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। যয়ীফ হাদীসের এক প্রকার হলো মাউযূ বা জাল হাদীস। কোনো হাদীসকে যয়ীফ বলে আখ্যায়িত করার অর্থ হাদীসটি দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য। তা জাল হতে পারে নাও হতে পারে।
আমরা দেখতে পাই যে, অনেক মুহাদ্দিস হাদীস সংকলন ও নিরীক্ষার ক্ষেত্রে, বিশেষত বৃহদাকার গ্রন্থাদির ক্ষেত্রে অনেক হাদীস ‘দুর্বল’ বা ‘যয়ীফ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ সকল দুর্বল হাদীসের কোনো হাদীসকে অন্যান্য মুহাদ্দিস ‘মাউযূ’ বা জাল বলে উল্লেখ করেছেন। বিষয়টি বাহ্যত মতভেদ বলে মনে হলেও তা প্রকৃত মতভেদ নয়। কোনো মুহাদ্দিস যদি বলেন যে, হাদীসটি যয়ীফ, তবে মাউযূ নয়, এবং অন্য মুহাদ্দিস বলেন যে, হাদীসটি মাউযূ, তবে তা মতভেদ বলে গণ্য হবে। কিন্তু যে সকল মুহাদ্দিস সাধারণত ‘মাউযূ’ পরিভাষা ব্যবহার করেন নি, বরং সকল ‘অনির্ভরযোগ্য’ হাদীসকে সংক্ষেপে ‘দুর্বল’ বলে উল্লেখ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি মতভেদ বলে গণ্য নয়।