হাদীসের নামে মিথ্যার একটি ক্ষেত্র অনুবাদ ও ব্যাখ্যা। আমরা সাধারণত বই-পুস্তক ও ওয়ায-নসীহতে হাদীস উল্লেখের ক্ষেত্রে নিজেদেরকে ১০০% স্বাধীনতা প্রদান করে থাকি। হাদীসের মূল বক্তব্যকে আমরা আমাদের পছন্দমত কমবেশি করে অনুবাদ করি, অনুবাদের মধ্যে ব্যাখ্যা সংযোগ করি এবং সবকিছুকে ‘হাদীস’ নামেই চালাই। অথচ সাহাবাীগণ একটি শব্দের হেরফেরের কারণে গলদঘর্ম হয়ে যেতেন!
কুরআন ও হাদীসের আলোকে কিয়াস ও ইজতিহাদ ইসলামী ফিকহের অন্যতম উৎস। যে সকল বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে সুস্পষ্ট কিছু বিধান দেয়া হয় নি কিয়াস ও ইজতিহাদের মাধ্যমে সেগুলোর বিধান নির্ধারণ করতে হয়। যেমন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) উম্মাতকে সালাত শিক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু কোন কাজটি ফরয, কোনটি মুস্তাহাব ইত্যাদি বিস্তারিত বলেন নি। বিভিন্ন হাদীসের আলোকে মুজতাহিদ তা নির্ণয় করার চেষ্টা করেন। অনুরূপভাবে মাইক, টেলিফোন, প্লেন ইত্যাদি বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে কিছু বলা হয় নি। কুরআন ও হাদীসের প্রাসঙ্গিক নির্দেশাবলির আলোকে কিয়াস ও ইজতিহাদের মাধ্যমে এগুলোর বিধান অবগত হওয়ার চেষ্টা করেন মুজতাহিদ।
তবে কিয়াস বা ইজতিহাদ দ্বারা কোনো গাইবী বিষয় জানা যায় না বা ইবাদত বন্দেগি তৈরি করা যায় না। হজ্জের সময় ইহরাম পরিধানের উপর কিয়াস করে সালাতের মধ্যে ইহরাম পরিধানের বিধান দেওয়া যায় না। অনুরূপভাবে মসজিদুল হারামে সালাতের ১ লক্ষগুণ সাওয়াবের উপর কিয়াস করে তথায় যাকাত প্রদানের সাওয়াব ১ লক্ষগুণ বৃদ্ধি হবে বলে বলা যায় না। অথবা আমরা বলতে পারি না যে, রামাদানে যাকাত দিলে ৭০ গুণ সাওয়াব এবং রামাদানে মসজিদে হারামে যাকাত প্রদান করলে ৭০ লক্ষ গুণ সাওয়াব।
এখানে কিছু উদাহরণ উল্লেখ করছি। ইমাম তিরমিযী জিহাদের ফযীলতের অধ্যায়ে নিম্নের ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য হাদীসটি সংকলন করেছেন। খুরাইম ইবনু ফাতিক (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ كُتِبَتْ لَهُ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ
‘‘যদি কেউ আল্লাহর রাস্তায় কোনো ব্যয় করেন তবে তার জন্য সাত শত গুণ সাওয়াব লেখা হয়।’’[1]
ইমাম ইবনু মাজাহ সংকলিত একটি যয়ীফ হাদীসে বলা হয়েছে:
مَنْ أَرْسَلَ بِنَفَقَةٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأَقَامَ فِي بَيْتِهِ فَلَهُ بِكُلِّ دِرْهَمٍ سَبْعُ مِائَةِ دِرْهَمٍ وَمَنْ غَزَا بِنَفْسِهِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأَنْفَقَ فِي وَجْهِ ذَلِكَ فَلَهُ بِكُلِّ دِرْهَمٍ سَبْعُ مِائَةِ أَلْفِ دِرْهَمٍ ثُمَّ تَلا هَذِهِ الآيَةَ: وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ
‘‘যে নিজে বাড়িতে অবস্থান করে আল্লাহর রাস্তায় খরচ পাঠিয়ে দেয় সে প্রত্যেক দিরহামের জন্য ৭০০ দিরহাম লাভ করবে। আর যে নিজে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং এ জন্য খরচ করে সে প্রত্যেক দিরহামের জন্য ৭ লক্ষ দিরহাম (সাওয়াব) লাভ করবে। এরপর তিনি (সূরা বাকারার ২৬১ আয়াত) পাঠ করেন: ‘আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা বৃদ্ধি করে দেন।’’[2]
হাদীসটির একমাত্র বর্ণনাকারী ইবনু আবী ফুদাইক। তিনি বলেন, ‘খালীল ইবনু আব্দুল্লাহ নামক এক ব্যক্তি হাসান বসরীর সূত্রে হাদীসটি বলেছেন। মুহাদ্দিসগণ খালীল ইবনু আব্দুল্লাহ নামক এ ব্যক্তির বিশ্বস্ততা তো দূরের কথা তার কোনো পরিচয়ও জানতে পারেন নি। এজন্য আল্লামা বূসীরী বলেন: ‘‘এ সনদটি দূর্বল; কারণ খালীল ইবনু আব্দুল্লাহ অজ্ঞাত পরিচয়।’’[3]
তাবিয়ী মুজাহিদ বলেন, আবূ হুরাইরা (রা) একবার সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিত ছিলেন। শত্রুর আগমন ঘটেছে মনে করে হঠাৎ করে ডাকাডাকি করা হয়। এতে সকলেই ছুটে সমূদ্র উপকূলে চলে যান। তখন বলা হয় যে, কোনো অসুবিধা নেই। এতে সকলেই ফিরে আসলেন। শুধু আবূ হুরাইরা দাঁড়িয়ে রইলেন। তখন একব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করেন, আবূ হুরাইরা, আপনি এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি:
مَوْقِفُ سَاعَةٍ فِيْ سِبِيْلِ اللهِ خَيْرٌ مِنْ قِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ عِنْدَ الْحَجَرِ الأَسْوَدِ
‘‘আল্লাহর রাস্তায় এক মুহূর্ত অবস্থান করা লাইলাতুল কাদ্রে ‘হাজারে আসওয়াদ’-এর কাছে কিয়াম (সালাত আদায়) করার চেয়ে উত্তম।’’[4]
উপরের হাদীসগুলোতে ‘আল্লাহর পথে’ ব্যয়, অবস্থান ইত্যাদির সাওয়াব উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর সকল আলিম একমত যে, এখানে ‘আল্লাহর রাস্তায়’ বলতে অমুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মুসলিম রাষ্ট্রের যুদ্ধ বা জিহাদ বুঝানো হয়েছে। সকল মুহাদ্দিসই হাদীসগুলোকে ‘জিহাদ’ বা যুদ্ধের অধ্যায়ে সংকলন করেছেন। এখানে যদি আমরা অনুবাদে ‘আল্লাহর রাস্তায়’ বলি, অথবা ‘জিহাদ’ বলি তবে হাদীসগুলোর সঠিক অনুবাদ করা হবে।
অন্য একটি সহীহ হাদীসে কা’ব ইবনু আজুরা (রা) বলেন, একজন উদ্দীপনাময় শক্তিশালী ব্যক্তিকে দেখে সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, এ লোকটি যদি আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদে) থাকত! তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
إِنْ كَانَ خَرَجَ يَسْعَى عَلَى وَلَدِهِ صِغَارًا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، وَإِنْ كَانَ خَرَجَ يَسْعَى عَلَى أَبَوَيْنِ شَيْخَيْنِ كَبِيرَيْنِ فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، وَإِنْ كَانَ خَرَجَ يَسْعَى عَلَى نَفْسِهِ يُعِفُّهَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ.
‘‘যদি লোকটি তার ছোটছোট সন্তানদের জন্য উপার্জনের চেষ্টায় বেরিয়ে থাকে তাহলে সে আল্লাহর রাস্তায় রয়েছে। যদি সে তার বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য উপার্জনের চেষ্টায় বেরিয়ে থাকে তাহলে সে আল্লাহর রাস্তায় রয়েছে। যদি সে নিজেকে পরনির্ভরতা থেকে মুক্ত রাখতে উপার্জনের চেষ্টায় বেরিয়ে থাকে তাহলে সে আল্লাহর রাস্তায় রয়েছে।’’[5]
এখানে অর্থ উপার্জনের জন্য কর্ম করাকে ‘আল্লাহর রাস্তায় থাকা’ বা ‘আল্লাহর রাস্তায় চলা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। অন্যান্য হাদীসে ইলম শিক্ষা, হজ্জ, সৎকাজে আদেশ, ঠান্ডার মধ্যে পূর্ণরূপে ওযু করা, মসজিদে সালাতের অপেক্ষা করা, নিজের নফসকে আল্লাহর পথে রাখার চেষ্টা করা ইত্যাদি কর্মকে জিহাদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা উপরের হাদীসগুলোর সঠিক ও শাব্দিক অর্থ বর্ণনা করার পরে বলতে পারি যে, বিভিন্ন হাদীসে হালাল উপার্জন, ইলম শিক্ষা, সৎকাজে আদেশ, হজ্জ আদায় ইত্যাদি কর্মকেও ‘আল্লাহর রাস্তায় কর্ম’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। কাজেই আমরা আশা করি যে, এরূপ কর্মে রত মানুষেরাও এসকল হাদীসে উল্লিখিত ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের সাওয়াব পেতে পারেন।
কিন্তু আমরা যদি সেরূপ না করে, সরাসরি বলি যে, ‘হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, হালাল উপার্জনে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকা হাজারে আসওয়াদের কাছে লাইলাতুল কাদ্রের সালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম’, অথবা ‘সৎকাজে আদেশের জন্য র্যালি বা মিছিলে একটি টাকা ব্যয় করলে ৭০ লক্ষ টাকার সাওয়াব পাওয়া যাবে’ ... তবে তা মিথ্যাচার বলে গণ্য হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনোই এভাবে বলেন নি।
অনুরূপভাবে উপরের হাদীসগুলোতে আল্লাহর পথে যুদ্ধে ব্যায় করলে ৭০০ বা ৭ লক্ষ গুণ সাওয়াবের কথা বলা হয়েছে। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে:
إِنَّ الصَّلاةَ وَالصِّيَامَ وَالذِّكْرَ تُضَاعَفُ عَلَى النَّفَقَةِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ
‘‘সালাত, সিয়াম ও যিক্র (এগুলোর সাওয়াব) আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার চেয়ে সাত শত গুণ বর্ধিত হয়।’’[6]
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেছেন যে, এ হাদীসে সুস্পষ্ট অর্থ হলো, ঘরে বসে সালাত, সিয়াম ও যিক্র পালন করলে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য অর্থ ব্যয়ের চেয়েও সাত শত গুণ বেশি সাওয়াব পাওয়া যায়। কেউ কেউ এখানে কিছু কথা উহ্য রয়েছে বলে মনে করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এ হাদীসের অর্থ হলো ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত অবস্থায়’ সালাত, সিয়াম ও যিকর পালন করলে সেগুলোর সাওয়াব আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে খরচ করার চেয়ে সাত শত গুণ বর্ধিত হয়।[7] এখানে আমাদের দায়িত্ব হলো হাদীসটি শাব্দিক অর্থ বলার পরে আমাদের ব্যাখ্যা পৃথকভাবে বলা।
এখানে বিভিন্নভাবে হাদীসের নামে মিথ্যা বলার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমন কেউ গুণভাগ করে বলতে পারেন যে, ‘জিহাদে যেয়ে অর্থ ব্যায় করলে ৭ লক্ষগুণ সাওয়াব। আর ঘরে বসে যিক্র করলে তার ৭ শত গুণ সাওয়াব। এর অর্থ হলো ঘরে বসে যিক্র করলে ৪৯ কোটি নেক আমলের সাওয়াব।’ তিনি যদি উপরের হাদীসগুলোর সঠিক অনুবাদ করার পরে পৃথকভাবে এ ব্যাখ্যা করেন তবে অসুবিধা নেই। কিন্তু তিনি যদি এ কথাটিকে হাদীসের কথা বলে বুঝান তবে তিনি হাদীসের নামে মিথ্যা বললেন। কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কখনোই এভাবে বলেন নি। তিনি আল্লাহর পথে খরচের চেয়ে ৭০০ গুণ বৃদ্ধি বলতে মুল সাওয়াবের চেয়ে ৭০০ গুণ, নাকি ৭০০ গুণের ৭০০ গুণ বুঝাচ্ছেন তাও বলেন নি। কাজেই তিনি যা সুস্পষ্ট করে বলেন নি, তা তাঁর নামে বলা যায় না। তবে পৃথকভাবে ব্যাখ্যায় বলা যেতে পারে।
অনুরূপভাবে যদি কেউ বলেন যে, ‘হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, হালাল উপার্জনের জন্য কর্মরত অবস্থায়, হজ্জের সফরে থাকা অবস্থায়, ইলম শিক্ষারত অবস্থায়, দাওয়াতে রত অবস্থায়, সৎকাজের আদেশের জন্য মিছিলে থাকা অবস্থায় বা নফস'কে শাসন করার অবস্থায় যিক্র করলে ৪৯ কোটি গুণ সাওয়াব পাওয়া যায়’ তবে তিনিও হাদীসের নামে মিথ্যা বললেন।
হাদীসের নামে মিথ্যা বলার একটি প্রকরণ হলো, অনুবাদের ক্ষেত্রে শাব্দিক অনুবাদ না করে অনুবাদের সাথে নিজের মনমত কিছু সংযোগ করা বা কিছু বাদ দিয়ে অনুবাদ করা। অথবা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা বলেছেন তার ব্যাখ্যাকে হাদীসের অংশ বানিয়ে দেয়া। আমাদের সমাজে আমরা প্রায় সকলেই এ অপরাধে লিপ্ত রয়েছি। আত্মশুদ্ধি, পীর-মুরিদী, দাওয়াত-তাবলীগ, রাজনীতিসহ মতভেদীয় বিভিন্ন মাসআলা-মাসাইল-এর জন্য আমরা প্রত্যেক দলের ও মতের মানুষ কুরআন ও হাদীস থেকে দলীল প্রদান করি। এরূপ দলীল প্রদান খুবই স্বাভাবিক কর্ম ও ঈমানের দাবি। তবে সাধারণত আমরা আমাদের এ ব্যাখ্যাকেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নামে চালাই।
যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন, কিন্তু প্রচলিত অর্থে ‘দলীয় রাজনীতি’ করেন নি, অর্থাৎ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা পরিবর্তনের মত কিছু করেন নি। বর্তমানে গণতান্ত্রিক ‘রাজনীতি’ করছেন অনেক আলিম। ন্যায়ের আদেশ, অন্যায়ের নিষেধ বা ইকামতে দীনের একটি নতুন পদ্ধতি হিসেবে একে গ্রহণ করা হয়। তবে যদি আমরা বলি যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাজনীতি করেছেন’, তবে শ্রোতা বা পাঠক ‘রাজনীতি’র প্রচলিত অর্থ, অর্থাৎ ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের কথাই বুঝবেন। আর এ রাজনীতি তিনি করেন নি। ফলে এভাবে তাঁর নামে মিথ্যা বলা হবে। এজন্য আমাদের উচিত তিনি কী করেছেন ও বলেছেন এবং আমরা কি ব্যাখ্যা করছি তা পৃথকভাবে বলা।
রাসূলুল্লাহ ﷺ দীন প্রচার করেছেন আজীবন। দীনের জন্য তিনি ও তাঁর অনেক সাহাবী চিরতরে বাড়িঘর ছেড়ে ‘হিজরত’ করেছেন। কিন্তু তিনি কখনোই দাওয়াতের জন্য সময় নির্ধারণ করে ২/১ মাসের জন্য সফরে ‘বাহির’ হন নি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেকে হিজরত না করলেও অন্তত কিছুদিনের জন্য বিভিন্ন স্থানে যেয়ে দাওয়াতের কাজ করছেন। কিন্তু আমরা এ কর্মের জন্য যদি বলি যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ দাওয়াতের জন্য ‘বাহির’ হতেন, তবে পাঠক বা শ্রোতা ‘নির্ধারিত সময়ের জন্য বাহির হওয়া’ বুঝবেন। অথচ তিনি কখনোই এভাবে দাওয়াতের কাজ করেন নি। এতে তাঁর নামে মিথ্যা বলা হবে।
যদি আমরা বলি যে, ‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীগণ মীলাদ মাহফিল করতেন’ তবে অনুরূপভাবে তাঁর নামে মিথ্যা বলা হবে। কারণ তাঁরা শুধু ‘মীলাদ’ আলোচনা বা উদযাপনের জন্য কোনো মাহফিল করেন নি। তবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর জন্ম বিষয়ক দু চারটি ঘটনা সাহাবীদেরকে বলেছেন। এ সকল হাদীস সাহাবীগণ তাবিয়ীগণকে বলেছেন। এগুলোর জন্য তাঁরা কোনো মাহফিল করেন নি বা এগুলোকে পৃথকভাবে আলোচনা করেন নি। আজ যদি কোনো মুসলিম ‘আনুষঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা’ ছাড়া অবিকল রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীগণের পদ্ধতিতে এ সকল হাদীস বর্ণনা করেন, তবে কেউই বলবেন না যে তিনি মীলাদ মাহফিল করছেন। এতে আমরা বুঝি যে, ‘মীলাদ মাহফিল’ বলতে যে অর্থ আমরা সকলেই বুঝি সে কাজটি তিনি করেন নি।
এজন্য আমাদের উচিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কি করেছেন বা বলেছেন এবং তা থেকে আমরা কি বুঝলাম তা পৃথকভাবে বলা। আমরা দেখেছি যে, একটি শব্দের হেরফেরের ভয়ে সাহাবীগণ কিভাবে সন্ত্রস্ত হয়েছেন। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।
[2] ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ২/৯২২।
[3] বূসীরী, মিসবাহুয যুজাজাহ ৩/১৫৪।
[4] ইবনু হিববান, আস-সহীহ ১০/৪৬২; হাইসামী, মাওয়ারিদুয যামআন ৫/১৬১-১৬২; বাইহাকী, শু‘আবুল ঈমান ৪/৪০।
[5] হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৩২৫। হাদীসটির সনদ সহীহ।
[6] আবূ দাঊদ, আস-সুনান ৩/৮, হাকিম, আল-মুসতাদরাক ২/৮৮। হাদীসটির একমাত্র রাবী যাববান ইবনু ফাইদ হাদীস বর্ণনায় দুর্বল ছিলেন। ইবনু হাজার, তাকরীব, পৃ. ২১৩।
[7] হাশিয়াতু ইবনিল কাইয়িম ৭/১২৭।