السواك মিসওয়াক করা
السواك বা মিসওয়াকের পরিচয় এবং শরীয়াতে এর বিধান:
السواك শব্দটি ساك শব্দ থেকে গৃহীত। এর আভিধানিক অর্থ:دلك বা ঘষা, মাজা, মর্দন করা ইত্যাদি।
পরিভাষায়ঃ দাঁত থেকে হলুদ বর্ণ বা এ জাতীয় ময়লা দূর করার জন্য কাঠ বা গাছের ডাল ব্যবহার করাকে মিসওয়াক বলে।[1]
সবসময় মেসওয়াক করা মুস্তাহাব। যেমন আয়িশা বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে:
عَن عَائِشَةَ، النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ لِلرَّبِّ
আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুলাহ (ﷺ) থেকে বর্ননা করেন : তিনি বলেছেন যে, মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ ও আল্লাহ্র সমেত্মাষ লাভের উপায়।[2]
নিম্নোক্ত সময়গুলোতে মিসওয়াক করা উত্তম বলে তাকিদ দেয়া হয়েছে:
১। ওযূর সময়:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَال: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: لَوْلا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ الْوضُوْءِ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যদি অমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি ওযূর সময় তাদের মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম।[3]
২। সালাতের সময়:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَال: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْلا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي، لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلِّ صَلَاةٍ
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট মনে না করতাম তাহলে আমি প্রত্যেক সালাতের সময় তাদের মিসওয়াক করতে নির্দেশ দিতাম।[4]
৩। কুরআন পাঠের সময়:
عَنْ عَلِىٍّ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : أُمِرْنَا بِالسِّوَاكِ وَقَالَ : إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا قَامَ يُصَلِّى أَتَاهُ الْمَلَكُ فَقَامَ خَلْفَهُ يَسْتَمِعُ الْقُرْآنَ وَيَدْنُو ، فَلاَ يَزَالُ يَسْتَمِعُ وَيَدْنُو حَتَّى يَضَعَ فَاهُ عَلَى فِيهِ ، فَلاَ يَقْرَأُ آيَةً إِلاَّ كَانَتْ فِى جَوْفِ الْمَلَكِ.
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমাদের মিসওয়াক করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। কেননা যখন কোন বান্দা সালাতে দাঁড়ায় তখন তার কাছে ফেরেশতা এসে তার পিছনে দাঁড়ায় ও কুরআন পড়া শুনতে থাকে এবং তার নিকটবর্তী হতে থাকে, এমন কি ফেরেশতা তার মুখকে তেলাওয়াতকারীর মুখের সাথে লাগিয়ে দেয়। ফলে প্রত্যেক আয়াত ফেরেশতার পেটের ভিতর প্রবেশ করে।[5]
৪। গৃহে প্রবেশের সময়:
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ شُرَيْحٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ قُلْتُ بِأَىِّ شَىْءٍ كَانَ يَبْدَأُ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ قَالَتْ بِالسِّوَاكِ.
আল মিকদাদ ইবন শুরাইহ থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি আয়িশা (রা.) কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুলাহ (ﷺ) ঘরে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কোন কাজ করতেন? তিনি বলেন, মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজা।
৫। রাতের সালাত আদায়ের সময়:
عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَامَ لِيَتَهَجَّدَ يَشُوصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ .
হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন তাহাজ্জুদ সালাতের জন্য উঠতেন তখন মিসওয়াক দ্বারা ঘষে মুখ পরিষ্কার করতেন। তথা তার দাঁতগুলোকে মিসওয়াক দ্বারা ঘষতেন।[6]
মিসওয়াক করার জন্য ‘আরাক’ নামক গাছের ডাল ব্যবহার করা মুস্তাহাব। যদি তা না পাওয়া যায়, তাহলে দাঁত ও মুখ পরিষ্কার হয়ে যায় এমন কোন বস্ত্ত ব্যবহার করা যথেষ্ট হবে। যেমন নির্দিষ্ট কোন পেষ্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা। আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত।
নখ কাটা, গোঁফ ছাঁটা, বগলের লোম উপড়ানো ও নাভীর নীচের লোম পরিষ্কার জন্য কি নির্দিষ্ট সময় সীমা রয়েছে?
এ রীতিগুলোর জন্য কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা বাঁধা নেই। বরং প্রয়োজন অনুযায়ী তা কাট ছাট করবে। সুতরাং যে সময় তা কাটছাট করার প্রয়োজন হবে, সেটাই তার সময়। তবে চল্লিশ দিনের বেশি তা রেখে দেয়া উচিৎ নয়।
যেমন আনাস (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:
وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمِ الْأَظْفَارِ، وَنَتْفِ الْإِبِطِ، وَحَلْقِ الْعَانَةِ، أَنْ لَا نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً
রাসূল (ﷺ) আমাদের জন্য গোঁফ খাটো করা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা ও নাভীর নীচের পশম পরিষ্কার করার জন্য নির্দিষ্ট সীমারেখা বেঁধে দিয়েছেন, আমরা যেন তা চল্লিশ রাতের বেশি ছেড়ে না রাখি।[7]
[2] সহীহ; নাসাঈ (১/৫০), আহমাদ (৬/৪৭, ৬২) প্রভৃতি।
[3] আহমাদ; তা বর্ণিত হয়েছে, সহীহ আল-জামে’ (৫৩১৬)।
[4] সহীহ; বুখারী (৬৮১৩), মুসলিম (২৫২)।
[5] আলবানী একে সহীহ বলেছেন; বাইহাক্বী (১/৩৮), সহীহা (১২১৩)।
[6] সহীহ; বুখারী (২৪৬), মুসলিম (২৫৫)।
[7] সহীহ; মুসলিম (২৫৭ ) ও অন্যান্য।