আযান শুরু হলে চুপ থেকে শুনে তার জওয়াব দেওয়া বিধেয় (সুন্নত)। মুআযযিন ‘আল্লাহু আকবার’ বললে, শ্রোতাও তার জবাবে ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। মুআযযিন ‘আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্’ বললে শ্রোতা বলবে, ‘অআনা, অআনা।’ অর্থাৎ আমিও সাক্ষি দিচ্ছি, আমিও। (আবূদাঊদ, সুনান ৫২৬নং)
এই সময় নিম্নের দুআও বলতে হয়:-
وَ أَنَا أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَ (أَشْهَدُ) أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، رَضِيْتُ بِاللهِ رَباًّ وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلاً وَّ بِالإِسْلاَمِ دِيْناً।
উচ্চারণ:- অআনা আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহ্দাহু লা শারীকা লাহ্, অ (আশহাদু) আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরাসূলুহ্। রাযীতু বিল্লাহি রা ব্বাঁ উঅবিমুহাম্মাদিন (সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামা) রাসূলাঁউঅবিল ইসলামি দ্বীনা।
অর্থাৎ, আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) তাঁর বান্দা ও রসূল। আল্লাহ আমার প্রতিপালক হওয়ার ব্যাপারে, মুহাম্মাদ (ﷺ) রসূল হওয়ার ব্যাপারে এবং ইসলাম আমার দ্বীন হওয়ার ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট।
এই দুআ পড়লে গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যায়। (মুসলিম, সহীহ ৩৮৬, আবূদাঊদ, সুনান ৫২৫নং, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান)
আযানে মহানবী (ﷺ) এর নাম শুনে চোখে আঙ্গুল বুলানো বিদআত। এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসটি জাল। (তাযকিরাহ্, ইবনে তাহের, রিসালাতুন ইলা মুআযযিন ৫৬পৃ:) অনুরুপ সেই সময় আঙ্গুলে চুমু খাওয়াও বিদআত।
মুআযযিন ‘হাইয়্যা আলাস স্বালাহ্’ ও ‘---ফালাহ্’ বললে জওয়াবে শ্রোতা বলবে,
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِالله
উচ্চারণ:- লাহাউলা অলা ক্বু ওঅতা ইল্লা বিল্লাহ্।
অর্থাৎ, আল্লাহর তওফীক ছাড়া পাপকর্ম ত্যাগ করা এবং সৎকর্ম করার সাধ্য কারো নেই। (মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান ৫২৭নং)
মুআযযিন ‘আসস্বলাতু খাইরুম মিনান নাউম’ বললে অনুরুপ বলে জওয়াব দিতে হবে। এর জওয়াবে অন্য কোন দুআ (যেমন ‘স্বাদাকতা অবারিরতা বা বারারতা--’ বলার হাদীস নেই। (সুবুলুস সালাম ৮৭পৃ:, তুহ্ফাতুল আহওয়াযী ১/৫২৫)
আযান শেষ হলে মহানবী (ﷺ) এর উপর দরুদ পাঠ করে নিম্নের দুআ পড়লে কিয়ামতে তাঁর সুপারিশ নসীব হবে;
اَللّهُمَّ رَبَّ هذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّداً الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَاماً مَّحْمُوْداً الَّذِيْ وَعَدْتَّهُ।
“আল্লাহুম্মা রাব্বাহা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাতি অসসালা-তিল ক্বা-ইমাহ্, আ-তি মুহাম্মাদানিল অসীলাতা অলফাযীলাহ্, অবআসহু মাক্বা-মাম মাহ্মূদানিল্লাযী অআত্তাহ্।”
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! হে এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠালাভকারী নামাযের প্রভু! তুমি মুহাম্মাদ (ﷺ) কে অসীলাহ্ (জান্নাতের সুউচ্চ স্থান) এবং মর্যাদা দান কর। আর তাঁকে সেই মাক্বামে মাহ্মূদ (প্রশংসিত স্থানে) প্রেরণ করো যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাঁকে দান করেছ। (বুখারী ৬১৪নং, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, নাসাঈ, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান)
প্রকাশ যে, উক্ত দুআর মাঝে ইবনে সুন্নীর বর্ণনায় ‘অদ্দারাজাতার রাফীআহ্’, (তদনুরুপ লোকেদের বর্ণনায় ‘সাইয়্যিদানা মুহাম্মাদান’, অরযুক্বনা শাফাআতাহু’) এবং শেষে বাইহাকীর বর্ণনায় অতিরিক্ত ‘ইন্নাকা লা তুখলিফুল মীআদ’ প্রভৃতি শুদ্ধ নয়। (ইর: ১/২৬১)
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “মুআযযিনকে আযান দিতে শুনলে তোমরাও ওর মতই বল। অতঃপর আমার উপর দরুদ পাঠ কর; কেননা, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহ্মত বর্ষণ করেন। অতঃপর তোমরা আমার জন্য আল্লাহর নিকট অসীলা প্রার্থনা কর; কারণ, অসীলা হল জান্নাতের এমন এক সুউচ্চ স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একটি বান্দার জন্য উপযুক্ত। আর আমি আশা রাখি যে, সেই বান্দা আমিই। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্য ঐ অসীলা প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার শাফাআত (সুপারিশ) অবধার্য হয়ে যাবে।” (মুসলিম, সহীহ প্রমুখ, মিশকাত ৬৫৭নং)
আযানের পূর্বে শুরুতে (উচ্চস্বরে বা মাইক্রোফোনে) দরুদ বা তাসবীহ পাঠ এবং অনুরুপ শেষেও দরুদ বা উক্ত দুআ (জোরে-শোরে) পাঠ বিদআত। শিখাবার উদ্দেশ্যেও আল্লাহর নবী (ﷺ) বা সলফদের কেউই এরুপ করে যান নি। (ইবনে বায, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/৯২, টীকা) যেমন আযান ও ইকামতের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ্’ পড়া বিদআত। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্হ, ইবনে উষাইমীন ১/১৩২) তদ্রুপ উপরোক্ত ঐ দুআ পড়ার সময় হাত তোলাও বিধেয় নয়। বিধেয় নয় আযান শুরু হলে মহিলাদের মাথায় কাপড় নেওয়া।
জ্ঞাতব্য যে, আযানের জওয়াব দেবে প্রত্যেক সেই ব্যক্তি যার জন্য আল্লাহর যিক্র করা বৈধ। অতএব পবিত্র অবস্থায়, অপবিত্র বা মাসিক অবস্থায় নারী-পুরুষ সকলের জন্যই আযানের জওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব। অবশ্য নামায পড়া অবস্থায়, প্রস্রাব-পায়খানা করা অথবা বাথরুমে থাকা অবস্থায় এবং স্ত্রী-মিলন রত অবস্থায় আযানের উত্তর দেওয়া বৈধ নয়। এসব কাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর বাকী আযানের উত্তর দেওয়া বিধেয়।
যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত বা যিক্র করে অথবা দারস দেয় সে ব্যক্তি তা বন্ধ রেখে আযানের জওয়াব দিয়ে পুনরায় তা ছেড়ে রাখা জায়গা থেকে শুরু করবে। (ফিকহুস সুন্নাহ্ ১/৮৭)
খাওয়ার সময় আযান হলে খেতে খেতেও আযানের জওয়াব দিতে এবং তারপর দুআ পড়তে কোন বাধা নেই। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ১/৫৩২)
আযানের সময় দুআ কবুল হয়ে থাকে। (আবূদাঊদ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৩০৭৯ নং)