ইহরামের সময় যদি নারীর ঋতু বা নিফাস হয়, অন্যান্য পবিত্র নারীর মতো সেও ইহরাম বাঁধবে। কারণ, ইহরামের জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। ইবন কুদামাহ রহ. ‘আল-মুগনি’: (৩/২৯৩ ও ২৯৪) গ্রন্থে বলেন: ইহরামের সময় নারীর গোসল করার বিধান রয়েছে, যেমন রয়েছে পুরুষের। ইহরাম হজের অংশ, তাই হায়েয ও নিফাসের নারীদের ক্ষেত্রে গোসল বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু তাদের ব্যাপারে হাদীস রয়েছে, জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
»حتى أتينا ذا الحليفة فولدت أسماء بنت عميس محمد بن أبي بكر، فأرسلت إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم كيف أصنع ؟ قال: اغتسلي، واستثفري بثوب، وأحرمي«
“আমরা যখন যুল হুলাইফা আসি তখন আসমা বিনতে উমাইস মুহাম্মাদ ইবন আবু বকরকে প্রসব করেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জানতে চেয়ে প্রেরণ করল, কীভাবে করবে? তিনি বললেন: গোসল কর, একটি কাপড় পেঁচিয়ে নাও ও ইহরাম বাঁধ”।[1]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
»النفساء والحائض إذا أتيا على الوقت يحرمان ويقضيان المناسك كلها غير الطواف بالبيت«
“নিফাস ও ঋতুমতী নারী মিকাতে পৌঁছে ইহরাম বাঁধবে ও হজের সকল ইবাদত আঞ্জাম দিবে শুধু তাওয়াফ ব্যতীত”।[2]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশাকে হায়েয অবস্থায় হজের তালবিয়ার জন্য গোসল করার নির্দেশ দিয়েছেন”। সমাপ্ত।
ঋতুমতী ও নিফাসের নারীর ইহরামের পূর্বে গোসল করার হিকমত পবিত্রতা অর্জন করা, দুর্গন্ধ দূর করা যেন মানুষ জড়ো হলে তার থেকে কষ্ট না পায়। যদি ইহরাম অবস্থায় তাদের হায়েয ও নিফাস শুরু হয়, তবুও গোসল করবে নাপাক হালকা করার জন্য, তাদের ইহরামের কোনো সমস্যা হবে না। তারা ইহরাম অবস্থায় থাকবে ও গোসল করবে। অতঃপর ‘আরাফার দিন চলে আসার পরও যদি পবিত্র না হয়, তাহলে যদি উমরা শেষে হজ করার ইচ্ছায় ইহরাম বেঁধে থাকে, এখন হজের ইহরাম বাঁধবে এবং হজকে উমরার সাথে মিলিয়ে ঋতুমতী ও নিফাসী উভয় কারিন হয়ে যাবে অর্থাৎ কিরান হজ আদায়কারী হবে।
এ মাস’আলার দলীল: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ঋতুমতী হন, তার পূর্বে তিনি উমরার ইহরাম বেঁধেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট গেলে তাকে কাঁদতে দেখেন, তিনি বলেন: তুমি কাঁদ কেন, হয়তো তোমার ঋতু শুরু হয়েছে? সে বলল: হ্যাঁ, তিনি বললেন: এটা এমন এক বস্তু, যা আল্লাহ আদমের মেয়েদের ওপর অবধারিত করে দিয়েছেন। হাজীগণ যা করে তুমিও তাই কর, তবে তাওয়াফ করো না”।[3]
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে:
»ثم دخل النبي صلى الله عليه وسلم على عائشة فوجدها تبكي، فقال: ما شأنك ؟ قالت: شأني أني قد حضت، وقد حل الناس ولم أحلل ولم أطف بالبيت، والناس يذهبون إلى الحج الآن، فقال: إن هذا أمر قد كتبه الله على بنات آدم، فاغتسلي، ثم أهلي ففعلت ووقفت المواقف كلها، حتى إذا طهرت طافت بالكعبة وبالصفا والمروة، ثم قال: قد حللت من حجك وعمرتك جميعا«
“অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশার নিকট এসে তাকে কাঁদতে দেখেন। তিনি বললেন: তোমার কী হয়েছে? সে বলল: আমার অবস্থা, আমি ঋতুমতী হয়ে গেছি, অথচ মানুষেরা হালাল হয়ে গেছে আমি এখনো হালাল হয় নি এবং তওয়াফও করি নি, মানুষেরা এখন হজে যাচ্ছে। তিনি বললেন: এটা এমন বস্তু, যা আল্লাহ আদমের মেয়েদের ওপর অবধারিত করে দিয়েছেন। অতএব, তুমি গোসল কর, অতঃপর তালবিয়াহ পাঠ কর। তিনি তাই করলেন এবং হজের প্রত্যেক স্থানে অবস্থান করলেন, যখন পবিত্র হলেন তখন কা‘বা ও সাফা-মারওয়া প্রদক্ষিণ করলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন: তুমি তোমার হজ ও উমরা উভয়টা থেকে পবিত্র হয়ে গেছো”।[4]
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম ‘তাহযীবুস সুনান’: (২/৩০৩) গ্রন্থে বলেন: সহীহ ও স্পষ্ট অর্থ প্রদানকারী হাদীস থেকে প্রমাণিত যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা প্রথম উমরার ইহরাম বাঁধেন, অতঃপর যখন তিনি ঋতুমতী হন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হজের ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেন, এভাবে তিনি কারিন হন, (অর্থাৎ কেরান হজ আদায়কারী)। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন: “হজ ও উমরার জন্য তোমার (একবার) কাবার তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া প্রদক্ষিণ করাই যথেষ্ট”।[5] সমাপ্ত।
[2] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭৪৪
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১১; নাসাঈ, হাদীস নং ২৭৬৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭৮২; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯৬৩; আহমদ: (৬/২৭৩)
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৬৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২১৩; নাসাঈ, হাদীস নং ২৭৬৩; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭৮৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩০৭৪
[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৮৯৭