বাইবেলের প্রথম পুস্তক Genesis। বাংলায় আদিপুস্তক বা পয়দায়েশ। এ পুস্তকের ১৭ অধ্যায়ের ২০ শ্লোকের বর্ণনায় ঈশ্বর আব্রাহামকে বলেন:
‘‘আর ইসমাইলের বিষয়েও তোমার মুনাজাত শুনলাম; দেখ, আমি তাকে দোয়া করলাম (KJV: I have blessed him, RSV: I will bless him) এবং তাকে ফলবান করে তার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করব (will multiply him exceedingly); তা থেকে বার জন বাদশাহ উৎপন্ন হবে ও আমি তাকে বড় জাতি করব (I will make him a great nation)।’’ (মো.-১৩)
মুসলিম পণ্ডিতরা তৌরাতের এ বক্তব্যকে মুহাম্মাদ (ﷺ) বিষয়ক অন্যতম ভবিষ্যদ্বাণী বলে গণ্য করেন। হিব্রু ভাষায় ‘বড় জাতি’ বোঝাতে ‘লুগাই গাদূল’ এবং ‘অতিশয়’ বলতে ‘বিমাদমাদ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। উভয় শব্দের সাংখ্যিক মান ‘মুহাম্মাদ’ শব্দের সাংখ্যিক মানের সমান। ইহুদী পন্ডিতরা পুরাতন নিয়মের অনেক ভবিষ্যদ্বাণীর অর্থ অক্ষরগুলোর সাংখ্যিক মান দিয়ে নির্ণয় করতেন। এজন্য অনেক ইহূদী পন্ডিত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরে জানিয়েছেন যে, তাওরাতের এ কথাটা মুহাম্মাদ (ﷺ) বিষয়ক ভবিষ্যদ্বাণী বলে তাঁরা নিশ্চিত জানতেন। স্যামুয়েল (Samau'al al-Maghribi) বা সামাওআল বিন ইয়াহিয়া (৫৭০ হি/ ১১৭৫ খ্রি) ছিলেন ৬ষ্ঠ হিজরী/ দ্বাদশ খ্রিষ্টীয় শতকের প্রসিদ্ধ ইহুদি বিজ্ঞানী, গণিতবিদ ও জ্যেতির্বিদ (https://en.wikipedia.org/wiki/Al-Samawal_al-Maghribi)। তিনি তাঁর রচিত ‘ইফহামুল ইয়াহুদ’ নামক পুস্তকে বিষয়টা আলোচনা করেছেন।[1]
উপরের বিষয়টা বাদ দিলেও আক্ষরিকভাবেই বাইবেলের উপর্যুক্ত বক্তব্য মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর আগমনের সুসংবাদ। কারণ এখানে ইসমাঈলের (আ) প্রশংসা ও মর্যাদা বৃদ্ধির সুসংবাদ দিয়ে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাকে অতিশয় বৃদ্ধি করবেন এবং বড় জাতি করবেন। এদ্বারা কখনোই স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধি বোঝানো হয়নি। কারণ স্বাভাবিক বংশবৃদ্ধিতে কোনো মর্যাদা নেই। সকল মানুষেরই বংশবৃদ্ধি হয়। নিঃসন্দেহে এখানে বিশেষ মর্যাদাময় বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। ইসমাঈল (আ)-এর উত্তরপুরুষ মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর আগে ইসমাঈলের বংশধর ইতিহাসে বা মানব সভ্যতায় কোনো বিশেষ বৃদ্ধি বা ‘বড় জাতি’ হিসেবে প্রসার লাভ করেননি। মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর মাধ্যমেই এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়েছে। তাঁর মাধ্যমেই ইসমাঈলের (আ) বংশ ‘অতিশয় বৃদ্ধি’ পেয়েছে এবং বিশ্ব সভ্যতায় ‘বড় জাতি’ (great nation) হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।