বাইবেলে নারী ও পুরুষের যৌন অঙ্গসমূহের উল্লেখ ব্যাপক। বর্তমানে বাইবেল অনুবাদকরাও এগুলোকে অশালীন বলে গণ্য করে অনুবাদ থেকে তা বাদ দিচ্ছেন। যেমন: ‘‘তারা সিন্দুকটি সেখানে নিয়ে গেলে পর মাবুদ সেই শহরের বিরুদ্ধে হাত উঠালেন।... তিনি শহরের ছোট-বড় সব লোককে আঘাত করলেন, আর তাতে সকলের ‘গোপন অঙ্গে’ সেই টিউমার রোগ হল (they had emerods in their secret parts)। (১ শামুয়েল ৫/৯)। উল্লেখ্য যে, ‘গোপন অঙ্গ’ কথাটুকু বাংলা অনুবাদে নেই। তবে ইংরেজিতে বিদ্যমান। বাইবেল সমালোচকরা বলেন যে, বাইবেলের ঈশ্বর শত্রুদের আক্রমণের ক্ষেত্রেও ‘গোপন অঙ্গ’ পছন্দ করেন।
নারীদের গুপ্তাঙ্গ অনাবৃত করা, স্তন ছেড়া, ধর্ষণ করা ইত্যাদি শব্দ বাইবেলে বারংবার ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোর অশোভনীয়তার কারণে কোনো কোনো আধুনিক সংস্করণ বা অনুবাদে এগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে বা অর্থ পরিবর্তন করা হচ্ছে।
যেমন, যিশাইয় ৩/১৭ ‘‘KJV:Therefore the Lord will smite with a scab the crown of the head of the daughters of Zion, and the Lord will discover their secret parts. RSV: the Lord will lay bare their secret parts: অতএব প্রভু সিয়োনের কন্যাগণের মাথায় ঘা দিয়ে আঘাত করে টাক পড়াবেন এবং সদাপ্রভু তাদের গুপ্তাঙ্গ অনাবৃত করবেন।’’ কেরির অনুবাদ: ‘‘অতএব প্রভু সিয়োনের কন্যাগণের মস্তক টাকপড়া করিবেন, ও সদাপ্রভু তাহাদের গুহ্য স্থান অনাবৃত করিবেন।’’
বাইবেল ২০০০ ও কিতাবুল মোকাদ্দস-০৬: ‘‘সেইজন্য সদাপ্রভু/ মাবুদ সিয়োনের স্ত্রীলোকদের মাথা ঘা হতে দেবেন আর তাতে টাক পড়াবেন।’’ কিতাবুল মোকাদ্দস-১৩: ‘‘‘‘অতএব প্রভু সিয়োনের কন্যাদের মাথা কেশহীন করবেন ও মাবুদ তাদের মাথায় টাক পড়াবেন।’’ জুবিলী বাইবেলও শেষ বাক্যটি বাদ দিয়েছে।
যিশাইয় ১৩/১৬: “Their children also shall be dashed to pieces before their eyes; their houses shall be despoiled and their wives ravished/raped.” কেরি: ‘‘তাহাদের চক্ষুর সামনে তাহাদের শিশুগণকে আছড়ান যাইবে, তাহাদের গৃহ লুণ্ঠিত হইবে এবং তাহাদের স্ত্রীগণ বলাৎকৃত হইবে।’’ কি. মো.-০৬: ‘‘স্ত্রীদের ধষর্ণ করা হবে।’’ জুবিলী বাইবেল: ‘‘তাদের বধুরা অসম্মানের বস্ত্ত হবে।’’
বাহ্যত মূল ‘ravish/rape’ অর্থাৎ ধর্ষণ শব্দটার মধ্যে যে অশোভনতা বিদ্যমান তা সহজ করতেই ‘অসম্মান’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ঈশ্বর ‘ধর্ষণ’ (ravish/rape) শব্দের বদলে ‘অসম্মান’ (dishonoured) শব্দ ব্যবহার করলেন না কেন? পবিত্র পুস্তকের শোভনীয়তা ও সর্বজনীনতার জন্য সেটাই কি প্রত্যাশিত ছিল না? অথবা আরো কোনো সুন্দর ভাষায় কি এ অর্থ প্রকাশ করা যেত না?
ঈশ্বরের অবাধ্যতার বর্ণনায় বাইবেল রূপকার্থে নারী-পুরুষের দৈহিক সম্পর্ক, গুপ্তাঙ্গ ও ব্যভিচারের সময় নারীপুরুষের কর্মকাণ্ডর খোলামেলা আলোচনা করেছে, যা অনেকটা অশ্লীল চলচ্চিত্রের মতই। উল্লেখ্য যে, মূল হিব্রু বা গ্রিকের অশ্লীলতার ভয়াবহতা ইংরেজি অনুবাদে যেমন সুস্পষ্ট বাংলা অনুবাদে তেমন নয়। শব্দ পরিবর্তন বা বিয়োজনের মাধ্যমে অর্থ অস্পষ্ট করা হয়েছে। তারপরও কয়েকটা নমুনা দেখুন:
‘‘তুমি বৃদ্ধি পাইয়া বড় হইয়া উঠিলে, পরম শোভা প্রাপ্ত হইলে, তোমার স্তনযুগল পীন ও কেশ দীর্ঘ হইল; কিন্তু তুমি বিবস্ত্রা ও উলঙ্গিনী ছিলে।’’ কেরি। মো.-০৬: ‘‘তুমি বেড়ে উঠে কিশোরী হলে, তোমার বুক গড়ে উঠল, লোম গজাল, কিন্তু তুমি উলংগিনী ও কাপড় ছাড়াই ছিলে।’’ (যিহিষ্কেল/ ইহিস্কেল ১৬/৭)
‘‘যখন তুমি ছিলে উলংগিনী এবং খালি গায়ে নিজের রক্তের মধ্যে ছটফট করছিলে। ... জেনার কাজে তুমি তোমার লজ্জাস্থান খুলে দিয়ে তোমার প্রেমিকদের কাছে তোমার উলংগতা প্রকাশ করেছ... তাদের সামনেই তোমার সব কাপড় খুলে ফেলব যাতে তারা তোমার উলংগতা দেখতে পায়... তোমাকে একেবারে উলংগ করে রেখে যাবে।’’ (যিহিষ্কেল/ ইহিস্কেল ১৬/২২, ৩৬, ৩৭, ৩৯)
‘‘তুমি যে দশটা শিং দেখেছ সেগুলো আর সেই জন্তুটা সেই বেশ্যাকে ঘৃণা করবে। তারা তাকে ধ্বংস ও উলংগ করবে এবং তার মাংস খাবে; তারপর তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে।’’ (প্রকাশিত কালাম/ ১৭/১৬)
মুখ পর্যন্ত কাপড় তুলে পুরো দেহ উলঙ্গ করে প্রদর্শনী করানোর বর্ণনা দেখুন: ‘‘আমি তোমার বিরুদ্ধে; আমি মুখ পর্যন্ত তোমার কাপড় উঠাব। তোমার উলঙ্গতা আমি জাতিদেরকে দেখাব আর রাজ্যগুলোকে দেখাব তোমার লজ্জা।’’ (নাহূম ৩/৫)
পাঠক উপরের দৃশ্যগুলো কল্পনা জগতে এঁকে দেখতে থাকুন! মুখ পর্যন্ত কাপড় তুলে একজন মহিলাকে উলঙ্গ করে প্রদর্শনী করা হচ্ছে! পীনোন্নত নগ্ন স্তন ও দীর্ঘ কেশ নিয়ে উলঙ্গ ঘুরে বেড়ানো কিশোরী!.... একজন বেশ্যাকে মেরে মাংস খাওয়ার আগে তাকে উলঙ্গ করা হচ্ছে! পাপী নারীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তাকে উলঙ্গ করা কি এতই জরুরি? উলঙ্গ না করে মাংস খেলে বা আগুনে পুড়ালে কি শাস্তি হতো না?
উল্লেখ্য যে, এভাবে শাব্দিক বা রূপক অর্থে ব্যভিচার, ব্যভিচারিণী, বেশ্যা, বেশ্যাগিরি, স্তন, উলঙ্গ হওয়া, ধর্ষণ, বিষ্ঠা, মল, মূত্র ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার বাইবেলের মধ্যে ব্যাপক। পাঠক নিম্নের শ্লোকগুলো ইংরেজি ও বাংলা মিলিয়ে দেখতে পারেন: বিলাপ/ মাতম ৪/২১; যিহিস্কেল ১৬/২৮; ২৩/৩৪; হোশেয় ১/২; ২/২; ২/৩; ৪/১২; ৬/১০; ৯/১; ১৩/১৬; অমোষ ২/১৬; মিখা ১/৮; ৩/২-৩; নাহূম ৩/৫; হাবাক্কুক ২/১৫; মালাখি ২/৩; মার্ক ১৪/৫১-৫২...।
এ জাতীয় বাক্য ও শব্দ যদি কোনো সাহিত্য, কাব্য বা অন্য কোনো ধর্মের গ্রন্থে থাকে তবে যে কোনো ধার্মিক খ্রিষ্টান তাতে আপত্তি করবেন, অপছন্দ করবেন এবং নিজের সন্তান বা প্রিয়জনদেরকে তা পড়তে দিতে চাইবেন না। কিন্তু বাইবেলের ক্ষেত্রে তিনি কী বলবেন?