বাইবেল থেকে জানা যায় যে, হারোণ বা হারুন (আ.) নবী ছিলেন। ঈশ্বর তাঁর সাথে কথা বলতেন। এবং শরীয়তের বিভিন্ন বিধান তাঁর উপর নাযিল করতেন।
(ক) কখনো ঈশ্বর তাঁদের উভয়ের সাথে কথা বলতেন: ‘‘সদাপ্রভু মোশি ও হারোণের সাথে কথা বলে বললেন (And the LORD spake unto Moses and unto Aaron, saying. কেরির অনুবাদ: সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন/ কি. মো.-১৩: মাবুদ মূসা ও হারুনকে বললেন।’’ (যাত্রাপুস্তক/হিজরত ৬/১৩; ৭/৮; লেবীয়১৪/৩৩; গণনাপুস্তক/ শুমারী ২/১; ৪/১; ৪/১৭; ১৪/২৬; ১৬/২০; ১৯/১)
‘‘আর মাবুদ মূসার ও হারুনের সঙ্গে আলাপ করলেন এবং বনি- ইসরইলদের মিসর দেশ থেকে বের করে আনবার জন্য বনি-ইরাইলদের কাছে এবং মিসরের বাদশাহ ফেরাউনের কাছে তাঁর বক্তব্য জানিয়ে দিতে তাঁদেরকে হুকুম দিলেন।’’ (হিজরত/ যাত্রাপুস্তক ৬/১৩, মো.-১৩)
(খ) কখনো ঈশ্বর সরাসরি এককভাবে হারোণের সাথে কথা বলতেন। ‘‘সদাপ্রভু হারোণকে কহিলেন/ মাবুদ হারুনকে বললেন (the LORD said unto Aaron)’’ (যাত্রাপুস্তক/ হিজরত ৪/২৭; গণনা পুস্তক/ শুমারী ১৮/১, ৮, ২০) বস্ত্তত গণনা পুস্তকের ১৮ অধ্যায়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সদাপ্রভু ঈশ্বর সরাসরি হারোণের সাথে কথা বলেছেন এবং শরীয়তের বিভিন্ন বিধান তাঁর কাছেই নাযিল করেছেন।
বাইবেলের এ সকল বক্তব্য নিশ্চিত করে যে, ঈশ্বর হারোণকে স্বতন্ত্রভাবে নুবুওয়াত প্রদান করেছেন। এছাড়া মোশির সাথে যৌথভাবেও তাঁর প্রতি ওহী বা ভাববাণী প্রদান করেছেন। মোশির ন্যায় হরোণকেও তিনি ভাববাদী ও প্রেরিত হিসেবে (নবী ও রাসূল) হিসেবে ফরৌণ এবং ইস্রায়েল-সন্তানদের নিকট প্রেরণ করেছিলেন। যাত্রা পুস্তক ভাল করে পাঠ করলে পাঠক জানতে পারবেন যে, ফরৌণের বিরুদ্ধে অলৌকিক চিহ্নসমূহের অধিকাংশই হারোণের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছিল।
বাইবেলের বর্ণনায় ঈশ্বরের ভাববাদী হারোণ একটা বাছুরের প্রতিমা তৈরি করেন এবং তার পূজার ব্যবস্থা করেন। যাত্রাপুস্তক/ হিজরত ৩২ অধ্যায়ে এ ‘কাহিনীটি’ উল্লেখ করা হয়েছে। কাহিনীটির শুরু নিম্নরূপ: ‘‘পর্বত থেকে নামতে মূসার বিলমব হচ্ছে দেখে লোকেরা হারুনের কাছে একত্র হয়ে বললো, উঠুন, আমাদের অগ্রগামী হবার জন্য আমাদের জন্য দেবতা তৈরি করুন, কেননা যে মূসা মিসর দেশ থেকে আমাদেরকে বের করে এনেছেন, সেই ব্যক্তির কি হয়েছে তা আমরা জানি না। তখন হারুন তাদেরকে বললেন, তোমরা নিজ নিজ স্ত্রী ও পুত্রকণ্যার কানের সোনার গহনা খুলে আমার কাছে আন। তাতে সমস্ত লোক তাদের কান থেকে সোনার সমস্ত কু-ল খুলে হারুনের কাছে আনল। তখন তিনি তাদের হাত থেকে তা গ্রহণ করে শিল্পাস্ত্রে গঠন করলেন এবং একটা ছাঁচে ঢালা বাছুর নির্মাণ করলেন। তখন লোকেরা বলতে লাগল, হে ইসরাইল, এই তোমার দেবতা, যিনি মিসর দেশ থেকে তোমাকে বের করে এনেছেন। আর হারুন তা দেখে তার সম্মুখে একটা কোরবানগাহ্ তৈরি করলেন এবং হারুন ঘোষণা করে বললেন, আগামীকাল মাবুদের উদ্দেশে উৎসব হবে। আর লোকেরা পরদিন প্রত্যুষে উঠে পোড়ানো-কোরবানী করলো এবং মঙ্গল-কোরবানী আনলো; আর লোকেরা ভোজন-পান করতে বসল, পরে ক্রীড়া করতে উঠলো।’’ (যাত্রাপুস্তক/ হিজরত ৩২/১-৬, মো.-১৩)
এভাবে হারোণ বাছুরের প্রতিমা নির্মাণ করেন, সেটার পূজার নিমিত্ত তিনি কোরবানগাহ নির্মাণ করেন এবং এ উপলক্ষ্য উৎসবেরও ঘোষণা দেন। এভাবে তিনি বাছুরের মূর্তি পূজা করেন এবং বনি-ইসরাইলদের তা পূজা করতে প্ররোচিত করেন। বাছুর পূজার কারণে কয়েক হাজার বনি-ইসরাইলকে হত্যা করা হয়। (যাত্রাপুস্তক ৩২/২৮) তবে হারোণকে শাস্তি দেওয়া হয়নি!