‘পবিত্র আত্মা’ বা ‘পাক-রূহ’ বাইবেলে বহুল ব্যবহৃত শব্দ। পবিত্র আত্মা বা পাক রূহ ঈশ্বরের নিকট থেকে এসে মানুষকে ভাল প্রেরণা দান করেন। খ্রিষ্টধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে ‘পবিত্র আত্মা’ একজন ঈশ্বর। ঈশ্বর বা পিতা ঈশ্বর, পুত্র ঈশ্বর ও ‘পাক-রূহ’ ঈশ্বর এ তিনজন ঈশ্বর মিলে এক ঈশ্বর। তবে বাইবেলের বর্ণনায় ঈশ্বরের ‘মন্দ আত্মা’ বা ‘দুষ্ট আত্মা’ও আছে, যাকে ‘অপবিত্র আত্মা’ বা ‘নাপাক রূহ’ বলা যেতে পারে। ঈশ্বরের পক্ষ থেকে এসে তিনি মানুষদেরকে অপবিত্র প্রেরণা দেন।
পরবর্তী পরিচ্ছেদে আমরা দেখব যে, শৌল বা তালুত বাইবেলের একজন প্রসিদ্ধ নবী এবং ঈশ্বরের অভিষিক্ত বা ‘মসীহ’ (খ্রিষ্ট) ছিলেন। ঈশ্বর তাঁর নিকট পবিত্র আত্মা প্রেরণ করেন। এরপর ঈশ্বর তাঁর উপর অসন্তুষ্ট হন এবং তাঁর নিকট ‘মন্দ আত্মা’ বা অপবিত্র-আত্মা প্রেরণ করেন। বাইবেলের বর্ণনা নিম্নরূপ:
(১) ‘‘তখন সদাপ্রভুর আত্মা (the Spirit of the LORD; কি. মো.: মাবুদের রূহ) শৌলকে ত্যাগ করিয়াছিলেন, আর সদাপ্রভু হইতে এক দুষ্ট আত্মা (an evil spirit from the LORD; কি. মো.: মাবুদের কাছ থেকে এক খারাপ রূহ) আসিয়া তাঁহাকে উদ্বিগ্ন করিতে লাগিল।’’ (১ শমূয়েল ১৬/১৪)
(২) ‘‘ঈশ্বরের কাছ থেকে যখন সেই মন্দ আত্মা যখন শৌলের উপর আসত তখন দায়ূদ তাঁর বীণা বাজাতেন। এতে শৌলের ভাল লাগত এবং তিনি শান্তি পেতেন, আর সেই মন্দ আত্মাও তাঁকে ছেড়ে চলে যেত।’’ (১ শমূয়েল ১৬/২৩: বা-২০০০)
(৩) ‘‘পরে মাবুদের কাছ থেকে একটা খারাপ রূহ (the evil spirit from the LORD: মাবুদ থেকে খারাপ রূহটি) তালুতের উপর আসল। তালুত তখন তাঁর ঘরে বসে ছিলেন এবং তাঁর হাতে একটা বর্শা ছিল, আর দাউদ বীণা বাজাচ্ছিলেন। তিনি বর্শা দিয়ে দাউদকে দেয়ালে গেঁথে ফেলবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু দাউদ তাঁর সামনে থেকে সরে গেলেন বলে বর্শাটা দেয়ালে ঢুকে গেল। সেই রাতে দাউদ পালিয়ে রক্ষা পেলেন। দাউদের উপর নজর রাখবার জন্য তালুত তাঁর বাড়ীতে লোক পাঠিয়ে দিলেন যাতে পরের দিন সকালে তাঁকে হত্যা করা যায়...।’’ (১ শমূয়েল ১৯/৯-১১, মো.-০৬)
বাইবেলের এ গ্রন্থে এরপর দাউদকে হত্যার জন্য শৌল বা তালুতের ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র, প্রাণান্তকর চেষ্টা ও ব্যাপক গণহত্যার বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টা বড়ই জটিল! তালুত একজন ‘নবী’ ও ‘মসীহ’। তিনি ঈশ্বরের আত্মা বা ‘পবিত্র আত্মা’ লাভ করেছেন। আবার ঈশ্বরই তাঁর মসীহ ও নবীকে খারাপ রূহ (অপবিত্র আত্মা বা নাপাক রূহ) প্রদান করছেন। ঈশ্বর থেকে আগত খারাপ রূহের প্রেরণায় তিনি নির্মম হত্যা ও গণহত্যা চালাচ্ছেন। পরবর্তী বর্ণনায় দেখা যায় যে, এরই ফাঁকে ফাঁকে আবার তিনি পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছেন। একজন নবী ও মসীহ যদি যে কোনো সময় খারাপ আত্মায় পূর্ণ হতে পারেন তবে পাক কিতাব, নবী, মসীহ ও প্রেরিতদের কথা ও কর্মের উপর আর কিভাবে বিশ্বাস করা যায়। তাঁদের কোন্ কথা পবিত্র আত্মায় এবং কোন কথা মন্দ আত্মায় তা-ই বা আমরা বুঝব কেমন করে?
সর্বোপরি, আমরা দেখছি, ঈশ্বর যেমন ‘পাক রূহ’ প্রেরণ করেন তেমনি ‘নাপক রূহ’-ও প্রেরণ করেন। দুটোই ঈশ্বর থেকে আগমন করেন। ‘পাক-রূহ’ ঈশ্বরের অংশ ও ঈশ্বর হলেন, অথচ দুষ্ট আত্মা (নাপাক রূহ) ঈশ্বরত্ব পেলেন না কেন তা বোধগম্য নয়।