মথি উল্লেখ করেছেন যে, যীশুর সাহাবী ঈস্করিয়োতীয় এহুদা (Judas Iscariot) ত্রিশ রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে যীশুকে ইহুদিদের হাতে সমর্পণ করেন। এরপর অনুশোচনা করে উক্ত মুদ্রাগুলো মন্দিরের মধ্যে ফেলে দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে যাজকরা মুদ্রাগুলো মন্দিরের ভাণ্ডারে রাখা অনুচিত মনে করে বিদেশীদের কবর দেওয়ার জন্য ‘কুম্ভকারের ক্ষেত্র’ নামে একটা জমিন ক্রয় করেন। মথি দাবি করেন যে, এর মাধ্যমে খ্রিষ্ট বিষয়ক পুরাতন নিয়মের একটা ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়। তিনি বলেন: ‘‘তখন ইয়ারমিয়া নবীর মাধ্যমে নাজেল হওয়া এই কালাম পূর্ণ হল, ‘আর তারা সেই ত্রিশটি রূপার মুদ্রা নিল; তা তাঁর মূল্য, যাঁর মূল্য নির্ধারিত হয়েছিল, বনি-ইসরাইলদের কতগুলো লোক যাঁর মূল্য নির্ধারণ করেছিল; তারা সেগুলো নিয়ে কুমারের ক্ষেতের (কুম্ভকারের ক্ষেত্রের) জন্য দিল, যেমন প্রভু আমার প্রতি হুকুম করেছিলেন। (And they took the thirty pieces of silver, the price of him that was valued, whom they of the children of Israel did value; And gave them for the potter’s field, as the Lord appointed me)।’’ (মথি ২৭/৯-১০, মো.-১৩)
বাইবেল বিশেষজ্ঞরা একমত যে, যিরমিয়ের পুস্তক তো দূরের কথা পুরাতন নিয়মের কোথাও এ কথাগুলো হুবহু নেই। এটা পবিত্র পুস্তকের নামে সুস্পষ্ট বিকৃতি।
যিরমিয়/ ইয়ারমিয়া ৩২/৬-৯ শ্লোকে যিরমিয় সদাপ্রভুর নির্দেশে ১৭ শেকল রৌপ্য দিয়ে একটা জমি কেনার কথা বলেছেন। কিন্তু সেখানে কুম্ভকারের কথা, ৩০ রৌপ্যমুদ্রার কথা বা মথির বক্তব্যে উদ্ধৃত কথাগুলো নেই।
সখরিয় বা জাকারিয়া নবীর পুস্তকের একটা বক্তব্যের সাথে মথির বক্তব্যের সামান্য কিছু মিল পাওয়া যায়। বক্তব্যটার বাংলা অনুবাদে অস্বচ্ছতা রয়েছে। এজন্য রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভার্শন থেকে ইংরেজি ভাষ্য লেখে কেরি ও কিতাবুল মোকাদ্দস-২০১৩ বঙ্গানুবাদের আলোকে তার অনুবাদ লেখছি:
“Then I said to them, ‘If it seems right to you, give me my sages; but if not, keep them’. And they weighedc out as my wages thirty shekels of silver.Then the LORD said to me, ‘Cast it into the treasury’- the lordly price at which I was paid off by them. So I took the thirty shelels of silvers, and cast them into the treasury in the house of the Lord.”
‘‘তখন আমি তাদের বললাম, যদি তোমাদের ভাল মনে হয়, তবে আমার বেতন দাও, নতুবা ক্ষান্ত হও। অতএব তারা আমার বেতন বলে ত্রিশটা রূপার মুদ্রা ওজন করে দিল। তখন মাবুদ আমাকে বললেন, সেটা ভা-ারে ফেলে দাও, বিলক্ষণ মূল্য, ওদের বিচারে আমি এরকম মূল্যবান; আর আমি সেই ত্রিশটা রূপার মুদ্রা নিয়ে মাবুদের গৃহে ভা-ারে ফেলে দিলাম।’’ (সখরিয়/ জাকারিয়া ১১/১২-১৩, মো.-১৩)
উল্লেখ্য যে, ট্রেজারি (treasury) বা ভা-ারকে কিং জেমস ভার্শনে ÔpotterÕ বলা হয়েছে। পটার অর্থ কুম্ভকার বা কুম্ভকারের বানানো পাত্র। সদাপ্রভুর গৃহের মধ্যে কুম্ভকারের কর্মশালা ছিল বলে কল্পনা করা যায় না। তবে এরূপ হতে পারে যে, সদাপ্রভুর গৃহের মধ্যে বিদ্যমান ভা-ারটা বা ট্রেজারিটা হয়ত কুম্ভকার বানানো ছিল।
সর্বাবস্থায়, মথির উদ্ধৃতির সাথে জাকারিয়া/ সখরিয়র এ বক্তব্যেরও কোনো মিল নেই। শুধু ‘ত্রিশ রৌপ্যমুদ্রা’ কথাটুকু এবং কোনো কোনো সংস্করণে ট্রেজারির বদলে লেখা ‘পটার’ শব্দটা ছাড়া উভয় উদ্ধৃতির মধ্যে আর কোনো মিল নেই। জাকারিয়া মাবুদের গৃহের মধ্যে বিদ্যমান ট্রেজারি অথবা কুমোরের পাত্রে ত্রিশ মুদ্রা রাখলেন। আর মথির ভাষ্যে তা বিকৃত হয়ে: ‘কুমোরের জমির জন্য তাদেরকে ত্রিশ মুদ্রা প্রদান করল’।
এভাবে আমরা দেখছি যে, দু’-একটা শব্দ ছাড়া বাক্য ও অর্থে সখরিয়ের বক্তব্যের সাথেও মথির বক্তব্যের কোনো মিল নেই। সুস্পষ্টভাবেই মথি নিজের বিশ্বাস বা ধর্মতত্ত্ব প্রমাণ করতে এখানে পবিত্র পুস্তকের বক্তব্য বিকৃত করেছেন বা পবিত্র পুস্তকের নামে অসত্য তথ্য প্রদান করেছেন। উপরন্তু তিনি সখরিয়ের বক্তব্যকে যিরমিয়ের বক্তব্য বলে উল্লেখ করেছেন। জাগতিক কোনো কর্মে তথ্যসূত্রের এরূপ ভুল লেখকের অযোগ্যতা প্রমাণ করে। তবে ঐশ্বরিক প্রেরণা বা পবিত্র আত্মার প্রেরণায় লেখা ধর্মগ্রন্থে এরূপ ভুল অচিন্তনীয়।