তৌরাতের প্রথম পুস্তক আদিপুস্তক (পয়দায়েশ) ৩৬/৩১: ‘‘বনি-ইসরাইলদের উপরে কোন বাদশাহ রাজত্ব করার আগে এঁরা ইদোম দেশের বাদশাহ ছিলেন।’’ এরপর পরবর্তী শ্লোকগুলোতে বনি-ইসরাইলদের প্রথম রাজা তালূত (শৌল)-এর রাজত্ব লাভের পূর্ব পর্যন্ত ইদোমের রাজাদের নাম-পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে।
ইহুদি-খ্রিষ্টান সকল বাইবেল বিশেষজ্ঞ একমত যে, এ কথাগুলো মোশি বা মূসা (আ.)-এর শতশত বছর পরে তৌরাতের মধ্যে সংযোজিত। ‘বনি-ইসরাইলদের উপরে কোনো বাদশাহ প্রথম রাজত্ব করেন’ মোশির প্রায় সাড়ে তিন শত বছর পর।
মোশির মৃত্যুর পরে দীর্ঘ প্রায় তিন শতাব্দী যাবৎ বনি-ইসরাইল বা ইসরাইল-সন্তানদের মধ্যে কোনো রাজা বা রাজত্ব ছিল না। নবী (ভাববাদী) বা বিচারকরা (কাজীরা) তাদেরকে পরিচালনা করতেন। সর্বশেষ বিচারকর্তা শামুয়েল নবীর সময়ে ইসরাইলীয়রা তাঁর নিকট একজন রাজা নিয়োগের জন্য আবেদন করেন। তখন কীশের পুত্র শৌল (তালুত) নামক এক ব্যক্তি রাজা মনোনীত হন। আনুমানিক খ্রি. পূ. ১০১৫/১০০০ অব্দে আমালিকা সম্প্রদায়ের রাজা জালুত (Golieth)-কে পরাজিত করে তালুত প্রথম ইসরাইলীয় রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন ও প্রথম ইসরাইলীয় রাজা বলে গণ্য হন। তাহলে মোশির লিখিত বলে কথিত ‘তৌরাতের’ প্রথম পুস্তকে তাঁর মৃত্যুর প্রায় সাড়ে তিন শত বছর পরের ঘটনাবলি লেখা হচ্ছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, পুরাতন নিয়মের আরেকটা পুস্তক ‘বংশাবলি’ বা খান্দাননামা (১ম ও ২য় খণ্ড)। এ দু’ খণ্ড পুস্তক খ্রিষ্টান বাইবেলে ১৩ ও ১৪ নং পুস্তক। আর ইহুদি বাইবেলে এদের অবস্থান একদম শেষে: ৩৮ ও ৩৯ নং। উইকিপিডিয়ার ‘Authorship of the Bible’ প্রবন্ধের ভাষ্যমতে এ পুস্তকটা মোশির প্রায় এক হাজার বছর পরে খ্রিষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে অজ্ঞাতনামা লেখক কর্তৃক রচিত।[1]
মজার বিষয় হল, আদিপুস্তক ৩৬/৩১-৩৯ শ্লোকগুলো অবিকল ১ বংশাবলির ১ম অধ্যায়ের ৪৩-৫০ শ্লোক। আমরা দেখলাম যে, বংশাবলি (খান্দাননামা) পুস্তকটা তালুতের মৃত্যুর প্রায় ছয় শত বছর পরে রচিত; কাজেই এ পুস্তকের মধ্যে এ বিষয় আলোচিত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তালুতের সাড়ে তিন শত বছর পূর্বে মোশির লেখা তৌরাতের প্রথম পুস্তকের মধ্যে এ কথা কিভাবে লেখা হল? এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে, তৌরাত নামে প্রচলিত পুস্তকও মোশির বা মূসা (আ.)-এর হাজার বছর পরের অজ্ঞাতনামা লেখকদের সংকলন।