শীয়াগণের মধ্যে আকীদা-বিশ্বাসে আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সবচেয়ে নিকটবর্তী ফিরকা যাইদী শীয়াগণ (الزيدية)। বর্তমান ইয়ামানের সংখ্যগরিষ্ঠ জনগণ এ মতের অনুসারী।
যাইদী শীয়াগণ নিজদেরকে ইমাম যাইদের (৭৯-১২২ হি) অনুসারী বলে দাবি করেন। যাইদ ছিলেন ১২ ইমামপন্থী শীয়াগণের তৃতীয় ইমাম যাইনুল আবিদীনের পুত্র ও ৪র্থ ইমাম মুহাম্মাদ বাকিরের ভাই। তিনি একজন বড় আলিম ছিলেন এবং বিশ্বাসে ও কর্মে আহলুস সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইমাম আবূ হানীফা ও অন্যান্য সকল প্রসিদ্ধ তাবিয়ী-তাবি-তাবিয়ী তাকে ভালবাসতেন ও শ্রদ্ধা করতেন। তিনি উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। উভয় বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে ১২২ হিজরীতে তিনি শহীদ হন এবং তার বাহিনী পরাজিত হয়। তবে তার অনুসারিগণ তাদের বিরোধিতা চালিয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে ইয়ামানে তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
যাইদী শীয়াগণের আকীদার সার-সংক্ষেপ নিম্নরূপ:
(১) ইমামত বা রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য অগ্রাধিকার ফাতিমার (রাঃ) বংশধরদের।
(২) ইমামত বা রাষ্ট্রক্ষমতার জন্য ওহীর বা পূর্ববর্তী ইমামের সুস্পষ্ট নির্দেশের প্রয়োজন নেই। বরং ফাতিমার (রাঃ) বংশের যে কোনো ব্যক্তির মধ্যে যদি যোগ্যতা থাকে এবং জনগণ তাকে নির্বাচিত করে তবে তিনিই ইমাম।
(৩) ফাতিমার বংশের যোগ্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে অন্য বংশের মানুষ বা কম যোগ্য মানুষ খলীফা হলে তা বৈধ হবে।
(৪) প্রথম দু খলীফা আবূ বাকর (রাঃ) ও উমার (রাঃ)-এর মর্যাদায় বিশ্বাস।
(৩) তৃতীয় খলীফা উসামন ইবনু আফ্ফানের (রাঃ) খিলাফতে বিশ্বাস। তবে তাদের অনেকে তাঁর কিছু ভুলভ্রান্তির কথা বলে।
(৪) সাধারণভাবে সকল সাহাবীকে ভাল বলা ও তদের গালি না দেওয়া। বিশেষত আলী (রাঃ) যাদের হাতে বাইয়াত হয়েছেন তাদেরকে ভালবাসা।
(৫) তারা তাকিয়্যাহ-তে বিশ্বাস করেন না।
(৬) তাদের মতে ইমাম গুপ্ত বা লুক্কয়িত থাকতে পারেন না।
(৭) তারা ইমামগণের ইসমাত বিশ্বাস করেন না। তবে কেউ কেউ আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) এ চারজনের ইসমাতে বিশ্বাস করেন।
(৮) ফিকহী বিষয়ে যাইদী ফিকহ হানাফী ফিকহের সাথে মিল রাখে।