মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর রিসালাতে বিশ্বাসের অর্থ ও বিষয়বস্ত্ত আমরা পূর্ববর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করেছি। মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ব্যক্তিত্ব, মর্যাদা, মহত্ব, রিসালাত, নুবুওয়াত, নুবুওয়াতের পূর্ণতা, প্রচার ও তাবলীগের পূর্ণতা, নুবুওয়াতের বিশ্বজনীনতা, স্থায়িত্ব, সমাপ্তি, মুক্তির একমাত্র পথ ইত্যাদি কোনো বিষয়ে অস্বীকার, অবিশ্বাস বা সন্দেহ এ পর্যায়ের কুফর। মুহাম্মাদ (ﷺ) যা কিছু বলেছেন তার কোনো বিষয়কে মিথ্যা বা সন্দেহযুক্ত বলে মনে করাও একই পর্যায়ের কুফর।
এ পর্যায়ের কুফর-এর দুটি দিক রয়েছে:
প্রথমত, মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ব্যক্তিত্বে সন্দেহ, দ্বিধা বা অভিযোগ
কেউ যদি মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সত্যবাদিতায়, নিষ্কলুষ চরিত্রে, নিষ্পাপ ব্যক্তিত্বে, ইসলাম প্রচারে তাঁর পূর্ণতায়, তাঁর ধার্মিকতায়, তাঁর পূর্ণ জ্ঞান ও বুদ্ধিতে বা অনুরূপ কোনো বিষয়ে সন্দেহ, আপত্তি বা অভিযোগ করে তবে তা এ পর্যায়ের কুফরী।
দ্বিতীয়ত, মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কথা বা শিক্ষায় অবিশ্বাস বা সন্দেহ
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর নুবুওয়াতের বিশ্বাসের অর্থই হলো তিনি যা বলেছেন বা শিক্ষা দিয়েছেন তা সবই সন্দেহাতীতভাবে সত্য বলে বিশ্বাস করা। তিনি বলেছেন বলে প্রমাণিত কোনো সংবাদ, শিক্ষা, কথা বা বক্তব্যকে অসত্য বলে মনে করা বা সন্দেহ করা এ পর্যায়ের কুফ্রী। মুহাম্মাদ (ﷺ) বলেছেন কিনা তা প্রমাণিত হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ হতে পারে। প্রমাণিত হওয়ার পরে কোনো মুমিন তার সত্যতায় সন্দেহ বা দ্বিধা করতে পারেন না।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কুরআন হিসেবে যা কিছু শিক্ষা দিয়েছেন বা কুরআন কারীমে যা কিছু বলা হয়েছে তা সবই মুতাওয়াতির পর্যায়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। অনুরূপভাবে মুতাওয়াতির হাদীসে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা সন্দেহাতীতভাবে তাঁর বক্তব্য বা শিক্ষা হিসেবে প্রমাণিত। আরকানুল ঈমান ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি সবই এই পর্যায়ের। খাবারু ওয়াহিদ হিসেবে বর্ণিত বিষয়গুলি বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হলে তাও সাধারণভাবে বিশ্বাসের বিষয়বস্ত্ততে পরিণত হয়। তবে সাধারণভাবে খাবারু ওয়াহিদ পর্যায়ের সহীহ হাদীসে প্রমাণিত বিষয় অস্বীকার করলে তাকে বিভ্রান্ত বলা হয়, তবে কাফির বলা হয় না। এ বিষয়ে আমরা এ পুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে আলোচনা করেছি।
কুরআন অথবা সুন্নাত দ্বারা, বিশেষত মুতাওয়াতিরভাবে প্রমাণিত কোনো বিধান অস্বীকার করাও একই পর্যায়ের কুফ্রী। সালাত, যাকাত, সিয়াম ইত্যাদির ফরয হওয়া অস্বীকার করা, ব্যভিচার, চুরি, হত্যা ইত্যাদির হারাম হওয়া অস্বীকার করা, সালাতের, তাহারাত, রাক‘আত, সময়, সাজদা, রুকু ইত্যাদির পদ্ধতি অস্বীকার, ব্যতিক্রম করা ইত্যাদি সবই এ পর্যায়ের কুফর। তবে অজ্ঞতার কারণে অস্বীকার করলে তা ওযর বলে গণ্য হতে পারে। কোনো ইজতিহাদী বা ইখতিলাফী বিষয় অস্বীকার করলে তা কুফর বলে গণ্য হবে না।