ইবাদত শব্দটি আভিধানিকভাবে ‘আবদ’ বা ‘দাস’ শব্দ থেকে গৃহীত। দাসত্ব বলতে ‘উবূদিয়্যাত’ ও ‘ইবাদত’ দুটি শব্দ ব্যবহৃত হয়। উবূদিয়্যাত ব্যবহৃত হয় লৌকিক বা জাগতিক দাসত্বের ক্ষেত্রে। আর ‘ইবাদত’ বুঝানো হয় অলৌকিক, অজাগতিক বা অপার্থিব দাসত্বের ক্ষেত্রে। সকল যুগে সকল দেশের মানুষই জীবন, মৃত্যু ইত্যাদি অতিপরিচিত শব্দের মতই ‘ইবাদত’, উপাসনা, worship, veneration ইত্যাদি শব্দের অর্থ স্বাভাবিকভাবেই বুঝে। মানুষ অন্য মানুষের দাস হতে পারে বা দাসত্ব করতে পারে, তবে সে অন্য যে কোনো সত্তার ‘ইবাদত’ বা উপাসনা করে না। শুধু মাত্র যার মধ্যে অলৌকিক বা অপার্থিব ক্ষমতা আছে, ইচ্ছা করলেই মঙ্গল করার বা অমঙ্গল করার বা তা রোধ করার অলৌকিক শক্তি বা অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে তারই ‘ইবাদত’ করে।
প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ রাগিব ইস্পাহানী হুসাইন ইবনু মুহাম্মাদ (৫০২ হি) বলেন:
العبودية إظهار التذلل والعبادة أبلغ منها لأنها غاية التذلل ولا يستحقها إلا من له غاية الأفعال (الإفضال)
‘‘‘উবূদিয়াত’ (slavery, serfdom, bondage) হলো বিনয়-ভক্তি প্রকাশ করা। আর ‘ইবাদত’ (worship, veneration) এর চেয়েও অধিক গভীর অর্থজ্ঞাপক। কারণ ইবাদত হলো চূড়ান্ত বিনয়-ভক্তি-অসহায়ত্ব প্রকাশ, যিনি চূড়ান্ত কর্ম-ক্ষমতা ও দয়ার মালিক তিনি ছাড়া কেউ এই চূড়ান্ত বিনয়-ভক্তি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না।’’[1]
অন্যান্য আলিমও অনুরূপ সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তাদের ভাষায়:
العبادة على المعنى اللغوي غاية التذلل والافتقار والاستكانة
‘‘ইবাদতের আভিধানিক অর্থ হলো, চূড়ান্ত বিনয়-ভক্তি, অসহায়ত্ব ও মুখাপেক্ষিত্ব।’’[2]
আল্লামা ইবনু কাসীর (৭৭৪ হি) বলেন:
والعبادة في اللغة من الذلة ... وفي الشرع عبارة عما يجمع كمال المحبة والخضوع والخوف
‘‘আভিধানিকভাবে ইবাদত অর্থ ভক্তি-বিনয় বা অসহায়ত্ব। ... আর শরীয়তের পরিভাষায় পরিপূর্ণ ভালবাসা, ভক্তি, বিনয় ও ভীতির সমন্বিত অবস্থাকে ইবাদত বলা হয়।’’[3]
এভাবে আমরা দেখছি যে, পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও ভীতিময় চূড়ান্ত ভক্তিই ইবাদত। আর চূড়ান্ত বিনয়, অসহায়ত্ব ভক্তি প্রকাশ করে চূড়ান্ত ক্ষমতা ও করুণার অধিকারীর জন্য যে কর্ম করা হয় তা বিভিন্ন পর্যায়ের। তার কাছে যেমন প্রার্থনা করা হয় তেমনি তার প্রশংসাও করা হয়। সবই ইবাদত। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মানুষ যা কিছু করে সবই ইবাদত বলে গণ্য। এজন্য ইবাদতের ব্যাখ্যায় বলা হয়:
اسم جامع لكل ما يحبه الله ويرضاه من الأقوال والأعمال الظاهرة والباطنة
‘‘আল্লাহ ভালবাসেন এরূপ সকল কথা, বাহ্যিক কর্ম ও হার্দিক বা মানসিক কর্ম সব কিছুই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত।’’[4]
[2] আযীম আবাদী, আউনুল মা’বূদ ৪/২৪৭; মুবারকপূরী, তুহফাতুল আহওয়াযী ৯/২২০; মুনাবী, আব্দুর রাউফ, ফাইদুল কাদীর ৩/৫৪০।
[3] ইবনু কাসীর, তাফসীর ১/২৬।
[4] উসাইমীন, মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ, আল-কাওলুল মুফীদ ১/১৬।