আমরা ইতোপূর্বে বলেছি যে, মহান আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলি গাইবী বিষয়। মানুষ যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্বের বাস্তবতা অনুভব করতে পারে, কিন্তু যুক্তি বা বুদ্ধি দিয়ে তাঁর সত্তা ও গুণাবলির খুটিনাটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ এ বিষয়ে দর্শন, যুক্তি ও মানবীয় পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভর করে বিভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত হয়েছে। বিভিন্ন যুক্তিতর্কের ভিত্তিকে কেউ বলেছেন, আল্লাহর কোনো গুণ বা বিশেষণ থাকতে পারে না। কেউ বলেছেন, তাঁর অমুক গুণ থাকতে পারে, কিন্তু তমুক গুণ থাকতে পারে না বা অমুক নামে তাঁকে ডাকা যায় না। কুরআন কারীমে কাফিরদের এরূপ কিছু বিভ্রান্তির উল্লেখ করা হয়েছে। মক্কার কাফিরগণ আল্লাহকে একমাত্র স্রষ্টা ও প্রাতিপালক হিসেবে বিশ্বাস করলেও তাকে ‘রাহমান’ বা করুণাময় বলে বিশ্বাস করতে বা এ নামে ডাকতে অস্বীকার করত। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন:
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اسْجُدُوا لِلرَّحْمَنِ قَالُوا وَمَا الرَّحْمَنُ أَنَسْجُدُ لِمَا تَأْمُرُنَا وَزَادَهُمْ نُفُورًا
‘‘যখন তাদেরকে বলা হয় ‘সাজ্দাবনত হও রহমান-এর প্রতি’, তখন তারা বলে, ‘রাহমান আবার কি? তুমি কাউকে সাজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সাজদা করব?’ এতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।’’[1]
এ বিভ্রান্তি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় এ বিষয়ে ওহীর উপরে পরিপূর্ণ নির্ভর করা। কুরআন কারীমে বা সহীহ হাদীসে আল্লাহর বিষয়ে যে সকল বিশেষণ বা কর্মের গুণ আরোপ করা হয়েছে সেগুলিকে কোনোরূপ বিকৃতি, ব্যাখ্যা, তুলনা বা পরিবর্তন ছাড়াই বিশ্বাস করা।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
وَلِلَّهِ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
‘‘এবং আল্লাহরই নিমিত্ত উত্তম নামসমূহ, তোমরা তাঁকে সে সকল নামেই ডাকবে। যারা তাঁর নামসমূহ বিকৃত করে বা নামসমূহের বিষয়ে বক্রতা অবলম্বন করে তাদেরকে তোমরা বর্জন করবে। শীঘ্রই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের ফল প্রদান করা হবে।’’[2]
قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَنَ أَيًّا مَا تَدْعُوا فَلَهُ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى
‘‘বল, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর বা ‘রহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান কর সকল সুন্দর নামই তো তাঁর।’’[3]
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
اللَّهُ لا إِلَهَ إِلا هُوَ لَهُ الأَسْمَاءُ الْحُسْنَى
‘‘আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, সমস্ত উত্তম নাম তাঁরই।’’[4]
অন্য আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেছেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
‘‘কোনো কিছুই তাঁর সাথে তুলনীয় নয়, তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা।’’[5]
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন:
فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الأَمْثَالَ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لا تَعْلَمُونَ
‘‘তোমরা আল্লাহর জন্য উপমা বা তুলনা স্থাপন করবে না। নিশ্চয় আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।’’[6]
[2] সূরা (৭) আরাফ: ১৮০ আয়াত।
[3] সূরা (১৭) বানী ইসরাঈল: ১১০ আয়াত।
[4] সূরা (২০) তাহা: ৮ আয়াত।
[5] সূরা (৪২) শূরা: ১১ আয়াত।
[6] সূরা (১৬) নাহল: ৭৪ আয়াত।