প্রশ্ন-১০৬ : মুসলিম বিশ্বে বিশেষত আমাদের দেশে তাবলীগ জামাত এবং ইখওয়ানুল মুসলিমীনের মত ফিরকা থাকার হুকুম কী?

উত্তর : আমাদের দেশ, ওয়া লিল্লাহিল হামদ এদেশ একক জামাতের দেশ। এদেশের সকল শহর-নগর, গ্রাম-গঞ্জ সবই কুরআন সুন্নাহ দ্বারা পরিচালিত এবং প্রত্যেকেই পরস্পরের শুভাকাঙ্খী। এখানে সবাই একে অপরকে ভালোবাসে।

আমাদের জন্য ওয়াজিব হলো এ সকল বহিরাগত জামাতকে গ্রহণ না করা। তারা আমাদেরকে বিভক্ত, বিচ্ছিন্ন এবং বিপথগামী করতে চায়। তারা তাবলীগী, ইখওয়ানী ইত্যাদি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে। কেন এই বিভাজন? কেন এই দলাদলি?  এ কাজ তো আল্লাহর নিয়ামতরাজীকে অস্বীকার করার অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

{ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَاناً}

আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসা সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তার অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে। (সূরা আলি ইমরান আয়াত নং: ১০৩)

আমরা এক অভিন্ন জামাত। ঐক্য, সংহতি এবং সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণাদির উপর রয়েছি। সুতরাং আমরা কেন উত্তম ছেড়ে অনুত্তম গ্রহণ করতে যাব?

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে যে সম্মান-মর্যাদা, মাহাববাত-ভালোবাসা এবং বিশুদ্ধ পথ দ্বারা অনুগ্রহ করেছেন তা থেকে সরে গিয়ে আমাদেরকে বিভক্ত-বিচ্ছিন্ন করে, আমাদের মাঝে শত্রুতা ছড়িয়ে দেয় এমন ফিরকার সাথে যুক্ত হব কেন? এটা কখনও জায়েয নয়।

রিয়াদের কোন এক মাসজিদে তাওহীদ বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান কালে তাবলীগ জামা‘আতীদের যে তাওহীদ বিমুখতা ও তাওহীদের আলোচনার প্রতি অনীহা লক্ষ্য করেছি তা হলো তারা (তাবলীগীরা) মাসজিদে সমবেত ভাবে বসে ছিল। অতঃপর যখন তাওহীদের আলোচনা শুরু হলো তারা সবাই মাসজিদ থেকে বের হয়ে গেল। সেখানে আমার মত আরো অনেক শায়খ তাওহীদ বিষয়ে বক্তৃতা প্রদান করেছিলেন। তাদেরকে যারা তাওহীদের পথে আহবান করেন তারা তাদের (আহবানকারীদের) নিকট থেকে (শারঈ) কোন কিছুই গ্রহণ করে না। তবে হ্যাঁ, এটা শুধু তাদের বেলায়ই নয় বরং যারাই পরিকল্পিত ভ্রান্ত মানহাজে পতিত হয় তাদের কেউই সেখান থেকে উত্তরণের পথ গ্রহণ করতে চায় না। যদি তারা মূর্খতা বশতঃ সেখানে পতিত হতো তাহলে তাদের সঠিক পথে বা হিদায়াতের পথে ফিরে আসার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তারা তো পরিকল্পিতভাবে এবং তাদের অনুসরণীয় মানহাজের আলোকে পতিত হয়েছে সুতরাং তাদের মানহাজ পরিত্যাগ করে সহীহ মানহাজে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব নয়। কেননা তারা যদি তাদের ভ্রান্ত মানহাজ থেকে প্রত্যাবর্তন করে তাহলে তাদের বর্তমান জামাত টিকবে না। তারা এটা চায় না।

তাদের সাথে চলাফেরা করার পরে তাদের থেকে (তাওবাহ করে)  ফিরে এসে লিখিত কিতাব হলো শায়খ হামূদ ইবনে আব্দুল্লাহ আত-তুওয়াইজিরী (রহ.) কর্তৃক লিখিত ‘আল ক্বওলুল বালিগ ফিত তাহযির মিন জামা‘আতিত তাবলীগ’ এ বইটা সর্বশেষ লিখিত বই। এতে তাদের ভ্রান্তির  প্রতিটা দিকই সন্নিবেশিত রয়েছে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো ফিতনার উদ্ভব হলে দৃষ্টি অন্ধ হয়ে যায়। নতুবা মানুষ কীভাবে তাওহীদের উপর প্রতিপালিত হয়ে, তাওহীদ নিয়ে পড়াশোনা করে, তাওহীদ বুঝে-শুনেও তাদের দ্বারা ধোঁকাগ্রস্থ হতে পারে? কীভাবে তাদের সাথে বের হতে পারে?[1]

তারা কীভাবে তাদের পথে আহবান করে এবং তাদের বিরোধিতাকে প্রতিরোধ করে? এটা তো হিদায়াত প্রাপ্তির পরে ভ্রষ্ঠতা গ্রহণ এবং কল্যাণ দ্বারা অকল্যাণ গ্রহণেরই নামান্তর। আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট এর থেকে ক্ষমা ও মুক্তি কামনা করছি।

সকলের প্রতি আমার অনুরোধ হলো কেউ যেন তাদের সঙ্গী না হয়।


[1]. তারা কুরআন-সুন্নাহর প্রতি আহবান করে না। বরং তাদের শায়খ ইলিয়াসের প্রতি আহবান করে (আব্দুর রযযাক আফীফী, ফাতওয়া ১/১৭৪)।