প্রশ্ন-৭২ : বিশেষ করে সাউদী ‘আরবে সালাফে সালেহীনের মানহাজ বিরোধী কোন মানহাজ রয়েছে কী? যদি থেকে থাকে তাহলে সেই মানহাজের সাথে ও এর দাঈদের সাথে কেমন আচরণ করতে হবে?

উত্তর : আল-হামদুলিল্লাহ, আমাদের এই দেশ, সউদী আরবে সালাফে সালেহীনদের মানহাজ বিরোধী কোন মানহাজ নাই। এদেশ পুরোপুরি সালাফে সালেহীনের মানহাজের অনুসারী। তবে মাঝে মাঝে কতিপয় বহিরাগত ব্যক্তির কিছু (সালাফগণের বিরোধী) মানহাজের আমদানি করে থাকে।[1]

কখনও কখনও আমাদের কিছু যুবক তাদের মানহাজ সম্পর্কে অজ্ঞবাবশতঃ ঐলোকদের ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করে ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। আমাদের যুবকদের প্রতি আমার ওছীয়ত হলো তারা যেন এধরণের দাঈদের থেকে সতর্ক থাকে। তারা যেন বিকৃত আকীদা সম্পন্ন, জ্ঞান-গরীমার স্তর ও শিক্ষক সম্পর্কে জানা যায় না এমন দাঈদেরকে কোনরূপ অবকাশ না দেয়। আরবী প্রবাদ রয়েছে ‘‘সর্বহারা ব্যক্তি তোমায় কিছুই দিতে পারবে না।’’

এই দেশ এক সময় বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত ছিল। প্রত্যেক গ্রাম স্বতন্ত্র শাসনের অধীন ছিল। গ্রামগুলো পরস্পরে লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল।

আল্লাহ তা‘আলা শায়খুল ইসলাম মুজাদ্দিদ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) কে প্রেরণের মাধ্যমে এদেশ ও দেশবাসীদের উপর রহমাত নাযিল করলেন। শায়খ লোকজনকে শিরক, বিদআত এবং কুসংস্কার পরিত্যাগ করে তাওহীদ বা একত্বের ভিত্তিতে সহীহ দীনে ফিরে আসার দাওয়াত প্রদান করলেন।

আল্লাহ তা‘আলা আলি সা‘উদ শাসক পরিবারের উপরও রহমাত নাযিল করলেন। তারা একটা গ্রামেরই মাত্র শাসন করত। আল্লাহ তা‘আলা তাদের মর্যাদা সুমন্নত করলেন; তারা শায়খুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব (রহ.) এর দাওয়াতকে সাহায্য করলো। ফলে এ জিহাদে ইলম ও তরবারীর জিহাদ সমন্বিত হলো এবং আল-হামদুলিল্লাহ একপর্যায়ে পুরো দেশ শান্তি-শৃঙখলার চাদরে আচ্ছাদিত হয়ে গেল। দেশ থেকে সকল প্রকার জাহিলী অভ্যাস-রীতি-নীতি, অন্ধ অনুকরণ, শিরক, বিদআত এবং কুসংষ্কার বিদূরিত হলো। পুরো দেশ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেল। দেশবাসী ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হলো। সকল গ্রাম-শহর, নগর-বন্দর এক রাষ্ট্রের অধীনে অভিন্ন উম্মাহতে (জাতিতে) পরিণত হলো।[2]

আপনারা ভুলে যাবেন না যে শত্রুরা নির্মূল হয়ে যায়নি। বরং তারা ওৎ পেতে বসে আছে। তারা এই সমাজের মাঝে ভাঙন সৃষ্টি করতে চায়।

কিছু যুবকেরা যে নতুন নতুন মতাদর্শ গ্রহণ করেছে তারা সেগুলো বিসত্মৃতি ঘটানোর মাধ্যমে এই সমাজকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়। আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি তিনি যেন তাদেরকে সংশোধন করে দেন। তাদেরকে হিদায়াত দান করেন। তারা শুধু আমাদের ক্ষতিই করতে চায়। হে আল্লাহর বান্দাগণ, কেন তারা এরকম করে? আমরা সবাই কি অভিন্ন জামাতের অনুসারী নই? আমরা তাওহীদের (একত্বের) দীনের বা আক্বীদাতুত তাওহীদের অনুসারী নই? আমরা কি শান্তি ও নিরাপত্তায় বসবাস করছি না? আমরা এর অধিক আর কি চাই? আমরা কেন অনুপ্রবেশকারী মতবাদ-মতাদর্শ গ্রহণ করব? কেন গ্রহণ করব নাম-পরিচয়, ধর্ম ও ইলম সম্পর্কে জানা যায় না এমন ব্যক্তির কথা? কেন তাদের ভ্রান্ত কথায় আমাদের সহীহ আকীদা ও সহীহ মানহাজকে পরিত্যাগ করব? ভাইয়েরা আপনারা এসকল দলাদলি থেকে সতর্ক থাকুন এবং আপনাদের ভাই-বেরাদর সন্তানদেরকে সতর্ক করুন।

আমরা এক মানহাজ ও এক আকীদার ভিত্তিতে এক অভিন্ন উম্মাহ। ওয়া লিল্লাহিল হামদ। আমাদের দেশ এমন একটি দেশ যেখানে আল্লাহর শারী‘আত দ্বারা বিচার ফায়ছলা করা হয়ে থাকে।

আমি বলছি না যে আমরা সর্বদিক থেকে পরিপূর্ণ। আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। তবে ত্রুটির মাত্রা খুবই কম। আল-হামদুলিল্লাহ আমাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতু রসূলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বারা পরিচালিত। এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত পুরো দেশই ইসলামি দেশ। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার মানহাজও একই।

সুতরাং আমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মানহাজ ও আকীদা পরিত্যাগ করে কেন এই সকল মতবাদ মতাদর্শ গ্রহণ করতে যাব? তাদের সকল দলের অবস্থা হলো একদল অপর দলের বিরোধিতা করে। আমরা কেন তাদের কথায় আমাদের বাপ-দাদা, পূর্বসূরীগণ এবং আমাদের প্রজনম এবং আমাদের দেশ যে সহীহ মানহাজ ও সহীহ আকীদার উপর ছিল তা তাদের কথায় পরিত্যাগ করব? এটা কী নিয়ামত সমূহের কুফুরী করা বা অস্বীকার করা নয়?

আমরা কেন আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ করি না? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَاناً

 আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। তারপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসার সঞ্চার করেছেন। অতঃপর তার অনুগ্রহে তোমরা ভাই-ভাই হয়ে গেলে (সূরা আলি ইমরান ৩/১০৩)।

গত রাতের সাথে আজ রাত এবং গত দিনের সাথে আজ দিন কতই না সাদৃশ্যপূর্ণ। আমাদের উচিত হলো ইতিহাস উদঘাটন করে এবং (পূর্বসূরীদের) জীবন চরিত পড়ে জেনে নেওয়া যে আমরা আগে কি ছিলাম আর বর্তমানে কিসে পরিণত হয়েছি?


[1]. এর উদাহরণ হলো কছিম প্রদেশের মুহাম্মাদ সুরুর ইবনে নাইফ  যায়নুল আবিদীন, আছীর প্রদেশের আব্দুর রহীম আত-ত্বহহান, মুহাম্মাদ কুতুব এবং ইখওয়ানুল মুসলিমীনের অন্যান্য নেতা কর্মীরা। সাউদী শাসকবর্গ তাদের সাথে সদাচরণ করেছেন। বিনিময়ে তারা তাদের ভ্রান্ত মতাদর্শ দ্বারা আমাদের কিছু যুবককে বিভ্রান্ত করেছে। আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য এবং তাদের জন্য হিদায়াত কামনা করছি। আয় আল্লাহ, আমাদেরকে সালাফে সালেহীনের মানহাজের উপর অটল রাখো। আমীন। মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামিতার জন্যই আমরা তাদের মুখোশ উম্মোচন করি। যাতে সাধারণ জনগণ তাদের বক্তৃতা ও বই-পুস্তক দ্বারা ধোঁকাগ্রস্থ না হয়।

[2].  আমরা বর্তমানে সাউদী আরবে যে শান্তি-শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তায় বসবাস করছি তার তা পুরোপুরি আল্লাহর রহমাত এবং এ এর প্রতিষ্ঠাতা (রহ.) এর শারঈ বিন্যাস ও কিতাবুল্লাহ-সুন্নাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কায়িমে দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছে। পরবর্তী শাসকগণও এ ধারা অব্যাহত রেখেছেন। আয় আল্লাহ, আমাদের দীন, শান্তি-শৃঙ্খলা, এবং আমাদের নেতৃবৃন্দকে হিফাযত করুন। আমীন।।

আমাদের সমাজ ও এর শান্তি-শৃংখলা  বিরোধী মানহাজের লোকদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে। সালাফে সালেহীনের আকীদা বিরোধী লোকেরা আমাদের কিছু যুবকের মাঝে তাদের বিধ্বংসী আকীদা-বিশ্বাসের বিষ প্রবেশ করাচ্ছে। দুঃখের বিষয় হলো আমাদের কিছু যুবক তাদের আহবানে সাড়াও দিচ্ছে! তারা যে মতবাদ-মতাদর্শ অনুপ্রবেশ ঘটানোর অপচেষ্টা করছে তা হলো;

(ক) তাকফিরী মতবাদ বা শাসকদেরকে কাফির বলার মতবাদ। তারা শাসকদেরকে ত্বগূত বা আল্লাহদ্রোহী বলে জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়।

(খ) সালাফে সালেহীনের মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত আলিমদেরকে অপবাদ দেয়া। এমন ভাষায় তাদের সমালোচনা করা যা থেকে তারা মুক্ত। যেমন; তাদেরকে ‘দরবারী আলিম, হায়িয নিফাসের আলিম, আমলা, শাসকদের গোলাম, বাস্তবতাবোধহীন, মসনদী আলিম (চেয়ারের আলিম) বলা। এমনকি উসামা ইবনে লাদিন ও তার সমমনা কেউ কেউ তো আলিমদেরকে কাফির পর্যন্ত বলে।

(গ) তাদের স্ব-উদ্ভাবিত পন্থায় জিহাদ করা। কাফির, ত্বগূত ও ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা সংক্রান্ত দলীল প্রমাণাদির অপব্যাখ্যা করার মাধ্যমে মুসলিম-কাফির নির্বিশেষে সকল শাসকদের বিরূদ্ধে বিশৃঙ্খলা উসকে দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করা।