উত্তর : তারা প্রত্যেক জিনিসকে ভাগ করতে চায়; এমনকি তারা মুসলিম, মুসলিমদের গুণাবলি ইত্যাদির মাঝেও পার্থক্য করতে চায়। তাদের এই মত যে, আত-ত্বয়িফাহ আল-মানছুরাহ এবং আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু তা সহীহ নয়। বরং যারাই আত-ত্বয়িফাহ আল মানছুরাহ তারাই আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহ।[1]
প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলারই জন্য। নাজিয়াহ না হলে মানছুরাহ হতে পারবে না এবং মানছুরাহ না হলে নাজিয়াহ হতে পারবে না। একই জিনিসের দুইটি অবিচ্ছিন্ন গুণ।
এই পার্থক্যকরণ জাহিলদের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে অথবা আত-ত্বয়িফাহ আল-মানছুরাহ আন-নাজিয়াহর যুবকদের মাঝে ফাটল সৃষ্টির জন্য কোন উদ্দেশ্য পরায়ণ ব্যক্তি করে থাকে।[2]
[1]. হাদীছ বিশারদ ইমামগণের অভিমত হলো: আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহই হলো আত্ ত্বয়িফাহ আল মানছুরাহ, তারাই হাদীছের অনুসারী, তারাই সুন্নাহ এবং ছাহাবীদের জামাতের অনুসারী, তারাই সালাফী। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অনেক বিদ্বান এমত ব্যক্ত করেছেন। এখানে তাদের কিছু মত উল্লেখ করা হলো:
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল (রহ.) বলেন, ( وستفترق ... ) ‘‘অচিরেই আমার উম্মাত বিভক্ত হবে’’ হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘‘তারা যদি হাদীছের অনুসারী না হয়ে থাকে তাহলে আমার জানা নাই কারা আহলুল হাদীছ।’’ হাকিম, ‘মা‘রিফাতু ‘উলূমিল হাদীছ’ পৃ. ০৩ সহীহ সূত্রে বর্ণিত।
মুবারকপুরী তুহফাতুল আহওয়াযীর ভূমিকায় আবিল ইউমন ইবনে আসাকিরের একটি মত উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেন, ‘হাদীছের অনুসারীরা আনন্দের সাথে এ সুসংবাদ গ্রহণ করুক যে তারাই আল- ফিরকা আন-নাজিয়াহ।’
ইমাম তিরমিযী (রহ.) বলেন, لا تزال طائفة من أمتي আমার উম্মাহর একটি দল থাকবে...তিরমিযী হা/২২২৩ উল্লেখ করার পর বলেন ‘আমি ইমাম বুখারী (রহ.) কে বলতে শুনেছি, ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, আমি আলী ইবনু মাদিনী (রহ.) কে বলতে শুনেছি তারা হলো: আহলুল হাদীছ।
ইমাম বুখারী (রহ.) তার ‘খলক্বু আফ‘আলিল ‘ইবাদ’ নামক গ্রন্থের ৬১ নং পৃষ্ঠায় وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطاً আর এভাবেই আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী উম্মত বানিয়েছি আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণিত আবু সা‘ঈদ (রা.) এর হাদীছ উল্লেখ করে বলেন, এরা হলো হাদীছে বর্ণিত সেই لا تزال طائفة من أمتي ‘আমার উম্মাহর একটি দল থাকবে’ সেই দল।
ইবনু তাইমীয়া (রহ.) আত-ত্বয়িফাহ আল-মানছুরাহ ও আল ফিরকা আন নাজিয়াহর মাঝে কোন পার্থক্য করেননি। বরং তিনি আল-আকীদা আল-ওয়াসিত্বীয়্যাহ নামক কিতাবের প্রারম্ভে বলেছেন, আল্লাহর প্রশংসা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাত ও সালাম পাঠের পর পরবর্তী কথা হলো, এটা কিয়ামাত পর্যন্ত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহ আল-মানছুরাহর আকীদা। একই কথা উল্লেখ রয়েছে মাজমু‘ ফাতাওয়া ০৩/১২৯।
দলাদলি বিষয়ক হাদীছ উল্লেখ করার পর তিনি বলেছেন, তারাই হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত, তারাই আত-ত্বয়িফাহ আল-মানছুরাহ। মাজমু‘ ফাতওয়া ০৩/১৫৯। তিনি আরো বলেন, আমার কথা, আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহ (এমন ফিরকা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের গুণ বর্ণনার ক্ষেত্রে বলেছেন যে, তারা নাজাত বা মুক্তি প্রাপ্ত) এর আকীদা হলো নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ ও ছাহাবীদের আছার ভিত্তিক। যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার ছাহাবীদের অনুসরণ করে তারাই হলো আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহ। মাজমু‘ঊল ফাতওয়া। তিনি আরো বলেন, ‘এর দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায় যে, আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহ হওয়ার সবচেয়ে বেশি হকদার হলো হাদীছ ও সুন্নাহর অনুসারীরা।’ মাজমু‘উল ফাতওয়া ৩/৩৪৭।
[2]. জনৈক স্ব-দাবিতে ইসলামী বিদ্বান নিজের সময় নষ্ট করে যুবকদের চিন্তা-চেতনায় ফাটল সৃষ্টি করার জন্য আত-তায়িফাহ আল মানছুরাহ ও আল ফিরকা আন নাজিয়াহ এর মাঝে পার্থক্য বর্ণনা করে কিতাব রচনা করেছে। কিন্তু সে সক্ষম হয়নি এবং সক্ষম হবেও না কখনোও।
সে শায়খুল ইসলাম ইবনু তাইমীয়া (রহ.) এর নামে মিথ্যারোপ করে বলেছে যে, তিনি নাকি আল-ফিরকা আন-নাজিয়াহ আত ত্বয়িফাহ আল মানছুরাহর মাঝে পার্থক্য করেছেন! এই ফিরকার মত খণ্ডনে শায়খুল ইসলাম (রহ.) এর পূর্বোক্ত কওলই যথেষ্ট।
এখানেই শেষ নয়, শায়খ ইবনে বায (রহ.) এর সম্পর্কে অপবাদ আরোপ করার অপচেষ্টা করেছে। সে বলেছে তিনি নাকি আত-তায়িফাহ আল মানছুরাহ ও আল ফিরকা আন নাজিয়াহ এর মাঝে পার্থক্য করেছেন।
(শায়খ আব্দুল আযীয ইবনে বায এ বিষয়ে আমার সাথে একমত হয়েছেন। তিনি আমাকে অঙ্গীকার দিয়েছেন যে এ বিষয়ে একটি টীকা লিখবেন) তার একটি বক্তৃতার ক্যাসেট থেকে নেয়া। আলহামদুলিল্লাহ্, এরপর শায়খ ইবনে বায (রহ.) কে জিজ্ঞাসা করা হলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল যে তিনি তার সাথে একমত হননি।
প্রশ্নকারী: আপনি কী আত-তায়িফাহ আল মানছুরাহ ও আল ফিরকা আন নাজিয়াহ এর মাঝে পার্থক্য করেন?
শায়খ (রহ.) উত্তরে বলেন: আত-তায়িফাহ আল মানছুরাহই হলো আল ফিরকা আন নাজিয়াহ। দুটো একই জিনিস। এর মাঝে পার্থক্য কোন পার্থক্য নাই। এরা হলো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাত, এরাই হলো সালাফী।
প্রশ্নকারী জিজ্ঞাসা বলল, অমুকে বলছে আপনি নাকি পার্থক্য করার বিষয়ে তার সাথে ঐক্যমত পোষণ করেছেন? এটা কী সহীহ?
শায়খ (রহ.) জবাবে বলেন, না....না....সে ভুল বলেছে (তার রেকর্ড ক্যাসেট থেকে)।