এর অর্থ হলো, ইবাদাত সংশ্লিষ্ট ফিকহ । আর ‘ফিকহ’ শব্দের অর্থ হলো, সূক্ষ ও গভীর জ্ঞান । “ফিকহুল ইবাদাত' হলো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্র যেখানে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ | ভিত্তিগুলোর মধ্যকার নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এবং নামায শুদ্ধ হওয়ার পূর্ব শর্ত পবিত্রতা। অর্জন- ইত্যকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শরী'আতের মাসআলা-মাসায়েল বর্ণনার সমাহার। যেখানে রয়েছে সুক্ষাতি সুক্ষ গভীর জ্ঞানের আলোচনা-পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ যা একজন মুসলমানের প্রতিদিনের একান্ত আবশ্যকীয় দিক-নির্দেশনা । কিভাবে মানুষ শুদ্ধরূপে পবিত্রতা অর্জন করবে, সালাত আদায় করবে, সাওম পালন করবে, হজ্জ পালন ও যাকাত দিবে তার দলীলভিত্তিক আলোচনা ।
প্র: ইবাদাত কবুলের শর্ত কয়টি ও কী কী?
উ: ইবাদাত কবুলের শর্ত ৪টি, যথা:
১. ঈমান থাকা: অর্থাৎ কাফির ও মুশরিক থাকা অবস্থায় কোন ইবাদাত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি ঈমানের প্রতি সন্দেহ পোষণ করলে বা ঈমান ছুটে গেলে ইবাদাত কবুল হবে না।
২. ইখলাস: অর্থাৎ মুমিন ব্যক্তির প্রতিটি ভালো কাজ শুধুমাত্র আল্লাহ তা'আলাকে খুশি করার জন্য হতে হবে। অন্য কোন স্বার্থে তা করলে ইবাদাতের কাজটিও ইবাদাত হবে না। এমনকি আল্লাহও খুশি হবেন, সাথে দুনিয়াবী একটি স্বার্থ হাসিল হবে এ দুই নিয়ত একত্র। করলে এটিও ইবাদাত হিসেবে কবুল হবে না। সকল প্রকার ইবাদাত ও ভালো কাজ একমাত্র আল্লাহ তা'আলাকে খুশি করার নিয়তে করতে হবে । একেই বলা হয় ইখলাস।
৩. সুন্নাত তরীকা: জীবনের সকল কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র আমাদের নবী মুহাম্মাদ (স)-এর সুন্নত তরীকায় আদায় করতে হবে। তবেই এটি ইবাদাত বলে গণ্য হবে, নতুবা নয়। বিশুদ্ধ দলীল ছাড়া বা মনগড়া কিছুই করা যাবে না। পূর্ব থেকে চলে আসছে, রেওয়াজ আছে অথচ এর পক্ষে সহীহ শুদ্ধ দলীল নেই এমন কিছুই করা যাবে না। করলে তা ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে না। সাওয়াব তো হবেই না। টয়লেট ব্যবহার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত আপনি যে কাজটিই নবীজির (স) সুন্নত তরীকায় করবেন সেটিই ইবাদাত হয়ে যাবে এবং পরকালে এর সাওয়াব পাবেন ।
৪. শির্কমুক্ত থাকা: সর্বাবস্থায় আপনাকে শির্কমুক্ত থাকতে হবে। কারণ শির্ক করলে ইবাদাত বাতিল হয়ে যায় (সূরা ৩৯; যুমার ৬৫)। যে মুসলমান শির্ক করবে বেহেশত চিরকালের তরে তার জন্য হারাম হয়ে যায় । (সূরা ৫, মায়িদা ৭২; সূরা ২২, হজ্জ ৩১; সূরা ৪, নিসা ৪৮; সূরা ১২, ইউসুফ ১০৬)।
যেসব কাজ করলে বড় শির্ক হয় এর কিছু দৃষ্টান্ত নিচে দেওয়া হলো:
কবরে মৃত ব্যক্তির কাছে সাহায্য চাওয়া, কোন পীর মুর্শিদ বা কবরস্থ ব্যক্তির কাছে বিপদ। মুক্তি কামনা বা সন্তান চাওয়া, মাজারে বা কোন মানুষকে সিজদা করা, আল্লাহর নির্দেশের বিপরীতে মানুষের নির্দেশ মান্য করা, পীরের উপর ভরসা করা, গণকের কথায় বিশ্বাস করা, আলিমুল গায়েব হলেন একমাত্র আল্লাহ অথচ কোন পীরকে গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করা, জাদু করা, তাবিজ ব্যবহার করা ইত্যাদি। এগুলো ছাড়া আরো অনেক বড় শির্ক আছে । আর ছোট শির্ক তো আছেই। এগুলো সম্পূর্ণ পরিহার করতে হবে । আগে কোন শির্ক করে থাকলে তাওবাহ করে পাকসাফ হতে হবে । উপরে বর্ণিত ৪টি শর্তের একটি শর্তও যদি বাদ পড়ে যায় তাহলে বান্দার ইবাদাত বাতিল হয়ে যাবে। কোন ইবাদতই কবুল হবে না, কোন ভালো কাজেরই সাওয়াব পাওয়া যাবে না। এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানিয়ে দেয়া, মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব।