মাযহাবের সংখ্যা অনেক হলেও পৃথিবীতে চারটি মাযহাব প্রসিদ্ধি লাভ করে। সংখ্যাধিক্যের হার হিসেবে ভারতবর্ষে হানাফী, আফ্রিকার দেশগুলোতে মালেকী, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে শাফেয়ী এবং মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে হাম্বলী মাযহাব অনুসরণকারীদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে। এর ব্যতিক্রম হিসেবে সবকটি মহাদেশ জুড়েই রয়েছে আহলে হাদীস মতাবলম্বী লোকেরা । মাযহাব পালনের ক্ষেত্রে মাযহাবের ইমামগণের কিছু মূলনীতি ও উপদেশ রয়েছে, তা আমরা অনেকেই জানি না। বিশেষ করে মতবিরোধপূর্ণ মাসআলাগুলোতে তথ্যসূত্র দুর্বল হলেও নিজ নিজ মাযহাবের রায় অন্ধভাবে মেনে চলি অনেকেই। এমন অনুসরণের অনুমতি কি আল্লাহর রাসূল (স) আমাদেরকে দিয়েছেন?
কোন বিষয়ে দুর্বল হাদীস আমল করা, অথচ একই বিষয়ে প্রাপ্ত বিশুদ্ধ হাদীসটি আমলে না আনা- এমন অদ্ভুত, অযৌক্তিক আমলের নির্দেশ কি মাযহাবের ইমামগণ আমাদেরকে দিয়েছেন? এ বিষয়ে তাঁরা আমাদেরকে কী উপদেশ দিয়েছেন, এতদসংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণী নিম্নে তুলে ধরা হলো।
১. ইমাম আবু হানীফা (র) বলেন, “হাদীস যেটি সহীহ সেটাই আমার মাযহাব ”(রাদ্দুল মুখতার ১/১৫৪; মুকাদ্দিমাতু উমদাতুর রিয়ায়াহ- ১/১৪; হাশিয়াতু ইবনু আবেদীখ- ১/৬৩)।
২. ইমাম মালেক (র) বলেন, “আমি নিছক একজন মানুষ। ভুল করি, শুদ্ধও করি । তাই আমার মতামতকে যাচাই করে নিও। কুরআন ও সুন্নাহর সাথে যতটুকু মিলে সেটুকু গ্রহণ করো, আর গড়মিল পেলে সেটুকু বাদ দিয়ে দিও।” (ইকাযুল হিমাম, পৃষ্ঠা ১০২)
৩. ইমাম শাফেয়ী (র) বলেন, “যদি তোমরা আমার কোন কথা হাদীসের সাথে গড়মিল দেখতে পাও, তাহলে তোমরা হাদিস অনুযায়ী আমল করো, আমার নিজের উক্তিকে দেয়ালে ছুড়ে ফেল।” (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ- ১/৩৫৭)।
৪. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (র) বলেন, “তুমি আমার অন্ধ অনুসরণ করো না। মালেক, শাফেয়ী, আওযায়ী, সাওরী- তাঁদেরও না; বরং তাঁরা যেখান থেকে (সমাধান) নিয়েছেন তুমিও সেখান থেকেই নাও।” (ইবনুল কাইয়্যিম রচিত ‘ঈলামুল মুওয়াকেয়ীন- ২/৩০২)।
তিনি আরো বলেন, “যে ব্যক্তি রাসূল (স)-এর সহীহ হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করবে সে লোক ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত।” (ইবনুল জাওযী রচিত, আল মানাকিব: ১৮২)
৫. আল্লামা ইবনে আবেদীন বলেন, “কোন মাসআলা সহীহ হাদীসের সাথে গড়মিল হলে ঐ হাদীসটিই আমল করবে । আর ঐ হাদীসই হবে তার মাযহাব। এরূপ আমল তাকে মাযহাব থেকে বের করে দেব না। হানাফী হলে সে হানাফীই থেকে যাবে।” (রাদ্দুল মুখতার- ১/১৫৪)
৬. সুনানে আবী দাউদ গ্রন্থের সংকলক মুহাদ্দিস আবু দাউদ (র) বলেন, এমন কোন লোক নেই, যার সব কথাই গ্রহণযোগ্য; কেবল রাসূলুল্লাহ (স) ছাড়া। (মাসাইলে ইমাম আহমদ: ২৭৬)
সর্বশেষে আল্লাহ তাআলার বাণীটি স্মরণ করি। তিনি বলেছেন,
“যারা (সব) কথা শুনে, অতঃপর উত্তমটি আমল করে তারাই হলো হেদায়াতপ্রাপ্ত, আর তারাই হলো বুদ্ধিমান।” (সূরা ৩৯; আয যুমার ১৮)