শির্ক কী ও কেন? চতুর্থ পরিচ্ছেদ ড. মুহাম্মদ মুয্‌যাম্মিল আলী

এ সকল মূর্তি ছাড়াও কা‘বা শরীফের ন্যায় মর্যাদার অধিকারী তাদের আরো কিছু গৃহ ছিল। এ সব গৃহেরও খাদেম ও গিলাফ ছিল। কা‘বা শরীফের ন্যায় তারা এ সব গৃহের ত্বওয়াফ করতো। এর উদ্দেশ্যে পশু উৎসর্গ করতো। এ সম্পর্কে হেশাম ইবন মুহম্মদ আল-কালবী স্বীয় ‘কিতাবুল আসনাম’ গ্রন্থে বলেন :

‘‘বনী হারিছ ইবন কা‘ব গোত্রের একটি কা‘বা গৃহ ছিল নাজরান নামক স্থানে। তারা এর সম্মান করতো। এ গৃহের বর্ণনাই জাহেলী যুগের কবি আ‘শা তার কবিতায় উল্লেখ করেছেন:

وكعبة نجران حتم علي ** ك حتى تناخي بأبوابها

‘‘নাজরানের কা‘বার দরজায় তোমার উট বসিয়ে দেয়া একান্ত জরুরী’’

অনুরূপভাবে ‘কূফা’ ও ‘বসরা’ এর মধ্যবর্তী ‘সিনদাদ’ নামক স্থানেও ‘ইয়াদ’ গোত্রের একটি কা‘বা ছিল।[1]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের সময় মক্কায় প্রবেশ করে কা‘বা শরীফের ভিতরে ও এর পার্শ্বে ৩৬০টি মূর্তি দেখতে পান এবং

﴿جَآءَ ٱلۡحَقُّ وَزَهَقَ ٱلۡبَٰطِلُۚ إِنَّ ٱلۡبَٰطِلَ كَانَ زَهُوقٗا﴾ [الاسراء: ٨١]

‘‘সত্য সমাগত, অসত্য বিতাড়িত, আর অসত্যের পতন অবশ্যম্ভাবী।’’[2] এবং

﴿جَآءَ ٱلۡحَقُّ وَمَا يُبۡدِئُ ٱلۡبَٰطِلُ وَمَا يُعِيدُ﴾ [سبا: ٤٩]

‘‘সত্য আগমন করেছে এবং অসত্য নতুন কিছু সৃজন করতে পারে না এবং এর পুনরাবর্তনও হবে না।’’[3]

এ আয়াত দু’টি পাঠ করে মূর্তিগুলোকে ধনুক দিয়ে আঘাত করতে থাকলে তা মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে।[4] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বা শরীফের ভিতরের দেয়ালে ইবরাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিস সালাম-এর চিত্র দেখতে পেলেন এমতাবস্থায় যে, তাঁরা তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ধারণ করছেন। তা দেখে তিনি বলেন :

«قَاتَلَهُمُ اللهُ وَاللهِ مَا اسْتَقْسَمَابِهَا قَطُّ»

‘‘মুশরিকদের আল্লাহ ধ্বংস করুন! আল্লাহ্‌র শপথ তাঁরা দু‘জন কখনও তীর দিয়ে ভাগ্য নির্ধারণ করেন নি।’’[5]উপরে বর্ণিত এ সব মূর্তি ছাড়াও সাধারণ মানুষের বাড়ীতে ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন স্থানে গৃহ, পাথর ও গাছের আকৃতিতে যে সব মূর্তি ও প্রতিমা ছিল, আরব জনগণ বিশেষ করে বনী ইসমাঈলদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ সব ছিল শয়তানের একেকটি পাতানো ফাঁদ বিশেষ।

>
[1]. ইবনে কাছীর, আল-বেদায়াতু ওয়ান নেহায়াহ; ১/১৭৩।

[2].আল-কুরআন, সূরা ইসরা : ৮১।

[3].আল-কুরআন, সূরা সাবা : ৪৯।

[4]. মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব, মুখতাসারু সীরাতির রাসূল; (রিয়াদ : আর-রিয়াসাতুল আ-ম্মাহ লি এদারাতিল বুহুছিল ইলমিয়্যাহ..., সংস্করণ বিহীন, ১৪০৮হিজরী), পৃ. ২০২।

[5]. সফিয়্যুর রহমান আল-মুবারকপুরী, প্রাগুক্ত; পৃ. ৪০৪।