ঈমানের ২২তম শাখা হচ্ছে যাকাত প্রদান করা। নামাযের পরই যাকাতের গুরুত্ব। যাকাত সম্পর্কে আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা বলেন,
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
তাদেরকে এছাড়া আর কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটিই দীনি স্থায়ী ব্যবস্থাপনা।[১]
সূরা আত তাওবায় বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّ كَثِيرًا مِّنَ الْأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۗ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ * يَوْمَ يُحْمَىٰ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَىٰ بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ ۖ هَٰذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ
আর যারা সোনা রূপা জমা করে রাখে, তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে সেগুলো উত্তপ্ত করা হবে। তা দিয়ে তাদের মুখমণ্ডল, পিঠ ও পার্শ্বদেশে ছ্যাকা দেয়া হবে, আর বলা হবে- এগুলো তো তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। এবার এর মজা গ্রহণ কর।'[২]
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে এভাবে-
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُم ۖ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
‘আল্লাহ্ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা কিছু দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে এবং ভাবে এতে তাদের কল্যাণ হবে। না, বরং এতে তাদের অকল্যাণই ডেকে আনবে। যে ধন সম্পদের ব্যাপারে তারা কার্পণ্য করে সেই ধন সম্পদ কিয়ামতের দিন বেড়ি বানিয়ে তাদের গলায় পরিয়ে দেয়া হবে।[৩]
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মুয়ায ইবনু জাবালকে যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইয়েমেন পাঠান, তখন তাকে বলেছিলেন,
إِنَّكَ تَأْتِي قَوْمًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ فِي فُقَرَائِهِمْ فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ
তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছে। তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তুমি আহ্বান জানাবে তারা যেন সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তারা যদি মেনে নেয় তাহলে বলবে আল্লাহ তাআলা দিনে রাতে মোট পাচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। তারা যদি মেনে নেয় তাহলে বলবে- আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন। যা ধনীদের থেকে আদায় করে গরীবদের মাঝে বন্টন করা হবে। তারা যদি একথাটিও মেনে নেয়, তাহলে সাবধান! যাকাত হিসেবে তুমি তাদের বাছাই করা উত্তম মালগুলো নেবে না। অবশ্যই মযলুম (অত্যাচারিত)-এর (বদ) দুআ থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ আল্লাহ্ আর মযলুমের দুআর মধ্যখানে কোনো আড়াল নেই।[৪]
ইমাম বুখারী আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদীস সংকলন করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,
من أتاه الله ما قلم يؤد زكاته مثل له يوم القيامة شجاعًا أقرع له زبيبنان يطوقه يوم القيامة ثم يأخد بلهزمتيه (يغني شدقيه) ثم قال أنا مالك أنا كنزك ثم تلا هذه الأية ولا يحسبن الذين يبخلون بما أتاهم الله من فضله هو خيرا لهم بل هو شر لهم سيطوقون ما بخلوا به يوم القيامة
যাকে আল্লাহ ধন সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু তা থেকে যাকাত দেয় না, কিয়ামতের দিন সেগুলো বিরাট অজগর হয়ে তার গলা পেচিয়ে ধরে ছোবল মারতে থাকবে। সে অজগর কানে শুনবে না, তার চোখ দুটো থাকবে কালো কুচকুচে। ছোবল মারবে আর বলতে থাকবে। আমি তোমার ধন সম্পদ আমি তোমার টাকা পয়সা। তারপর তিনি সূরা আলে ইমরানের ১৮০নং আয়াত তিলাওয়াত করলেন। যার অর্থ-
‘আল্লাহ্ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা কিছু দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে এবং ভাবে এতে তাদের কল্যাণ হবে। না, বরং এতে তাদের অকল্যাণই বয়ে আনবে। যে ধন সম্পদের ব্যাপারে তারা কার্পণ্য করে সেই ধন-সম্পদ কিয়ামতের দিন বেড়ি বানিয়ে তাদের গলায় পরিয়ে দেয়া হবে।'
[২]. সূরা আত তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫।
[৩]. সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০।
[৪]. সহীহ আল বুখারী, যাকাত অধ্যায়, যাকাত হিসেবে লোকদের থেকে উত্তম সম্পদ গ্রহণ না করা শিরোনাম; সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায় (হাদীস-২৯)।