হিজরী ১৫ সালে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু, আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু, শুরাহবিল ইবন হাসানা রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পবিত্র ভূমি ফিলিস্তীনের শাসকদের কাছে পাঠান- যাতে তাঁরা ঐ শহরের চাবি তাদের কাছ থেকে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেখনকার পাদ্রী জাফর ইউনুস শহরের চাবি দিতে অস্বীকার করে বলল: আমরা চাবি ঐ ব্যক্তির হাতে দেব যার গুণাবলী সম্পর্কে আমরা তাওরাতে জানতে পেরেছি। তার সাথে তোমাদের মিল নেই।
একথা শুনে মুসলিম সেনানায়কগণ খলিফাকে চাবি নিতে আসার অনুরোধ করলেন। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খাদেমকে নিয়ে সফরে বের হলেন। তাঁদের সাথে মাত্র একটি উট ছিল। পালা করে তাঁরা একজন উটে চড়তেন, অপরজন পায়ে হেঁটে চলতেন।
শামের সীমান্ত অঞ্চলের কাছে অনেক দূর পর্যন্ত রাস্তা ছিল কর্দমাক্ত। এ পথে খলিফাকে সাহায্য করার জন্য আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু এলেন। দেখলেন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কাদাযুক্ত পথ দেখে উট থেকে নেমে জুতা খুলে কাঁধে রেখে উটের লাগাম ধরে চললেন। দেখে তিনি বললেন, আমীরুল মুমিনীন, আপনি এ কি করছেন? এভাবে শামদেশের অধিবাসীদের কাছে আপনি উপস্থিত হবেন আমার তা ভাল লাগছে না।
শুনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: হে উবায়দা! তুমি না হয়ে যদি অন্য কেউ একথা বলত, তাহলে তাকে আমি উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য শিক্ষার বস্তুতে পরিণত করতাম। আমরা লাঞ্ছিত, অপমানিত ছিলাম, আল্লাহ ইসলামের মাধ্যমে আমাদের সম্মান দিয়েছেন। আবার যদি আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুর মাধ্যমে সম্মান চাই, তাহলে আবার আমরা লাঞ্ছিত, অপমানিত হব।
এভাবে সফর শেষ হল। তখন খলিফার পায়ে হেঁটে চলার পালা ছিল। সেভাবেই তিনি শহরের দরজায় উপস্থিত হলেন। তাঁর পোশাক ছিল ১৭টি তালি লাগানো।
ইয়াহূদী শাসকরা যখন বুঝতে পারল যে ইনিই খলিফা, তারা আনন্দের সাথে শহরের চাবি তাঁর কাছে হস্তাস্তর করল, কারণ খলিফার এই বর্ণনাই তারা তাদের কিতাবে পেয়েছিল।
চাবি হাতে পেয়ে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সিজদায় লুটিয়ে পড়ে দীর্ঘসময় কাঁদলেন। তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন: আমি এজন্য কাঁদছি যে আমার ভয়ে হচ্ছে যে পৃথিবী তোমাদের সামনে খুলে দেওয়া হবে। তখন তোমরা একে অপরকে ভুলে যাবে। তোমাদের মাঝে কোনো ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ থাকবে না। তখন আল্লাহ তা‘আলাও তোমাদের দূরে ঠেলে দেবেন।