উত্তর: বল, চার ইমামসহ মুসলিম জাতির সমস্ত আলেম একমত যে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রূহ তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বে দাফন করেননি। কেননা তাকে জীবিত দাফন করা যুক্তিযুক্ত নয়!! এ ছাড়াও তার মারা যাওয়ার পরই তাঁরা খলিফা নির্ধারণ করেছেন এবং তার মেয়ে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার মিরাস চেয়েছেন। কোনো সাহাবী, তাবেঈ অথবা তাদের অনুসারী চার ইমামের কারো থেকে বর্ণিত হয়নি যে, তার মৃত্যু ও দাফন কার্য সমাধা হওয়ার পর তিনি মানুষের জন্যে বের হয়েছেন। অতএব যে দাবি করে, তিনি কবর থেকে মানুষের জন্য বের হন সে কুসংস্কারাচ্ছন্ন, মিথ্যুক, শয়তান তাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করছে এবং সে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর অপবাদ আরোপকারী। কিভাবে এটি সম্ভব? অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٞ قَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهِ ٱلرُّسُلُۚ أَفَإِيْن مَّاتَ أَوۡ قُتِلَ ٱنقَلَبۡتُمۡ عَلَىٰٓ أَعۡقَٰبِكُمۡۚ [ال عمران: ١٤٤]
“মুহাম্মাদ কেবল একজন রাসূল। তাঁর পূর্বে নিশ্চয় অনেক রাসূল বিগত হয়েছে। যদি সে মারা যায় অথবা তাকে হত্যা করা হয়, তবে তোমরা কি তোমাদের পেছনে ফিরে যাবে”? [সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ১৪৪] অনুরূপ তার বাণী:
إِنَّكَ مَيِّتٞ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ [الزمر: ٣٠]
“নিশ্চয় তুমি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৩০] আল্লাহ তা‘আলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর সংবাদকে অন্যান্য মানুষের মৃত্যুর সংবাদের সাথে যোগ করেছেন,যাতে এটি সুস্পষ্ট হয় যে, প্রকৃতপক্ষেই তাঁর মৃত্যু হবে এবং তিনি এই দুনিয়া থেকে বারযাখের জীবনে চলে যাবেন, যেখান থেকে তিনি পুনরুত্থান ও কবর থেকে বের হওয়ার পর কিয়ামতের ময়দানে মানুষ যখন হিসাব-নিকাশ ও বিনিময় গ্রহণের জন্যে জড়ো হবে সেদিনের পূর্বে তিনি বের হবেন না। যেসব মূর্খ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোক বিশ্বাস করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর থেকে বের হন, তাদের প্রতিবাদে ইমাম কুরতুবি মালিকীর (মৃত ৬৫৬ হি:) কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
তিনি তার “আল-মুফহাম” নামক কিতাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কবর থেকে বের হওয়ার কুসংস্কার সম্পর্কে বলেন, “সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি দ্বারাই এর অসারতা বুঝা যায়। এ থেকে আবশ্যক হয় যে, তিনি যে অবস্থায় মারা গেছেন, তাকে সে আকৃতি ছাড়া অন্য কোন আকৃতিতে না দেখা, একই মুহূর্তে দু’স্থানে দু’জন তাকে না দেখা, এখনো জীবিত থাকা ও কবর থেকে বের হওয়া, বাজারে চলাচল করা এবং মানুষকে তার সম্বোধন করা এবং তারাও তাকে সম্বোধন করা। এতে তাঁর কবরটি তার শরীর থেকে খালি থাকা এবং তাঁর কবরে কিছুই না থাকা। অতএব শুধু কবরকে যিয়ারত করা এবং অনুপস্থিতকে সালাম দেওয়া হয়। কেননা দিন ও রাতের বিভিন্ন সময়ে তাঁকে তার অবিকল চেহারায় কবর ছাড়া অন্যত্র দেখা যাওয়া সম্ভব। বস্তুত এ গুলো সবই মূর্খতা, যার সামান্য বিবেকও আছে সে তা স্বীকার করে না”। শেষ হল।