সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি হুকুম করেছেন এবং তা সুদৃঢ় করেছেন। হালাল ও হারাম করেছেন, জানিয়েছেন এবং শিখিয়েছেন। তিনি স্বীয় দীন শিখিয়েছেন ও বুঝিয়েছেন। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য মাবুদ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি স্বীয় কিতাব দ্বারা দীনের মূলনীতিগুলো প্রস্তুত করেছেন, যে কিতাব সকল উম্মতের জন্য হিদায়াত। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। যিনি আরব ও অনারব সবার জন্য একনিষ্ঠ দীন ও অনুসারীদের ওপর অনুগ্রহ-শীল শরীয়তসহ প্রেরিত হয়েছেন। তিনি সর্বক্ষণ এই শরীয়তের মাধ্যমে তার দিকে দাওয়াত দিয়েছেন, তার জন্য লড়াই করেছেন এবং তার অকাট্য প্রমাণাদি দ্বারা তার দু’পাশকে হেফাযত করেছেন। আল্লাহ সালাত ও সালাম পেশ করুন তাঁর ওপর, তাঁর পথের পথিক সমস্ত সাহাবী এবং সে পথে তার সাথে সম্পৃক্ত সকলের ওপর।
অতঃপর:
আমি (চার ইমামের আকীদাহ) নামক বই, যা একদল বিদগ্ধ শিক্ষার্থী সংকলন করেছেন তার সম্পর্কে অবগত হই। কুরআন ও সুন্নাহ-এর ভিত্তিতে—আমাদের সম্মানিত সলাফদের নীতিমালা অনুসরণে এর মাসআলাসমূহ বইটিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। বইটির বিষয়বস্তু এবং তার অন্তর্ভুক্ত মাসআলাগুলোর গুরুত্বের কারণে বইটি প্রকাশ ও প্রচার করার উপদেশ দিচ্ছি। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন বইটির পাঠকদেরকে উপকৃত করেন এবং যারা সংকলন করেছেন তাদের উত্তম ও পরিপূর্ণ বিনিময় দান করেন। আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদের ওপর, তার পরিবারের ওপর ও তার সমস্ত সাহাবীদের ওপর সালাত ও সালাম পেশ করুন।
মসজিদে নববীর ইমাম ও খতীব:
এবং বিচারপতি মদীনা মুনাওয়ারা সাধারণ বিচারালয়
সালাহ বিন মুহাম্মাদ আল-বুদায়ের
সমস্ত প্রশংসা বিশ্ব জগতের রব আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক নবীগণের সরদার আমাদের নবী মুহাম্মাদের ওপর, তাঁর পরিবার ও তার সাহাবীগণের ওপর। অতঃপর:
এটি একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা। এতে তাওহীদের ঐসব মাসআলা, দীনের মূলনীতি ও তার আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহ সংক্ষিপ্ত আকারে স্থান পেয়েছে, যা প্রত্যেক মুসলিমের জানা ও বিশ্বাস করা আবশ্যক। আর এগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে চার ইমামের আকীদাহ সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত কিতাবগুলো থেকে।
তারা হলেন, ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফে‘ঈ, ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সবার ওপর রহম করুন। তারা সবাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের আকীদার ওপর একমত ছিলেন এবং এতে তারা কোন প্রকার দ্বিমত পোষণ করেননি। যেমন ইমাম আবূ হানীফা রাহিমাহুল্লাহু (মৃত ১৫০ হি:) এর কিতাব ‘ফিকহুল আকবার’, ইমাম তাহাভী (মৃত ৩২১হি.) এর কিতাব ‘আকীদাতুত তাহাভী’ ও আল্লামা ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী (মৃত ৭৯২হি.) রচিত তার ব্যাখ্যাগ্রন্থ’, ইবনে আবী যায়েদ আল-কাইরোয়ানী মালেকী (মৃত ৩৮৬হি.) রচিত ‘মুকাদ্দামাতুর রিসালাহ’, ইবনে আবী যামানীন মালিকী (মৃত ৩৯৯হি.) রচিত “উসূলুস সুন্নাহ’, ইবনে আব্দুল বার মালিকী (মৃত ৪৬৩হি.) রচিত মুওয়াত্তা এর ব্যাখ্যা ‘আত-তামহীদ’,
সাবুনী শাফেঈ (মৃত ৪৪৯হি.) রচিত ‘আর-রিসালাহ ফী ই‘তিকাদি আহলিল হাদীস’, ইমাম শাফেঈর ছাত্র মুযানী (মৃত ২৬৪ হি.) রচিত ‘শারহুস সুন্নাহ’, ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (মৃত ২৪১ হি.) রচিত ‘উসূলুস সুন্নাহ’, তার ছেলে আব্দুল্লাহ (মৃত ২৯০হি.) রচিত ‘কিতাবুস সুন্নাহ’, খাল্লাল আল-হাম্বলী (মৃত ৩১১হি.) রচিত ‘কিতাবুস সুন্নাহ’, ইবনে ওয়াদ্দাহ আল-আন্দালুসী (মৃত ২৮৭ হি.) রচিত ‘কিতাবুল বিদা ওয়ান নাহয়ী আনহা’, আবু বকর তারতুশী মালেকী (মৃত ৫২০ হি.) রচিত ‘কিতাবুল হাওয়াদিস ওয়াল বিদা‘ঈ এবং আবু শামাহ মাকদিসী শাফী (মৃত ৬৬৫হি.) রচিত ‘কিতাবুল বা‘য়েস আলা ইনকারিল বিদা‘ঈ ওয়াল হাওয়াদিস’। হকের দাওয়াত, সুন্নাহ ও আকীদার সংরক্ষণ এবং বিদ`আত, বাতিল ও কুসংস্কার প্রতিরোধে আকীদাহ ও মূলনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে ইমামগণ ও তাদের অনুসারীগণে বিভিন্ন কিতাবসমূহ থেকেও পুস্তিকাটির বিষয়বস্তু সংগ্রহ করা হয়েছে।
হে আমার মুসলিম ভাই! আপনি যেহেতু এ চার ইমামের কারো অনুসারী, তাই জেনে নিন যে, এগুলোই আপনার ইমামের আকীদাহ। আপনি যেভাবে আহকামের ক্ষেত্রে তার অনুসরণ করেন, সেভাবেই আকীদার ক্ষেত্রেও তাকে অনুসরণ করুন।
বিষয়বস্তুগুলো সহজভাবে উপস্থাপন ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে পুস্তিকাটি প্রশ্নোত্তর আকারে বিন্যস্ত করা হয়েছে।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, তিনি যেন সবাইকে ইখলাসের সাথে সত্য কবুল করা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ করার তাওফীক দেন।
আমাদের নবী মুহাম্মাদের ওপর, তার পরিবার ও তার সাথীদের ওপর আল্লাহ সালাত ও সালাম নাযিল করুন।
উত্তর: বলুন, আমার রব আল্লাহ। তিনি সবকিছুর মালিক, স্রষ্টা, ব্যবস্থাপক, আকৃতি দানকারী, অভিভাবক ও বান্দাদের সংশোধনকারী এবং তাদের যাবতীয় বিষয়াদির আঞ্জাম দাতা। তার নির্দেশ ব্যতীত কোনো কিছুই অস্তিত্ব লাভ করে না এবং তার ইচ্ছা ও অনুমতি ব্যতীত কোনো স্থির বস্তু নড়াচড়া করে না।
উত্তর: তাহলে তুমি বল, তার সম্পর্কে ইলম, তার অস্তিত্ব সম্পর্কে স্বভাবজাত স্বীকৃতি, তার সম্মান ও ভীতি আর ক্ষমতা যা দিয়ে তিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন সে সবের আলোকেই আমি তাকে চিনেছি। যেমনি ভাবে আমি তাকে চিনেছি তার নিদর্শনসমূহ ও সৃষ্টিগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিয়ে ও চিন্তা-গবেষণা করে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمِنۡ ءَايَٰتِهِ ٱلَّيۡلُ وَٱلنَّهَارُ وَٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُۚ لَا تَسۡجُدُواْ لِلشَّمۡسِ وَلَا لِلۡقَمَرِ وَٱسۡجُدُواْۤ لِلَّهِۤ ٱلَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ ٣٧﴾ [فصلت: ٣٧]
“আর তার নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে রাত, দিন, সূর্য ও চন্দ্র”। [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৭] এই সু-শৃঙ্খল, সুক্ষ্ম ও সুন্দর বিশাল এ সৃষ্ট-জগত নিজে নিজে কখনো সৃষ্ট হতে পারে না। অবশ্যই অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করার জন্য তার স্রষ্টা রয়েছে। এটিই শক্তিশালী, মহান ও প্রজ্ঞাময় স্রষ্টার অস্তিত্বের বড় প্রমাণ। প্রত্যেক মাখলুক তাদের স্রষ্টা, মালিক, রিযিক দাতা ও তাদের বিষয়াদির ব্যবস্থাপককে স্বীকার করে। তবে মুষ্টিমেয় কতক নাস্তিক ব্যতীত। তার মাখলুকের মধ্যে আরো রয়েছে সাত আসমান, সাত যমীন ও তার অন্তর্ভুক্ত মাখলুকসমূহ, যার সংখ্যা, হাকীকত ও অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ ও রিযিকের ব্যবস্থা মহান স্রষ্টা, চিরঞ্জীব ও সবকিছুর ধারক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ করে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُغۡشِي ٱلَّيۡلَ ٱلنَّهَارَ يَطۡلُبُهُۥ حَثِيثٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ وَٱلنُّجُومَ مُسَخَّرَٰتِۢ بِأَمۡرِهِۦٓۗ أَلَا لَهُ ٱلۡخَلۡقُ وَٱلۡأَمۡرُۗ تَبَارَكَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٥٤﴾ [الاعراف: ٥٣]
“নিশ্চয় তোমাদের রব হলেন আল্লাহ, যিনি ছয় দিনে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন অতঃপর আরশে আরোহণ করেছেন। তিনি দিনকে রাত দ্বারা ঢেকে দেন, ফলে ওদের একে অন্যকে অতি দ্রুত অন্বেষণ করে। আর সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজিকে তাঁর নির্দেশের অধীন করেছেন। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। মহা বিশ্বের রব বরকতময় আল্লাহ।” [সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৪]
উত্তর: তখন বল, আমার দীন ইসলাম। আর ইসলাম হচ্ছে তাওহীদের সাথে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্যের সাথে তার বশ্যতা মেনে নেওয়া এবং শির্ক ও মুশরিকদের থেকে মুক্ত হওয়া। যেমন— আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُ ١٩﴾ [ال عمران: ١٩]
“নিশ্চয় আল্লাহর নিকট দীন হচ্ছে ইসলাম।” [সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ১৯] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন: “আর যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায় তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” [সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ৮৫] আল্লাহ কোনো দীন গ্রহণ করবেন না একমাত্র তার দীন ব্যতীত, যা দিয়ে তিনি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। কারণ, তাঁর দ্বীন পূর্বের সকল শরীয়তকে রহিতকারী। অতএব ইসলাম ব্যতীত যে অন্য দীন অন্বেষণ করবে সে হিদায়াত থেকে বিচ্যুত এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে ও জাহান্নামে প্রবেশ করবে। জাহান্নাম খুব নিকৃষ্ট ঠিকানা।
উত্তর: তুমি বল, ঈমানের রুকন ছয়টি। আর তা হচ্ছে, তুমি ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি, তার ফিরিশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ ও পরকাল দিবসের প্রতি। তুমি আরো ঈমান আনবে, ভালো ও মন্দ—সবকিছুর তাকদীরের প্রতি।
আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত যেভাবে প্রমাণ করে সেভাবে এসকল রুকনসমূহের ওপর ঈমান আনা ছাড়া কারো ঈমান পূর্ণ হবে না। আর যে কেউ এর একটি অস্বীকার করবে, সে ঈমানের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। এর ওপর প্রমাণ হলো, আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿لَّيۡسَ ٱلۡبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ قِبَلَ ٱلۡمَشۡرِقِ وَٱلۡمَغۡرِبِ وَلَٰكِنَّ ٱلۡبِرَّ مَنۡ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةِ وَٱلۡكِتَٰبِ وَٱلنَّبِيِّۧنَ وَءَاتَى ٱلۡمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ ذَوِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينَ وَٱبۡنَ ٱلسَّبِيلِ وَٱلسَّآئِلِينَ وَفِي ٱلرِّقَابِ وَأَقَامَ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَى ٱلزَّكَوٰةَ وَٱلۡمُوفُونَ بِعَهۡدِهِمۡ إِذَا عَٰهَدُواْۖ وَٱلصَّٰبِرِينَ فِي ٱلۡبَأۡسَآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَحِينَ ٱلۡبَأۡسِۗ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ صَدَقُواْۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُتَّقُونَ ١٧٧ ﴾ [البقرة: ١٧٧]
“ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফিরিশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দি মুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তাঁরাই সত্যবাদী ও মুত্তাকী”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৭৭]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন ঈমান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো, তখন তিনি বলেছেন, “তুমি ঈমান আনবে আল্লাহ, ফিরিশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, পরকাল দিবস ও ভালো-মন্দের তাকদীরের প্রতি”। (এটি বর্ণনা করেছেন সহীহ মুসলিম)
উত্তর: বল, আল্লাহর প্রতি ঈমান হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলার অস্তিত্ব এবং তার রুবুবিয়্যাত, উলুহিয়্যাত ও তার নাম ও সিফাতসমূহের প্রতি ঈমান আনা এবং তাঁর একত্বের প্রতি বিশ্বাস, সত্যায়ন ও স্বীকার করা দ্বারা।
উত্তর: বল, ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান হচ্ছে, তাদের অস্তিত্ব, গুণাবলি, ক্ষমতা, কাজ এবং তাদের যা নির্দেশ করা হয় তা পালন করা ইত্যাদির প্রতি সত্যায়ন ও দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। সেই সঙ্গে আরো বিশ্বাস করা যে, তারা আল্লাহর মর্যাদাবান মহান সৃষ্টি। আল্লাহ তাদেরকে নূর দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [التحريم: ٦]
“আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে তারা অবাধ্য হয় না। আর তারা তাই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়”। [সূরা আত-তাহরীম: ৬] তাদের পাখা রয়েছে দু’টো দু’টো, তিনটে তিনটে, চারটে চারটে এবং তার চেয়েও অধিক। তাদের সংখ্যা অনেক। আল্লাহ ব্যতীত তাদের সংখ্যা কেউ জানে না। আল্লাহ তাদেরকে বড় বড় অনেক দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের কেউ আরশের ধারক, কেউ মাতৃগর্ভের দায়িত্বে, কেউ আমল সংরক্ষণ করার কাজে, কেউ বান্দাদের হিফাযত করার কাজে, কেউ জান্নাত ও জাহান্নামের পাহারাদারি প্রভৃতি গুরু দায়িত্বে নিয়োজিত। আর তাদের মধ্যে সর্বোত্তম হলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি নবীদের ওপর নাযিলকতৃ অহীর দায়িত্বে নিয়োজিত। অতএব আমরা তাদের ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে ঈমান আনব। যেরূপ সংবাদ দিয়েছেন আমাদের রব তার কিতাবে ও তার রাসূল স্বীয় সুন্নতে। সুতরাং যে ব্যক্তি ফিরিশতাদের অস্বীকার করবে কিংবা মনে করবে, তাদের হাকীকত আল্লাহ যেরূপ সংবাদ দিয়েছেন সেরূপ নয় সে কাফির। কারণ, সে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সংবাদকে অস্বীকার করেছে।
উত্তর: তুমি বল যে, আপনার এ বিশ্বাস করা ও সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ তা‘আলা তার নবী ও রাসূলগণের ওপর অনেক কিতাব নাযিল করেছেন। তা থেকে কতিপয় তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইবরাহীমের সহীফা, তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবূর ও কুরআন। ইবরাহীমের সহীফাগুলো ইবরাহীমের ওপর, তাওরাত মূসার ওপর, ইঞ্জীল ঈসার ওপর, যাবূর দাউদের ওপর ও কুরআন শেষ নবী মুহাম্মাদের ওপর নাযিল হয়েছে। তাদের সবার ওপর সালাত ও সালাম।
এসবের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে কুরআন। এটি আল্লাহর কালাম। তিনি কুরআন দিয়ে প্রকৃতপক্ষে কথা বলেছেন। তার শব্দ ও অর্থ আল্লাহর পক্ষ থেকে। তিনি এটা জিবরীলকে শুনিয়েছেন এবং তার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তা পৌঁছানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “এটা নিয়ে জিবরীল অবতরণ করেছেন”। [আশ-শুআরা, আয়াত: ১৯৩] তিনি আরো বলেন: “নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি পর্যায়ক্রমে কুরআন নাযিল করেছি”। [সূরা ইনসান, আয়াত: ২৩] তিনি আরো বলেন: فأجره حتى يسمع كلام الله“অতঃপর তাকে আশ্রয় দাও যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে”। [সুরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৬]
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনকে বিকৃতি, বৃদ্ধি ও হ্রাস থেকে হিফাযত করেছেন। এটি শেষ যামানায় কিয়ামত কায়েম হওয়ার পূর্বে মুমিনদের মৃত্যু পর্যন্ত কাগজে ও বক্ষদেশে সংরক্ষিত থাকবে। অতঃপর আল্লাহ এটি উঠিয়ে নিবেন। ফলে তার কোনো অংশ আর অবশিষ্ট থাকবে না।
উত্তর: বল, আমি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি যে, তারা মানুষ এবং তারা বনী আদম থেকে মনোনীত ব্যক্তিবর্গ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর বান্দাদের ওপর যে শরীয়ত নাযিল করেছেন, তা পৌঁছানোর জন্য তাদেরকে বাঁচাই ও নির্বাচন করেছেন। তারা তাদেরকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করেন, যিনি একক, যার কোনো শরীক নেই এবং শির্ক ও মুশরিকদের থেকে মুক্ত থাকতে বলেন। নবুওয়াত আল্লাহর মনোনয়ন ও নির্বাচন, যা নিজের পরিশ্রম, অধিক ইবাদত, যোগ্যতা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে হাসিল করা যায় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ٱللَّهُ أَعۡلَمُ حَيۡثُ يَجۡعَلُ رِسَالَتَهُۥ “আল্লাহ ভালো জানেন কোথায় তিনি স্বীয় রিসালাত রাখবেন”। [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১২৪]
নবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম হলেন আদম আলাইহিস সালাম। আর সর্বপ্রথম রাসূল হলেন নূহ আলাইহিস সালাম। আর তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল-কুরাইশী আল-হাশেমী। আল্লাহর অসংখ্য সালাত ও সালাম তাদের সবার ওপর। যে কেউ একজন নবীকে অস্বীকার করবে সে কাফির। আর যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরে যে নবুওয়াতের দাবি করবে সেও কাফির এবং আল্লাহকে অস্বীকারকারী। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন। তিনি আল্লাহর রাসূল ও সর্বশেষ নবী”। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমার পরে কোনো নবী নেই”।