মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অতি প্রয়োজনীয় বস্ত্ত হল খাদ্য ও পানীয়। জীবন ধারণের জন্য এ খাদ্য হালাল হওয়া অতিব জরুরী। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
‘‘অবশ্যই আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্র (মালই) কবুল করে থাকেন। আল্লাহ মু’মিনদেরকে সেই আদেশ করেছেন, যে আদেশ করেছিলেন নবী-রসূলগণকে। তাই তো তিনি নবী-রসূলগণরে উদ্দেশ্যে বলেন,
يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
অর্থাৎ, হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্তসমূহ থেকে আহার কর এবং সৎকাজ কর। তোমরা যা কর সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।[1] আর তিনি (মু’মিনদের উদ্দেশ্যে) বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ
অর্থাৎ, হে মু’মিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে সকল রুজী দান করেছি তা থেকে পবিত্র বস্ত্ত আহার কর---।[2] অতঃপর তিনি সেই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে লম্বা সফর করলেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত এবং সমস্ত শরীর ধূলিমলিন বেশে নিজ হাত দু’টিকে আকাশের দিকে লম্বা করে তুলে দু‘আ করে, ‘হে আমার প্রতিপালক! হে আমার প্রভু!’ কিন্তু তার আহার্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় পোশাক হারাম এবং হারাম দ্বারাই তার পুষ্টিবিধান হয়েছে। অতএব তার দু‘আ কিভাবে কবুল হতে পারে?[3]
আল্লাহর রসূল (ﷺ) একদা কা’ব বিন উজরার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘‘হে কা’ব বিন উজরাহ! সে মাংস কোন দিন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যার পুষ্টিসাধন হারাম খাদ্য দ্বারা করা হয়েছে।’’[4]
রসূলুল্লাহ (ﷺ) আরো বলেন-
يَا كَعْبَ بْنَ عُجْرَةَ، إِنَّهُ لاَ يَرْبُو لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ إِلاَّ كَانَتِ النَّارُ أَوْلَى بِهِ
‘‘হে কা’ব বিন উজরাহ! যে মাংস হারাম খাদ্য দ্বারা প্রতিপালিত হবে, তার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত।’’[5]
পানাহারের বিভিন্ন আদব রয়েছে ইসলামে। যে সকল আদব পালন করলে মানুষের চরিত্র ও সুম্বাস্থ্য গড়ে ওঠে। সেই আদবের কিছু পরবর্তী অংশে।
[2]. সূরা বাক্বারাহ-২:১৭২
[3]. মুসলিম হা/১০১৫, তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা/২৯৮৯, মিশকাত হাদীস একাডেমী হা/২৭৬০
[4]. দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৭৭৬, মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৪৪৮১, সহীহ, ইমাম মুসলিমের শর্তে সনদ শক্তিশালী।
[5]. সহীহ তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা/৬১৪,
যেহেতু এ হল অহংকারী কাফেরদের পাত্র। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমরা সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করো না। কারণ, তা দুনিয়াতে কাফেরদের জন্য এবং আখেরাতে তোমাদের জন্য।’’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি (সোনা)-চাঁদির পাত্রে পান-(আহার) করে, আসলে সে ব্যক্তি নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন ঢক্ঢক্ করে পান-(আহার) করে।’’[2]
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৬৩৪, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৬৫
তবে তাদের পাত্র (দোকান বা হোটেল) ছাড়া যদি মুসলিমদের কোন পাত্র (দোকান বা হোটেল) না পাওয়া যায়, তাহলে নিরুপায় অবস্থায় তাদের সেই পাত্র (ধোয়ার পর তাদের দোকান বা হোটেলে) খাওয়ার অনুমতি রয়েছে।[1]
মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘আমি হেলান দিয়ে খাই না।’’[1] তিনি হেলান দিয়ে খেতে নিষেধও করেছেন। তিনি (ﷺ) বলেন- لَا تَأْكُلْ مُتَّكِئًا ‘‘হেলান দিয়ে খেয়ো না’’।[2] যেভাবে খেলে হেলান দিয়ে খাওয়া হয়, সেইভাবে খাওয়া মকরূহ। দেওয়াল বা চেয়ারের সাথে পিঠের অথবা মাটির সাথে বাম হাতের হেলান দিয়ে খাওয়া অপছন্দনীয়। যেহেতু অনুরূপ বসা বিনয়ীদের লক্ষণ নয় এবং হেলান দিয়ে খেলে বেশী খাওয়া হয়। আর বেশী খাওয়া ইসলামে বাঞ্ছনীয় নয়। উবুড় হয়ে শুয়ে খাওয়া নিষেধ। রসূল (ﷺ) বলেন
وَأَنْ يَأْكُلَ الرَّجُلُ وَهُوَ مُنْبَطِحٌ عَلَى بَطْنِهِ
‘‘ কোন ব্যক্তি যেন উবুর হয়ে পেটের উপর ভর করে না খায়’’।[3] সুতরাং খেতে বসার সঠিক ও সুন্নাতী বৈঠক হল নিম্নরূপঃ
(ক) দুই হাঁটু ও পায়ের পাতার উপর (নামায পড়ার মত) বসা। অনুরূপ খেতে বসে মহানবী (ﷺ) বলেছিলেন,
إِنَّ اللَّهَ جَعَلَنِي عَبْدًا كَرِيمًا وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّارًا عَنِيدًا
‘‘আল্লাহ আমাকে সম্মানিত বান্দা বানিয়েছেন এবং অহংকারী ও উদ্ধত বানাননি।’’[4]
(খ) উভয় পায়ের রলাকে খাড়া রেখে উভয় পাছার উপর বসা। মহানবী (ﷺ) এরূপ বসে খেজুর খেয়েছেন।[5]
ডান পা-কে খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসে খাওয়া চলে।[6] অবশ্য এরূপ বসে খাওয়া সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সহীহ নয়।
সতর্কতার বিষয় যে, দুই পা-কে গুটিয়ে আড়াআড়িভাবে রেখে হাঁটু ভাঁজ করে (বাবু হয়ে) বসে খাওয়াকেও অনেকে হেলান দিয়ে খাওয়ার মধ্যে গণ্য করেছেন।[7] অবশ্য অসুবিধার কারণে অথবা কাপড় খারাপ হওয়ার ভয়ে সেভাবে বসে খাওয়া হারামও নয়।
[2]. সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩১২২
[3]. আবূ দাঊদ হা/৩৭৭৪, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৩৭০, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৩৯৪, সহীহ।
[4]. আবূ দাঊদ হা/৩৭৭৩, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৬৩, সহীহ।
[5]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৪৪ প্রমুখ
[6]. ফতহুল বারী ৯/৪৫২
[7]. শারহুন নাওয়াবী ১৩/২২৭
মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘নামাযের ইকামত হলে এবং রাতের খানা উপস্থিত হলে, আগে খানা খেয়ে নাও।’’[1]
ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন-
إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ عَلَى الطَّعَامِ فَلاَ يَعْجَلَنَّ حَتَّى يَقْضِىَ حَاجَتَهُ مِنْهُ وَإِن أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ
‘যখন কেউ খেতে বসবে তখন খাওয়া শেষ না করা পর্যন্ত সে যেন তাড়াহুড়া না করে; যদিও নামাযের ইকামত হয়ে যায় তবুও।’[2]
[2]. সুনানুল বাইহাক্বী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৫২৪২
অবশ্য এ কেবল আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য। নচেৎ খাবার আগে হাত ধোয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।[1]
অবশ্য খাবার পর হাত ধোয়ার ব্যাপারটাও প্রকৃতিগত রুচির ব্যাপার। তবুও ইসলামে এর নির্দেশ এসেছে। খোদ মহানবী (ﷺ) খাবার পরে কুলি করেছেন এবং হাত ধুয়েছেন।[2]
তিনি (ﷺ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি হাতে মাংসের গন্ধ ও চর্বি না ধুয়ে তা নিয়েই ঘুমায়, অতঃপর কোন বিপদ ঘটে, তাহলে সে যেন নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দোষারোপ না করে।’’[3] এখানে কোন বিপদ বলতে, হাত না ধুয়ে শোওয়ার ফলে চর্বির গন্ধে আরশোলা, ইঁদুর বা অন্য কোন প্রাণী হাত বা আঙ্গুল কাটতে বা কামড়াতে পারে। তাছাড়া এতে কোন রোগ বা শয়তানী স্পর্শ হওয়ারও কারণ থাকতে পারে।
পক্ষান্তরে যদি আপনি নাপাক অবস্থায় গোসল করার আগে খাবার খেতে চান, তাহলে আপনার জন্য ওযূ মুস্তাহাব। আল্লাহর নবী (ﷺ) নাপাক অবস্থায় কিছু খেতে অথবা ঘুমাতে চাইলে আগে ওযূ করে নিতেন।[4] অবশ্য কেবল হাত ধুয়ে খাওয়াও চলবে। মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (ﷺ) নাপাকে থেকে যখন ঘুমাবার ইচ্ছা করতেন, তখন ওযূ করে নিতেন এবং যখন কিছু খাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন দুই হাত ধুয়ে নিতেন।[5]
[2]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৭৪৮৬, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৪৯৩
[3]. আহমাদ ৭৫১৫, আবূ দাঊদ হা/৩৮৫২, তিরমিযী হা/১৮৬০, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৯৭, দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২০৬৩
[4]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ২৮৬, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৩০৫, প্রমুখ
[5]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৪৩৫৩, নাসাঈ হা/ ২৫৬
এই আদব পালনে খাবার ঠিকমত দেহে কাজ করা এবং তার অপকারিতা দূর করার ব্যাপারে বড় প্রভাব রয়েছে। ইমাম আহমাদ বলেন, খাবারে ৪টি জিনিস জমা হলে সে খাবার পরিপূর্ণ হয়; খাবার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা, (একাধিক লোকের) অনেক হাত পড়া এবং তা হালাল হওয়া।[1]
আল্লাহর নাম নিয়ে খেতে শুরু করলে শয়তানের প্রভাব ও শরীক হওয়া থেকে বাঁচা যায়। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘অবশ্যই শয়তান (মুসলিমের) খাবার খেতে সক্ষম হয়; যদি খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না বলা হয়।---’’[2]
তিনি আরো বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন নিজ বাড়ি প্রবেশ করার সময় এবং খাবার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে, তখন শয়তান (তার সঙ্গীদেরকে) বলে, ‘তোমাদের জন্য রাত্রিযাপনের স্থানও নেই এবং রাতের খাবারও নেই।’ যখন সে বাড়ি প্রবেশ করার সময় আল্লাহর নাম নেয় এবং রাতে খাবার সময় না নেয়, তাহলে শয়তান বলে, ‘তোমরা রাতের খাবার পেলে, কিন্তু রাত্রিযাপনের জায়গা নেই।’ আর যখন সে খাবার সময়েও আল্লাহর নাম না নেয়, তখন শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত্রিযাপনের জায়গাও পেলে এবং খাবারও পেলে।’’[3]
উল্লেখ্য যে, খাবার শুরুতে কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ই বলবেন। তার সঙ্গে ‘আর-রাহমানির রাহীম’ যোগ করবেন না। যেহেতু তার কোন দলীল নেই।
পক্ষান্তরে শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন খাবার খাবে, তখন সে যেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। প্রথমে কেউ তা বলতে ভুলে গেলে সে যেন (মনে পড়লে বা) শেষে বলে,
بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ
‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু অআ-খিরাহ।’’
অর্থ: আল্লাহর নামে খাওয়ার শুরু ও শেষ করছি।[4]
খাবার সময় আরো মান্য আদব এই যে, খাবার পর ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বা নির্দিষ্ট দু‘আ পড়তে হয়। যেমনঃ (ক)
اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْراً مِّنْهُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি অআত্বইমনা খাইরাম মিন্হ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দাও এবং এর চেয়ে উত্তম আহার দান কর।[5] (খ) খাবার দুধ হলে বলুন,
اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বা-রিক-লানা ফীহি অযিদনা মিন্হ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দান কর এবং আমাদেরকে এর প্রাচুর্য দাও।[6]
(গ) এই দু‘আটি পাঠ করলে পূর্বেকার গোনাহ মাফ হয়ে যায়।[7]
اَلْحَمْدُ للهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلاَ قُوَّةً
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্আমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী অলা ক্বুউওয়াহ।
অর্থঃ সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এ খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই।[8]
অন্যান্য আরো দু‘আর বই-এ দেখুন। তবে সতর্কতার বিষয় যে, খাওয়ার পর আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে যে দু‘আ পড়বেন, তার অর্থ যেন বুঝেন। নচেৎ আপনার মনে সেই প্রশংসা ও শুক্র স্থান না পেলে মুখে মন্ত্র আওড়িয়ে লাভ কি?
খাবার খেতে খেতে মাঝে মাঝে অথবা প্রত্যেক লোকমা খাওয়ার শেষে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলার স্পষ্ট দলীল নেই। অবশ্য অনেকে সেই হাদীসকে এর দলীল মনে করেন, যাতে মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন যে, বান্দা খাবার খেয়ে তার উপর তাঁর প্রশংসা করুক এবং পানীয় পান করে তার উপর তাঁর প্রশংসা করুক।’’[9]
এখানে ‘খাবার ও পানীয়’ বলতে এক সময়ের খাবার বা পানীয়কে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ বলেছেন, প্রত্যেক লোকমাও বুঝা যেতে পারে।[10] অল্লাহু আ’লাম (আল্লাহ ভাল জানেন)।
[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০১৭, আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৬
[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০১৮, আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৫
[4]. আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৭, তিরমিযী হা/১৮৫৮
[5]. আবূ দাঊদ হা:৩৭৩০, তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৫
[6]. আবূ দাঊদ হা:৩৭৩০, তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৫
[7]. সহীহ তিরমিযী ৩/১৫৯
[8]. তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৮, ইবনে মাজাহ তাওহীদ পাবঃ হা:৩২৮৫
[9]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৭৩৪, তিরমিযী হা/১৮১৬, নাসাঈ
[10]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৪৩৭
কেননা আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার বাম হাত দ্বারা অবশ্যই না খায় এবং পানও না করে। কারণ, শয়তান তার বাম হাত দিয়ে পানাহার করে থাকে।’’
বর্ণনাকারী বলেন, (ইবনে উমার (রাঃ) এর স্বাধীনকৃত দাস তাবেয়ী) নাফে’ (রাঃ) দুটি কথা আরো বেশী বলতেন, ‘‘কেউ যেন বাম হাত দ্বারা কিছু গ্রহণ না করে এবং অনুরূপ তার দ্বারা কিছু প্রদানও না করে।’’[1]
উমার বিন আবী সালামাহ (রাঃ) বলেন, আমি শিশুবেলায় আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর কোলে (বসে খাবার সময়) আমার হাত পাত্রের যেখানে-সেখানে পড়লে তিনি আমাকে বললেন,
« يَا غُلاَمُ سَمِّ اللَّهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ »
‘‘ওহে বৎস! আল্লাহর নাম নাও, তোমার ডান হাত দিয়ে খাও এবং নিজের পাশ্বে থেকে খাও।’’[2]
একদা এক ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট বাম হাত দিয়ে কিছু খাচ্ছিল। তিনি তা লক্ষ্য করে তাকে বললেন, ‘‘তুমি ডান হাত দিয়ে খাও।’’ সে বলল, ‘আমি পারি না।’ রসূল (ﷺ) বললেন, ‘‘তুমি যেন না পার। অহংকারই ওকে (আদেশ পালনে বিরত রেখেছে)।’’ সালামাহ বলেন, ‘সুতরাং (এই বদ্দুআর ফলে) সে আর তার হাতকে মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।’[3] কিন্তু যার ডান হাত নেই অথবা ব্যবহার করার ক্ষমতা নেই সে নিরুপায় হয়েই বাম হাত ব্যবহার করবে।
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/৫৩৭৬, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৫৩৮৮৮, মুসনাদে আহমাদ হা/১৬৩৭৫
[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০২১
কারণ, মহানবী (ﷺ) উমার বিন আবী সালামাহ (রাঃ) কে বলেছিলেন, ‘‘ওহে বৎস! আল্লাহর নাম নাও, তোমার ডান হাত দিয়ে খাও এবং নিজের তরফে একধার থেকে খাও।’’[1]
মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, তখন সে যেন পাত্রের উপর (মাঝখান) থেকে না খায়। বরং পাত্রের নিচে (একধার) থেকে খায়। কারণ বরকত তার উপর (মাঝখান) অংশে নাযিল হয়।’’[2]
[2]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৪৩৫, আবূ দাঊদ হা/৩৭৭২, তিরমিযী হা/১৮০৫, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩২৭৭, দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২০৪৬
আল্লাহর রসূল (ﷺ) তিনটে আঙ্গুল দিয়েই খাবার খেতেন।[1]