এই আদব পালনে খাবার ঠিকমত দেহে কাজ করা এবং তার অপকারিতা দূর করার ব্যাপারে বড় প্রভাব রয়েছে। ইমাম আহমাদ বলেন, খাবারে ৪টি জিনিস জমা হলে সে খাবার পরিপূর্ণ হয়; খাবার আগে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা, শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা, (একাধিক লোকের) অনেক হাত পড়া এবং তা হালাল হওয়া।[1]
আল্লাহর নাম নিয়ে খেতে শুরু করলে শয়তানের প্রভাব ও শরীক হওয়া থেকে বাঁচা যায়। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘অবশ্যই শয়তান (মুসলিমের) খাবার খেতে সক্ষম হয়; যদি খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না বলা হয়।---’’[2]
তিনি আরো বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন নিজ বাড়ি প্রবেশ করার সময় এবং খাবার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে, তখন শয়তান (তার সঙ্গীদেরকে) বলে, ‘তোমাদের জন্য রাত্রিযাপনের স্থানও নেই এবং রাতের খাবারও নেই।’ যখন সে বাড়ি প্রবেশ করার সময় আল্লাহর নাম নেয় এবং রাতে খাবার সময় না নেয়, তাহলে শয়তান বলে, ‘তোমরা রাতের খাবার পেলে, কিন্তু রাত্রিযাপনের জায়গা নেই।’ আর যখন সে খাবার সময়েও আল্লাহর নাম না নেয়, তখন শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত্রিযাপনের জায়গাও পেলে এবং খাবারও পেলে।’’[3]
উল্লেখ্য যে, খাবার শুরুতে কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ই বলবেন। তার সঙ্গে ‘আর-রাহমানির রাহীম’ যোগ করবেন না। যেহেতু তার কোন দলীল নেই।
পক্ষান্তরে শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে গেলে আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ কোন খাবার খাবে, তখন সে যেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। প্রথমে কেউ তা বলতে ভুলে গেলে সে যেন (মনে পড়লে বা) শেষে বলে,
بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ
‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু অআ-খিরাহ।’’
অর্থ: আল্লাহর নামে খাওয়ার শুরু ও শেষ করছি।[4]
খাবার সময় আরো মান্য আদব এই যে, খাবার পর ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বা নির্দিষ্ট দু‘আ পড়তে হয়। যেমনঃ (ক)
اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَأَطْعِمْنَا خَيْراً مِّنْهُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি অআত্বইমনা খাইরাম মিন্হ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দাও এবং এর চেয়ে উত্তম আহার দান কর।[5] (খ) খাবার দুধ হলে বলুন,
اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ وَزِدْنَا مِنْهُ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা বা-রিক-লানা ফীহি অযিদনা মিন্হ।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জন্য এতে বরকত দান কর এবং আমাদেরকে এর প্রাচুর্য দাও।[6]
(গ) এই দু‘আটি পাঠ করলে পূর্বেকার গোনাহ মাফ হয়ে যায়।[7]
اَلْحَمْدُ للهِ الَّذِيْ أَطْعَمَنِيْ هذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِّنِّيْ وَلاَ قُوَّةً
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্আমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী অলা ক্বুউওয়াহ।
অর্থঃ সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এ খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই।[8]
অন্যান্য আরো দু‘আর বই-এ দেখুন। তবে সতর্কতার বিষয় যে, খাওয়ার পর আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে যে দু‘আ পড়বেন, তার অর্থ যেন বুঝেন। নচেৎ আপনার মনে সেই প্রশংসা ও শুক্র স্থান না পেলে মুখে মন্ত্র আওড়িয়ে লাভ কি?
খাবার খেতে খেতে মাঝে মাঝে অথবা প্রত্যেক লোকমা খাওয়ার শেষে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলার স্পষ্ট দলীল নেই। অবশ্য অনেকে সেই হাদীসকে এর দলীল মনে করেন, যাতে মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন যে, বান্দা খাবার খেয়ে তার উপর তাঁর প্রশংসা করুক এবং পানীয় পান করে তার উপর তাঁর প্রশংসা করুক।’’[9]
এখানে ‘খাবার ও পানীয়’ বলতে এক সময়ের খাবার বা পানীয়কে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু কেউ কেউ বলেছেন, প্রত্যেক লোকমাও বুঝা যেতে পারে।[10] অল্লাহু আ’লাম (আল্লাহ ভাল জানেন)।
[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০১৭, আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৬
[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০১৮, আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৫
[4]. আবূ দাঊদ হা/৩৭৬৭, তিরমিযী হা/১৮৫৮
[5]. আবূ দাঊদ হা:৩৭৩০, তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৫
[6]. আবূ দাঊদ হা:৩৭৩০, তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৫
[7]. সহীহ তিরমিযী ৩/১৫৯
[8]. তিরমিযী আল মাদানী প্রকাশনী হা:৩৪৫৮, ইবনে মাজাহ তাওহীদ পাবঃ হা:৩২৮৫
[9]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৭৩৪, তিরমিযী হা/১৮১৬, নাসাঈ
[10]. তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/৪৩৭