শর‘ঈ কারণ ব্যতীত তিন দিনের ঊর্ধ্বে কোনো মুসলিমের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা

মুসলিমে মুসলিমে সম্পর্কে বিনষ্ট করা শয়তানের অন্যতম চক্রান্ত। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসারী অনেকেই শর‘ঈ কোনো কারণ ছাড়াই মুসলিম ভাইদের সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করে। নিহায়েত বস্তুগত কারণে কিংবা দুর্বল কোনো বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ছিন্ন সম্পর্ক যুগ যুগ ধরে চলতে থাকে। তারা কেউ একে অপরের সঙ্গে কথা না বলার শপথ করে, তার বাড়ীতে প্রবেশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়। রাস্তায় দেখা হলে পাশ কেটে চলে যায়। মজলিসে হাযির হলে তার আগে-পিছের লোকদের সঙ্গে করমর্দন করে কিন্তু তাকে এড়িয়ে যায়। ইসলামী সমাজে দুর্বলতা অনুপ্রবেশের এটি অন্যতম কারণ। এর শর‘ঈ হুকুম চূড়ান্ত ও পরকালীন শাস্তি কঠোর। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«لَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلَاثٍ، فَمَنْ هَجَرَ فَوْقَ ثَلَاثٍ فَمَاتَ دَخَلَ النَّارَ»

“কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের ঊর্ধ্বে সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকা বৈধ নয়। যে মুসলিম তিন দিনের ঊর্ধ্বে সম্পর্ক ছেদ করে থাকা অবস্থায় মারা যায় সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”।[1]

অন্যত্র তিনি বলেন,

«مَنْ هَجَرَ أَخَاهُ سَنَةً فَهُوَ كَسَفْكِ دَمِهِ»

“যে ব্যক্তি তার ভাইকে এক বৎসর অবধি পরিত্যাগ করে থাকে সে তার রক্তপাতকারী সমতুল্য’।[2]

মুসলিমদের পারস্পরিক সম্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণাম এত মারাত্মক যে, এর ফলে আল্লাহর ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হতে হয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন,

«تُعْرَضُ أَعْمَالُ النَّاسِ فِي كُلِّ جُمُعَةٍ مَرَّتَيْنِ، يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَيَوْمَ الْخَمِيسِ، فَيُغْفَرُ لِكُلِّ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ، إِلَّا عَبْدًا بَيْنَهُ وَبَيْنَ أَخِيهِ شَحْنَاءُ، فَيُقَالُ: اتْرُكُوا، أَوِ ارْكُوا، هَذَيْنِ حَتَّى يَفِيئَا»

“প্রতি সপ্তাহে বান্দার আমল আল্লাহর সমীপে দু’বার করে পেশ করা হয়। সোমবারে একবার ও বৃহস্পতিবারে একবার। তখন সকল ঈমানদার বান্দাকেই ক্ষমা করা হয়; কেবল সেই লোককে ক্ষমা করা হয় না, যার সাথে তার ভাইয়ের শত্রুতা আছে। তাদের দু’জন সম্পর্কে বলা হয়, ‘এ দু’জনকে বাদ রাখ কিংবা অবকাশ দাও, যে পর্যন্ত না তারা দু’জন ফিরে আসে”।[3]

(অর্থাৎ শত্রুতা পরিহার না করা পর্যন্ত তাদের ক্ষমা করা নিষিদ্ধ।)

বিবাদকারীদ্বয়ের মধ্যে যে তওবা করবে, তাকে তার সঙ্গীর নিকটে গিয়ে সাক্ষাত করা ও সালাম প্রদান করা জরুরি। যদি সে তা করে কিন্তু তার সঙ্গী সাক্ষাত না দেয় কিংবা সালামের জবাব না দেয় তবে সে দোষমুক্ত হয়ে যাবে এবং দণ্ড যা কিছু তা অস্বীকারকারীর উপরে পতিত হবে।

আবু আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

«لاَ يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ، يَلْتَقِيَانِ: فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا، وَخَيْرُهُمَا الَّذِي يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ»

“কোনো ব্যক্তির জন্য তার ভাইয়ের সাথে তিন দিনের বেশি সম্পর্ক ছেদ করে থাকা বৈধ নয়। (সম্পর্কছেদের চিহ্নস্বরূপ) তাদের দু’জনের সাক্ষাত হলে দু’জনই মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের দু’জনের মধ্যে সে-ই উত্তম হবে, যে প্রথমে তার সঙ্গীকে সালাম দিবে”।[4]

হাঁ, যদি সম্পর্কছেদ করার শর‘ঈ কোনো কারণ পাওয়া যায়। যেমন, সে সালাত আদায় করে না কিংবা বেপরোয়াভাবে অন্যায়-অশ্লীল কাজ করে করে চলে তাহলে লক্ষ্য করতে হবে, তখন প্রশ্ন হবে, এমতাবস্থায় সম্পর্কচ্ছেদই তার জন্য মঙ্গলজনক না সম্পর্ক রক্ষাই মঙ্গলজনক? এর উত্তরে বলা হবে যে, যদি সম্পর্কচ্ছেদে তার মঙ্গল হয় এবং সে সৎ পথে ফিরে আসে তাহলে সম্পর্কছেদ করা ফরয হয়ে দাঁড়াবে। আর যদি মঙ্গলজনক না হয়ে বরং আরো বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তার মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও পাপ প্রবণতা বেড়ে যায় তাহলে সম্পর্ক ছিন্ন করা ঠিক হবে না। কেননা তাতে সংশোধন না হয়ে বরং বিশৃঙ্খলা আরো বেড়ে যাবে। সুতরাং তার সঙ্গে সংস্রব বজায় রেখে যথাসাধ্য নসীহত করে যেতে হবে।

سبحانك اللهم وبحمدك أشهد أن لا إله إلا أنت أستغفرك وأتوب إليك.اللهم اغفر لي ولوالدي وللمؤمنين يوم يقوم الحساب.

>
[1] মুসনাদে আহমদ; সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৫০৩৫।

[2] সুনান আবু দাউদ; মিশকাত, হাদীস নং ৫০৩৬; সনদ সহীহ।

[3] সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৫০৩০।

[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৭৭।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে