শ্রমিক থেকে ষোলআনা শ্রম আদায় করে পুরো মজুরী না দেওয়া

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রমিকের পাওনা দ্রুত পরিশোধে জোর তাকীদ দিয়েছেন। তিনি বলেন,

«أَعْطُوا الْأَجِيرَ أَجْرَهُ، قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ»

“তোমরা শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তার পাওনা পরিশোধ কর”।[1]

শ্রমিক, কর্মচারী, দিনমজুর যেই হোক না কেন তার থেকে শ্রম আদায়ের পর যথারীতি তার পাওনা পরিশোধ না করা মহা যুলম। এ যুলুম এখন হর-হামেশাই হচ্ছে। শ্রমিকদের প্রতি যুলুমের বিচিত্র রূপ রয়েছে। যেমন,

১. শ্রমিক স্বীয় কাজের স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পেশ করতে না পারায় তার পাওনাকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা। এক্ষেত্রে দুনিয়াতে তার হক নষ্ট হলেও কিয়ামতে তা বৃথা যাবে না। কিয়ামতের দিন যালিমের পূণ্য থেকে মাযলূমের পাওনা পরিমাণ পূন্য প্রদান করা হবে। যদি তার পূণ্য নিঃশেষ হয়ে যায় তাহলে মাযলুমের পাপ যালিমের ঘাড়ে চাপানো হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।[2]

২. যে পরিমাণ অংক মজুরী দেওয়ার জন্য চুক্তি হয়েছে তার থেকে কম দেওয়া। এ বিষয়ের সমূহ ক্ষতি প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন,

﴿وَيۡلٞ لِّلۡمُطَفِّفِينَ ١﴾ [المطففين: ١]

“যারা ওযনে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ রয়েছে”। [সূরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ১]

অনেক নিয়োগকর্তা দেশ-বিদেশ থেকে নির্দিষ্ট বেতন বা মজুরীর চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। তারপর তারা যখন কাজে যোগদান করে তখন সে একতরফাভাবে চুক্তিপত্র পরিবর্তন করে বেতন বা মজুরীর পরিমাণ অনেক কমিয়ে দেয়। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঐসব শ্রমিক তখন কাজ করতে বাধ্য হয়। অনেক সময় শ্রমিকরা তাদের অধিকারের সপক্ষে প্রমাণ পেশ করতে পারে না। তখন কেবল আল্লাহর নিকট অভিযোগ দায়ের করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় থাকে না। এক্ষেত্রে যদি নিয়োগকর্তা মুসলিম ও নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি কাফির হয় তবে বেতন মজুরী হ্রাসে ঐ শ্রমিকের ইসলাম গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে কিয়ামত দিবসে ঐ কাফিরের পাপ তাকে বহন করতে হবে।

৩. বেতন বা মজুরী বৃদ্ধি না করে কেবল কাজের পরিমাণ কিংবা সময় বৃদ্ধি করা। এতে শ্রমিককে তার অতিরিক্ত কাজের পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করা হয়।

৪. বেতন বা মজুরী পরিশোধে গড়িমসি করা। অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টা, তদবীর তাগাদা, অভিযোগ-অনুযোগ ও মামলা-মোকদ্দমার পর তবেই প্রাপ্য অর্থ আদায় সম্ভব হয়। অনেক সময় নিয়োগকারী শ্রমিককে ত্যক্ত-বিরক্ত করার উদ্দেশ্যে টাল-বাহানা করে, যেন সে পাওনা ছেড়ে দেয় এবং কোনো দাবী না তুলে চলে যায়। আবার কখনো তাদের টাকা খাটিয়ে মালিকের তহবিল স্ফীত করার কুমতলব থাকে। অনেকে তা সূদী কারবারেও খাটায়। অথচ সেই শ্রমিক না নিজে খেতে পাচ্ছে না নিজের পুত্র-পরিজনদের জন্য কিছু পাঠাতে পারছে। যদিও তাদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যই সে এ দূর দেশে পড়ে আছে। এজন্যই এ সকল যালিমের জন্য এক কঠিন দিনের শাস্তি অপেক্ষা করছে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

«ثَلاَثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ القِيَامَةِ: رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِ أَجْرَهُ»

“কিয়ামত দিবসে আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদী হব। ১. যে ব্যক্তি আমার নামে শপথ করে কিছু দেওয়ার কথা বলে তারপর তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। ২. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন বা মুক্ত লোককে ধরে বিক্রয় করে তার মূল্য ভোগ করে। ৩. যে ব্যক্তি কোনো মজুরকে নিয়োগের পর তার থেকে পুরো কাজ আদায় করেও তার পাওনা পরিশোধ করে না”।[3]

>
[1] .ইবন মাজাহ; মিশকাত, হাদীস নং ২৯৮৭।

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৮১; মিশকাত, হাদীস নং ৫১২৭।

[3] সহীহ বুখারী; মিশকাত, হাদীস নং ২৯৮৪।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে