যে সকল আকীদা, মতামত ও বক্তব্য আল-কুরআন ও সুন্নাতের বিপরীত কিংবা এ উম্মাতের সালাফে সালেহীনের ইজমা‘ বিরোধী সেগুলো শরী‘আতের দৃষ্টিতে বিদ‘আত। এই নীতির আলোকে নিম্নোক্ত দু’টি বিষয় শরী‘আতের দৃষ্টিতে বিদ‘আত ও প্রত্যাখ্যাত বলে গণ্য হবে।
প্রথম বিষয়: নিজস্ব আকল ও বিবেকপ্রসূত মতামতকে অমোঘ ও নিশ্চিত নীতিরূপে নির্ধারণ করা এবং কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যকে এ নীতির সাথে মিলিয়ে যদি দেখা যায় যে, সে বক্তব্য উক্ত মতামতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তাহলে তা গ্রহণ করা এবং যদি দেখা যায় যে, কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্য উক্ত মতামত বিরোধী তাহলে সে বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা। অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ্র উপরে নিজের আকল ও বিবেককে অগ্রাধিকার দেওয়া।
শরী‘আতের দৃষ্টিতে এ বিষয়টি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ ব্যাপারে ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন: ‘‘বিবেকের মতামত অথবা কিয়াস দ্বারা আল কুরআনের বিরোধিতা করাকে সালাফে সালেহীনের কেউই বৈধ মনে করতেন না। এ বিদ‘আতটি তখনই প্রচলিত হয় যখন জাহমিয়া, মু‘তাযিলা ও তাদের অনুরূপ কতিপয় এমন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে যারা বিবেকপ্রসূত রায়ের ওপর ধর্মীয় মূলনীতি নির্ধারণ করেছিলেন এবং সেই রায়ের দিকে কুরআনের বক্তব্যকে পরিচালিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন, যখন বিবেক ও শরী‘আর মধ্যে বিরোধিতা দেখা দিবে তখন হয় শরী‘আতের সঠিক মর্ম বোধগম্য নয় বলে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা হবে অথবা বিবেকের রায় অনুযায়ী তাবীল ও ব্যাখ্যা করা হবে। এরা হলো সে সব লোক যারা কোনো দলীল ছাড়াই আল্লাহর আয়াতের ব্যাপারে তর্ক করে থাকে।’’[1]
ইবনু আবিল ‘ইয আল-হানাফী রহ. বলেন, ‘‘বরং বিদ‘আতকারীদের প্রত্যেক দলই নিজেদের বিদ‘আত ও যাকে তারা বিবেকপ্রসূত যুক্তি বলে ধারণা করে তার সাথে কুরআন ও সুন্নাহর বক্তব্যকে মিলিয়ে দেখে। কুরআন সুন্নাহর সে বক্তব্য যদি তাদের বিদ‘আত ও যুক্তির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয় তাহলে তারা বলে, এটি মুহকাম ও দৃঢ়বক্তব্য। অতঃপর তারা তা দলীলরূপে গ্রহণ করে। আর যদি তা তাদের বিদ‘আত ও যুক্তির বিপরীত হয় তাহলে তারা বলে, এটি মুতাশাবিহাত ও আবোধগম্য, অতঃপর তারা তা প্রত্যাখ্যান করে..........অথবা মূল অর্থ থেকে পরিবর্তন করে’’[2]
দ্বিতীয় বিষয়: কোনো জ্ঞান ও ইলম ছাড়াই দীনী বিষয়ে ফাতাওয়া দেওয়া। ইমাম শাতিবী রহ. বলেন, ‘‘যারা অনিশ্চিত কোনো বক্তব্যকে অন্ধভাবে মেনে নেওয়ার ওপর নির্ভর করে অথবা গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ছাড়াই কোনো বিষয়কে প্রাধান্য দেয়, তারা প্রকৃত পক্ষে দীনের রজ্জু ছিন্ন করে শরী‘আত বহির্ভূত কাজের সাথে জড়িত থাকে। আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে এ থেকে আমাদেরকে নিরাপদ রাখুন। ফাতওয়ার এ পদ্ধতি আল্লাহ তা‘আলার দীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবিত বিদ‘আতেরই অন্তর্ভুক্ত, তেমনিভাবে আকল বা বিবেককে দীনের সর্বক্ষেত্রে Dominator হিসেবে স্থির করা নবউদ্ভাবিত বিদ‘আত।’’[3]
>[2] শরহুল আকীদা আত-ত্বহাবিয়া, পৃ. ১৯৯৯
[3] আল-ই‘তিসাম ২/১৭৯