রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সাহাবীগণ কিরূপে শরী‘আতসম্মত অসীলাকে বাস্তবায়ন করেছেন?

সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম অসীলা-এর প্রকৃত অর্থ বুঝতে পেরেছিলেন। আর তারা এটাও বুঝতে পেরেছিলেন যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ডাকে সে হলো মুশরিক ও কাফির, যদিও সে নৈকিট্যশীল কোনো ফিরিশতাকে ডাকুক অথবা প্রেরিত নবীকে। এজন্য সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম কঠিনতম পরিস্থিতিতেও এই কাজ করতেন না। এ ব্যাপারে উদহারণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর সাহাবীগণের জীবদ্দশায় উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফতকালে দূর্ভিক্ষ দেখা দিল, তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে বৃষ্টির জন্য দো‘আ করতে বললেন। এমনকি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাতের স্থানে দাঁড়িয়ে বলেন,

اللهم إنا كنا نتوسل إليك بنبينا فتسقينا ، وإنا نتوسل إليك بعم نبينا فاسقنا ، قال: فيسقون

“হে আল্লাহ নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে আমাদের নবীর অসীলা করতাম, ফলে তুমি বৃষ্টি বর্ষণ করতে আর আমরা এখন তোমার কাছে নবীজির চাচার অসীলা করছি তুমি বৃষ্টি বর্ষণ কর, ফলে বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়।”

তখন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু দো‘আ করছিলেন আর অন্যান্য সাহাবীগণ আমীন বলছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেসব সাহাবীগণ কেন তা করেন নি যা আমাদের বর্তমান যুগে কিছু মানুষ করে থাকে, তারা মুক্তি প্রার্থনা করে অথবা শাফা‘আত চায়। অথচ সাহাবীগণ হালাল এবং হারাম সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত ছিলেন, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করেছিলেন, তাঁর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন, তাঁর সাথে হজ করেছেন, তাঁর মসজিদে বসেছেন, তাঁর খুৎবা শ্রবণ করেছেন, তাঁর শিষ্টাচারে শিষ্টাচারিত হয়েছেন এবং তাঁর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন।

অনুরূপভাবে কোনো নবী বা ওলী ও অন্যান্য কবরের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয নয়, কেননা এসব অসীলা শির্কের দিকে ধাবিতকারী অসীলাসমূহের অন্যতম। আর অসীলাসমূহের বিধি-বিধান মূল জিনিসের অন্তর্ভুক্ত। এ কারণে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পাই যে, তিনি তা হারাম ঘোষণা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন,

«لا تشد الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد: المسجد الحرام، ومسجد الرسول صلى الله عليه وسلم، ومسجد الأقصى» [1]

“তোমরা তিন মসজিদ ব্যতীত সফর করবে না, মসজিদে হারাম, আমার এই মসজিদ ও মসজিদে আকসা।”

আর এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো কোনো নেককার ব্যক্তির কবর অথবা ওলীর মাযার ও অন্যান্য ব্যাপারে সফর সংগঠিত করা যাবে না। আর আমরা আমাদের জীবন, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি, পরিবার-পরিজন ও ধর্ম সম্পদের চেয়েও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিক ভালোবাসি। আর আমরা সাহাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে ভালোবাসি, আমরা সৎকর্মশীল ওলীগণকে ভালোবাসি আর যারা ওলীগণের সাথে বন্ধুত্ব করে আমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করি আর যারা ওলীগণের সাথে শত্রুতা করে আমরা তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করি। আমরা জানি, যে কেউ আল্লাহর ওলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করে নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তুমি আমাকে তোমার রবের শপথ করে বল, এসব ভালোবাসা এবং তাদের ভালোবাসা আমাদেরকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করার, আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করার, তাদের (নবীগণ ও ওলীগণ) অসীলা করার, তাদের কবরসমূহ প্রদক্ষিণ করার, তাদের জন্য মান্নত করার এবং তাদের নৈকট্যশীলতার জন্য তাদের উদ্দেশ্যে কুরবানী করার দাবী রাখে কি? এ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সৃষ্টিকে আহ্বান করা, যে বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত তারা ক্ষমতাবান নন, তা মহান আল্লাহর সাথে শির্ক হিসেবে গণ্য। আর এমনিভাবে যে কেউ কোনো ওলী ও সৎকর্মশীলগণের কবরের কাছে আসে অতঃপর বিভিন্ন প্রয়োজন তাদের কাছে চায় যেমন রোগমুক্তির জন্য, অনুপস্থিত ফেরত পাওয়ার জন্য, বন্ধান্ত দুরীকরণের জন্য তাদের দ্বারস্থ হয় সেটাও একই হুকুম রাখে। যদিও তারা বলে যে আমরা বিশ্বাস করি সবকিছু পবিত্রতম মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। আর এটা তা-ই যা ইতোপূর্বে জাহেলী যুগের লোকদের শির্ক সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। যাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন আর এটাই হলো বড় শির্ক।

>
[1] বুখারী, (৩/৭৬)মুসলিম (২/১০১৪) আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীস হতে।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১ পর্যন্ত, সর্বমোট ১ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে