সহীহাইনে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالخَيْرِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ، حَتَّى يَنْسَلِخَ، يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ القُرْآنَ، فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ أَجْوَدَ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ».
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযানের প্রতি রাতেই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন”।[1]
মুসনাদে আহমাদে আরও বর্ধিত আছে,
«لَا يُسْأَلُ عَنْ شَيْءٍ إِلا أَعْطَاهُ».
“তার কাছে কোনো কিছু চাওয়া হলেই তাকে তা দিয়ে দিতেন”।[2]
....
হাদীসে বর্ণিত الجودُ শব্দের অর্থ, ব্যাপক দান খয়রাত। আল্লাহ নিজেকে الجودُ গুণে গুণান্বিত করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা হলেন সর্বাধিক দানশীল, তাঁর দান বিশেষ সময় অনেকগুণে বৃদ্ধি পায়। যেমন, রমযান মাসে। এ মাসেই তিনি কুরআন নাযিল করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ١٨٦﴾ [البقرة: ١٨٦]
“আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৬]
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টিগতভাবে সর্বাধিক পরিপূর্ণ ও সর্বোৎকৃষ্ট গুণ দিয়ে তৈরী করেছেন। যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
«بعثت لأتمم مَكَارِم الْأَخْلَاق».
“আমি সচ্চরিত্রকে পরিপূর্ণ করতে প্রেরিত হয়েছি”।[3] তাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণভাবেই সকল মানুষের চেয়ে সর্বাধিক দানশীল ব্যক্তি ছিলেন, যেমন তিনি সর্বাধিক সম্মানিত, বীর ও সমস্ত প্রশংসিত গুণাবলীতে পরিপূর্ণ ছিলেন। তার দানশীলতা সব ধরণের দানশীলতাকে অন্তর্ভুক্ত করে। আর রযমান মাসে তার দানশীলতা অন্যান্য মাসের চেয়ে অনেকগুণ বেড়ে যেত, যেমনিভাবে তার রবের দানও রমযানে অনেকগুণ বেড়ে যায়।
রমযান মাসে তিনি ও জিবরীল আলাইহিস সালাম মিলিত হতেন। আর জিবরীল আলাইহিস সালাম হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত ফিরিশতা। তারা উভয়ে মিলে নাযিলকৃত কুরআন পরস্পর পড়ে শুনাতেন। আর কুরআন হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম কিতাব, যা ইহসান ও উত্তম আখলাকের প্রতি উৎসাহিত ও অনুপ্রেরিত করে। আর এ সম্মানিত কিতাবই ছিল রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্র, যেহেতু তিনি এ কিতাবের সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট ছিলেন, এ কিতাবের অসন্তুষ্টিতে অসন্তুষ্ট ছিলেন, এ কিতাব সেসব বিষয়ে উৎসাহিত করেছে তিনি সেসব কাজ করতে দ্রুত এগিয়ে আসতেন এবং যা কিছু থেকে বিরত থাকতে ধমক দিয়েছে তিনিও তা থেকে বিরত থাকতেন। তার হায়াত শেষ হওয়া নিকটবর্তী হওয়ার কারণে এ মাসে তার দান-খয়রাত ও দয়া বহুগুণে বৃদ্ধি পেত যখন জিবরীল আলাইহিস সালামের সাথে রমযানে সাক্ষাৎ করতেন ও পরস্পর পরস্পরকে বেশি বেশি কুরআন পড়ে শুনাতেন।
উত্তম চরিত্র ও দানশীলতার প্রতি অনুপ্রেরণা দানকারী এ কিতাব নিঃসন্দেহে জিবরীল আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাতের কারণে উত্তম আখলাকের এক বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছে।
রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দানশীলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ার মধ্যে অনেক উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি হলো:
১. সময়ের মর্যাদা ও এতে আমলের সাওয়াব অনেকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া।
২. সাওম পালনকারী ও আল্লাহর যিকিরকারীকে তাদের ইবাদতের কাজে সাহায্য করলে তাদের সাওয়াবের অনুরূপ সাওয়াব পাওয়া যায়, যেমনিভাবে কেউ আল্লাহর পথের মুজাহিদকে জিহাদে যাওয়ার উপকরণ প্রস্তুত করে দিলে সেও জিহাদের সাওয়াব পাবে এবং কেউ মুজাহিদের পরিবার-পরিজনের কল্যাণে বাড়ি থাকলেও সে জিহাদের সাওয়াব পাবে।
যায়েদ ইবন খালিদ আল-জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِمْ، مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا».
“কেউ যদি কোনো সাওম পালনকারীকে ইফতার করায় তবে তার জন্যও অনুরূপ (সিয়ামের) সাওয়াব হবে। কিন্তু এতে সাওম পালনকারীর সাওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না”।[4]
৩. রমযান এমন একটি মাস যাতে আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন, বিশেষ করে লাইলাতুল কদরে। আল্লাহ এ রাতে তাঁর দয়ালু বান্দার ওপর রহমত বর্ষণ করেন। যেমন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وَإِنَّمَا يَرْحَمُ اللَّهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ».
“আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাঝে যারা দয়ালু, তিনি তাদের প্রতি রহম করেন”।[5] সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদতে কঠোর পরিশ্রমী হবে আল্লাহও তার প্রতি দান, দয়া ও আমলের সাওয়াব সেভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে দান করবেন।
৪. সাওম ও সদাকা একত্রিত হলে জান্নাত পাওয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে যায়।
«إِنَّ فِي الجَنَّةِ غُرَفًا تُرَى ظُهُورُهَا مِنْ بُطُونِهَا وَبُطُونُهَا مِنْ ظُهُورِهَا» ، فَقَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: لِمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «لِمَنْ أَطَابَ الكَلَامَ، وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ، وَأَدَامَ الصِّيَامَ، وَصَلَّى بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ».
“জান্নাতে একটি প্রাসাদ রয়েছে যার ভিতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভিতর পরিদৃষ্ট হবে। তখন এক বেদুঈন উঠে দাঁড়ালেন, বললেন, হে আল্লাহর রাসূল এটি কার হবে? তিনি বললেন, এটি হবে তার যিনি ভালো কথা বলে, অন্যকে খাদ্য খাওয়ায়, সর্বদা সাওম পালন করে এবং যখন রাতে মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন সে উঠে সালাত আদায় করে”।[6]
এসব গুণাবলীর সবগুলোই রমযান মাসে পাওয়া যায়। ফলে মুমিন এ মাসে সিয়াম, সালাত, সদকা ও উত্তম কথাবার্তা বলে থাকেন। কেননা সাওম তাকে অনর্থক ও অশ্লীল কথা ও কাজ থেকে বিরত রাখে এবং সালাত ও সদকা ব্যক্তিকে আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে।
কোনো এক সৎপূর্বসূরী বলেছেন: সালাত ব্যক্তিকে অর্ধেক পথ পর্যন্ত পৌঁছায়, সাওম তাকে মহান মালিকের দরজা পর্যন্ত পৌঁছায়, সদকা তার হাত ধরে মহান মালিকের কাছে প্রবেশ করায়।
সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন জিজ্ঞাসা করলেন,
«مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، قَالَ: «فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا؟» قَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: أَنَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ، إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ».
“তোমাদের মধ্যে আজ কে সিয়াম পালনকারী আছে? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি সাওম পালনকারী। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কে জানাযার সাথে চলেছ? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি। তিনি বললেন, আজ তোমাদের কে মিসকীনকে খাদ্য খাইয়েছ? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন আমি। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ রোগীর শুশ্রূষা করেছ? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার মধ্যে এই কাজসমূহের সমাবেশ ঘটবে সে নিশ্চয়ই জান্নাতে প্রবেশ করবে”।[7]
[2] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২০৪২, শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[3] মুসনাদ বাযযার, হাদীস নং ৮৯৪৯; মুসতাদরাক হাকিম, হাদীস নং ৪২২১, ইমাম হাকিম হাদীসটিকে মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবীও একমত পোষণ করেছেন। আস-সুনান আল-কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং ২০৭৮২।
[4] তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৭, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৭৪৬। ইমাম আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন হিব্বান, ৩৪২৯।
[5] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২৮৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৯২৩।
[6] তিরমিযী, হাদীস নং ১৯৮৪, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[7] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৮২।
৫. সাওম ও সদকা একত্রিত হলে তা গুনাহের কাফফার জন্য সর্বাধিক কার্যকরী, জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ও জাহান্নাম থেকে দূরে অবস্থানকারী, বিশেষ করে এর সাথে যদি কিয়ামুল লাইল যুক্ত হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে,
«الصِّيَامُ جُنَّةٌ كَجُنَّةِ أَحَدِكُمْ مِنَ الْقِتَالِ».
“সাওম এমন ঢালস্বরূপ, তোমাদের যুদ্ধে ব্যবহৃত ঢালের ন্যায়”।[1]
মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে,
«الصِّيَامُ جُنَّةٌ، وَحِصْنٌ حَصِينٌ مِنَ النَّارِ».
“সাওম ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাত থেকে মুক্তির সুদৃঢ় সুরক্ষা”।[2]
মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الْخَطِيئَةَ، وَصَلَاةُ الرَّجُلِ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ».
“এবং সাদাকা (যাকাত) বা দান খায়রাত) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। এমনিভাবে গভীর রাতে ব্যক্তির কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জু্র)ও গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়।”[3]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ».
“তোমারা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচ (নিজেকে রক্ষা কর) যদিও তা খেজুরের টুকরা দ্বারাও হয় (সামান্য বস্তু সদাকা করতে পারলেও তা কর)”।[4]
আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘তোমরা রাতের অন্ধকারে দুরাক‘আত সালাত আদায় করো কবরের অন্ধকার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য, প্রচণ্ড গরমের দিনে সাওম পালন করো হাশরের ময়দানের গরম থেকে বাঁচার জন্য, কিয়ামতের ভয়াবহ দিনের আযাব থেকে রক্ষা পেতে গোপনে সদকা দাও।’
৬. রমযান মাসে সাওম পালন করতে গিয়ে অনেক সময় কিছু ভুল-ত্রুটি ও কমতি দেখা দেয়। সাওম গুনাহের কাফফারা হওয়ার শর্ত হচ্ছে যেসব বিষয় থেকে হিফাযত থাকা অত্যাবশ্যকীয় সেসব বিষয় থেকে বিরত থাকা। যেমন, ইবন হিব্বানে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, অধিকাংশ সাওম পালনকারীই যেভাবে সাওম পালন করা দরকার সেভাবে সাওম পালনের শর্তাবলী তাদের মধ্যে একত্রিত হয় না। এ কারণেই কোনো ব্যক্তিকে এভাবে বলতে নিষেধ করা হয়েছে যে, আমি পুরো রমযান সাওম পালন করেছি বা পুরো রাত সালাত আদায় করেছি। অতএব, এসব সদকার দ্বারা সাওম পালনে সংঘটিত ভুল-ত্রুটিসমূহের কাফফারা হয়ে যায়। এ কারণেই রমযান শেষে সাওম পালনকারীকে অনর্থক ও অশ্লীল কথাবার্তা ও কাজ থেকে পবিত্র করতে যাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে।
৭. সাওম পালানকারী সাওম অবস্থায় পানাহার পরিহার করে থাকে। আর কেউ সায়িমদেরকে পানাহার সরবাহ করে তাদেরকে শক্তিশালী করলে তার অবস্থা ঐ ব্যক্তির মতোই যে নিজে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য প্রবৃত্তিকে ত্যাগ করল এবং এর দ্বারা সে সহমর্মিতা দেখালো। এ কারণেই সায়িমের সাথে অন্য সায়িমকে ইফতার করানো শরী‘আতসম্মত হয়েছে। কেননা ইফতারের সময় খাদ্য গ্রহণ তার কাছে অনেক প্রিয়, ফলে সে সহমর্মিতা দেখিয়ে তার সাথে অন্যকে খাওয়ালো, যদিও সে খাদ্যের প্রতি তার নিজেরই ভালোবাসা ছিল। এভাবে কাজটি করার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা পানাহার হারাম করার পরে তার জন্য হালাল করে তাকে যে নি‘আমত দান করেছেন সে নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় করা। কেননা কোনো কিছু নিষেধ করার পরে উক্ত জিনিসের প্রকৃত মর্যাদা বুঝা যায়।
কোনো এক ‘আরিফ বিল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হলো, শরী‘আতে কেন সাওম বিধিবদ্ধ করা হয়েছে? তিনি বললেন, ধনীরা যাতে ক্ষুধার যন্ত্রণা অনুভব করতে পারে, ফলে সে ক্ষুধার্তকে কখনও ভুলবে না। এটি সাওম শরী‘আতসম্মত হওয়ার কিছু উপকারিতা। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, “রমযান মাস পরস্পর সহমর্মিতার মাস।” যে ব্যক্তি অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পর্যায়ে পৌঁছতে পারবে না সে সহমর্মিতার দলের স্তরে পৌঁছতে পারবে না। অনেক পূর্বসূরীরা ইফতারের সময় সহমর্মিতা ও অন্যকে অগ্রাধিকার দিতেন। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা মিসকীন ব্যতীত ইফতার করতেন না। পরিবারের কেউ নিষেধ করলে তিনি সে রাতে কিছু খেতেন না। তিনি খাদ্য খাওয়ার সময় কেউ আসলে তিনি তার ভাগের খাবার নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন এবং কোনো প্রার্থনাকারীকে দিতেন। তিনি যখন ঘরে ফিরে আসতেন তখন অন্যদের খাবার খাওয়া শেষ হয়ে যেত। ফলে তিনি না খেয়েই সেদিন সাওম পালন করতেন।
এক সৎব্যক্তি সারাদিন সাওম পালন করে খাবার খাওয়ার ইচ্ছা করল। এমতাবস্থায় তার কাছে আরেকজন সাওম পালনকারী এসে বলল, কে আছ সত্যবাদী ক্ষুধার্ত এক ব্যক্তিকে খাদ্য দিবে? তখন তিনি বললেন, সাওয়াব বিহীন আল্লাহর এ বান্দা খাদ্য দিবে। তখন উক্ত ব্যক্তি খাবারের বাটি নিয়ে চলে গেল আর সৎলোকটি ক্ষুধার্ত থেকেই রাত কাটাল।
একলোক ইমাম আহমাদ রহ.-এর কাছে এসে কিছু চাইল। তিনি তার ইফতারির জন্য প্রস্তুতকৃত দু’টি রুটিই তাকে দান করে দিলেন। অতঃপর তিনি ক্ষুধার্ত অবস্থায়ই সকাল করলেন। হাসান রহ. সাওম পালন করে নিজে না খেয়ে লোকদেরকে খাবার খাওয়াতেন এবং পাশে বসে তাদেরকে খাওয়ার জন্য উৎসাহিত করত।
৮. সাওমের আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে। ইমাম শাফে‘ঈ রহ. বলেছেন: রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে এবং মানুষের কল্যাণ, প্রয়োজনীয়তা ও সালাত-সাওমের ব্যস্ততার কারণে জীবিকা নির্বাহে কম সময় পাওয়ার কারণে রমযান মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করা আমি পছন্দ করি। ৯. রমযান মাসে বেশি পরিমাণে পরস্পর কুরআন পাঠ, শিক্ষা দেওয়া, এ জন্য একত্রিত হওয়া ও যিনি ভালো হাফিয তার কাছে কুরআন শুনানো ইত্যাদি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ হাদীসে রমযান মাসে অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত মুস্তাহাব প্রমাণিত।
>[2] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ৯২২৫, শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, তবে এ সনদটিকে হাসান বলেছেন।
[3] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২২০১৬, শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে তুরুক ও শাওয়াহেদের ভিত্তিতে সহীহ বলেছেন, তবে এ সনদটি মুনকাতি‘।
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০১৬।
ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার হাদীসে এসেছে,
«أَنَّ جِبْرَائِيلَ كَانَ يُعَارِضُهُ بِالْقُرْآنِ فِي كُلِّ عَامٍ مَرَّةً، وَأَنَّهُ عَارَضَهُ بِهِ الْعَامَ مَرَّتَيْنِ».
“জিবরীল আলাইহিস সালাম প্রতি বছর আমাকে একবার কুরআন পড়ে শুনাতেন। এ বছর তিনি তা আমাকে দু’বার পড়ে শুনিয়েছেন”।[1]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরীল পরস্পর রাতের বেলায় কুরআন পড়ে শুনাতেন।[2] অতএব, রমযানে রাতের বেলায় বেশি পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। কেননা রাতের বেলায় মানুষ ঝামেলা মুক্ত থাকে, সমস্ত হিম্মত একত্রিত হয়, অন্তর ও যবান চিন্তা-গবেষণার জন্য একনিষ্ঠ হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿إِنَّ نَاشِئَةَ ٱلَّيۡلِ هِيَ أَشَدُّ وَطۡٔٗا وَأَقۡوَمُ قِيلًا٦﴾ [المزمل: ٦]
“নিশ্চয় রাত জাগরণ আত্মসংযমের জন্য অধিকতর প্রবল এবং স্পষ্ট বলার জন্য অধিকতর উপযোগী”। [সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত: ৬]
কুরআনের সাথে রয়েছে রমযান মাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِ١٨٥﴾ [البقرة: ١٨٥]
“রমযান মাস, যাতে কুরআন নাযিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, আল-কুরআন লাওহে মাহফূয থেকে বাইতুল ইয্যতে কদরের রাত্রিতে একত্রে নাযিল হয়।[3] এ মতের পক্ষে দলীল হলো আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী,
﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ١﴾ [القدر: ١]
“নিশ্চয় আমরা এটি (কুরআন) নাযিল করেছি লাইলাতুল কদরে”।[সূরা আল-কাদর, আয়াত: ১]
﴿إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةٖ مُّبَٰرَكَةٍ٣﴾ [الدخان: ٣]
“নিশ্চয় আমরা এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে।” [সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৩] রমযান মাসেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহীপ্রাপ্ত হন, এ মাসেই তার ওপর কুরআন নাযিল হয় এবং তিনি অন্যান্য সময়ের তুলনায় রমযানে কিয়ামুল লাইলে দীর্ঘ সময় ধরে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে রমযান মাসে রাতে সালাত আদায় করেছেন। তিনি বলেন,
«ثُمَّ قَرَأَ الْبَقَرَةَ، ثُمَّ النِّسَاءَ، ثُمَّ آلَ عِمْرَانَ، لَا يَمُرُّ بِآيَةِ تَخْوِيفٍ إِلَّا وَقَفَ عِنْدَهَا... فَمَا صَلَّى إِلَّا رَكْعَتَيْنِ حَتَّى جَاءَ بِلَالٌ فَآذَنَهُ بِالصَّلَاةِ».
“অতঃপর তিনি সূরা আর-বাকারাহ পড়লেন, অতঃপর সূরা আন-নিসা, অতঃপর সূরা আলে ইমরান পড়লেন। ভয়-ভীতির আয়াত আসলেই তিনি থেমে যেতেন (সেখানে চিন্তা-ভাবনা করতেন), এভাবে মাত্র দু’রাকাত সালাত আদায় করতেই বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এসে ফজরের আযান দিলেন”।[4] নাসায়ীর বর্ণনায় এসেছে,
«فَمَا صَلَّى إِلَّا أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ».
“এভাবে মাত্র চার রাকাত সালাত আদায় করতেই বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ফজরের আযান দিলেন”।[5]
«وكان عُمر رضي الله عنه: أمر أبيَّ بن كعب، وتميمًا الداريَّ، أن يقوما بالناسِ في شهر رمضان، فكان القارئ يقرأ بالمائتين في الركعة، حتى كانوا يعتمدون على العصي من طول القيام، وما كانوا ينصرفون إلا عند الفجر».
উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তামীম আদ-দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে রমযান মাসে লোকদেরকে জামা‘আতে সালাত আদায় করার জন্য ইমাম নিযুক্ত করেন। তারা এক রাকাতে দু’শ পরিমাণ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। এমনকি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তারা লাঠিতে ভর দিয়ে সালাত আদায় করতেন এবং ফজরের আগে তারা ফিরতেন না।[6] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তারা মসজিদের খুঁটির সাথে রশি লাগাতেন, তাতে নিজেদেরকে আটকে রাখতেন।
বর্ণিত আছে যে,
«أن عمر جمع ثلاثة قراء، فأمر أسرعهم قراءة أن يقرأ بالناس بثلاثين، وأوسطهم بخمس وعشرين، وأبطأهم بعشرين».
“উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তিনজন কারীকে একত্রিত করে তাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যে ব্যক্তি দ্রুততার সাথে তিলাওয়াত করবে সে এক রাকাতে ত্রিশ আয়াত পরিমাণ পড়বে, মধ্যম গতিতে তিলাওয়াতকারী পঁচিশ আয়াত ও ধীরগতির তিলাওয়াতকারী বিশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করবে”।[7] অতঃপর তাবে‘ঈদের যুগে আট রাকাত তারাবীতে সূরা বাকারা তিলাওয়াত করা হতো। তারা বারো রাকাত তারাবীহ আদায় করলে আরেকটু হালকা তথা আরো কম পরিমাণে তিলাওয়াত করত। ইমাম আহমাদ রহ. কে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নির্ধারণকৃত দ্রুত ও ধীর গতির কারীর আয়াতের পরিমাণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এ পরিমাণ তিলাওয়াত করা মানুষের জন্য কষ্টকর, বিশেষ করে রাত্রি যখন ছোট হয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষ যতটুকু গ্রহণ করতে পারে ততটুকুই তিলাওয়াত করা উচিৎ। ইমাম আহমদ রহ. রমযানে তারাবীর ইমামতি পালনকারী তার এক ছাত্রকে বললেন, তারা দুর্বল লোক। সুতরাং তাদেরকে নিয়ে পাঁচ বা ছয় বা সাত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করো। ফলে তিনি এভাবেই তিলাওয়াত করলেন এবং সাতাশ রমযান কুরআন খতম করলেন। হাসান রহ. বলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যাদেরকে লোকদের ইমামতির দায়িত্ব দিয়েছেন তাদেরকে পাঁচ ছয় আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করতে বলেছেন।
অতএব, ইমাম আহমাদ রহ. এর মত দ্বারা এটিই প্রমাণিত হয় যে, মুসল্লীর অবস্থা ভেদে ইমাম তিলাওয়াত করবেন যাতে তাদের কষ্ট না হয়। অনেক ফকীহ এ মতানুযায়ী তাদের মত ব্যক্ত করেছেন।
«فَقُلْنَا لَهُ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ نَفَّلْتَنَا بَقِيَّةَ لَيْلَتِنَا هَذِهِ؟ فَقَالَ: إِنَّهُ مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ».
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সালাত আদায় করলেন, পরবর্তীতে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত সালাত আদায় করলেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের রাতের অবশিষ্ট অংশটিও যদি নফল আদায় করে অতিবাহিত করে দিতেন! তিনি বললেন, কেউ যদি ইমামের সঙ্গে সালাতে দাঁড়ায় এবং ইমামের শেষ করা পর্যন্ত তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকে তবে তার জন্য সারারাত (নফল) সালাত আদায়ের সওয়াব লেখা হয়”।[8]
এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাতের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধরাত কিয়ামুল লাইল আদায় করলে সারারাত নফল সালাত আদায়ের সাওয়াব লিখা হয়, তবে শর্ত হচ্ছে ইমামে সাথে থাকতে হবে। ইমাম আহমাদ রহ. এ হাদীস গ্রহণ করতেন এবং ইমাম শেষ না করা পর্যন্ত তার সাথে থাকতেন। কেউ কেউ বলেছেন: যে ব্যক্তি রাতের অর্ধেক কিয়ামুল লাইল আদায় করে সে যেন সারারাতই সালাত আদায় করল। আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ قَامَ بِعَشْرِ آيَاتٍ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الغَافِلِينَ، وَمَنْ قَامَ بِمِائَةِ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ القَانِتِينَ، وَمَنْ قَامَ بِأَلْفِ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ المُقَنْطِرِينَ».
“যে ব্যক্তি রাতের বেলায় সালাতে দশ আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করবে তার নাম গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হবে না, আর যে ব্যক্তি একশত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করবে তাকে কানেতীনদের (চির অনুগত) অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং যে ব্যক্তি একহাজার আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করবে তাকে মুকানতিরীনদের (অঢেল সম্পদশালী) দলভুক্ত করা হবে।”[9]
...যে ব্যক্তি আরও বেশি তিলাওয়াত করতে চায় ও দীর্ঘ সময় ধরে সালাত আদায় করতে আগ্রহী হলে একাকী সালাত আদায় করলে যত ইচ্ছা দীর্ঘ করতে পারবে। এমনিভাবে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায় করলেও জামা‘আতে যতটুকু তিলাওয়াত করা হয় ততটুকুর উপর সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। কতিপয় সৎপূর্বসূরী বলেছেন: রমযানে প্রতি তিন রাতে তারাবীহ’তে কুরআন খতম করা যায়, কেউ কেউ সাত রাতের কথা বলেছেন। আবার কেউ দশ রাতের কথাও উল্লেখ করেছেন।
[2] «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالخَيْرِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ، حَتَّى يَنْسَلِخَ، يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ القُرْآنَ، فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ أَجْوَدَ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ»
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।” সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০২। (অনুবাদক)
[3] আল-আহাদীসুল মুখরাতাহ, যিয়াউদ্দীন আল-মাকদীসী, হাদীস নং ৩৮৭।
[4] নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৬৪, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন; মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ২৩৩৯, শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, তবে এ সনদটি দ‘ঈফ।
[5] নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৬৫, আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[6] মুখতাসারু কিয়ামুল লাইল, মুহাম্মাদ ইবন নসর আল-মারওয়াযী, পৃ. ২২০; কিয়ামু রমযান, নাসির উদ্দীন আলবানী রহ. পৃ. ২৪।
[7] মুসাননাফ আব্দুর রাযযাক, ৪/২৬১/৭৭৩১; বায়হাকী, ২/৪৯৭; কিয়ামু রমযান, নাসির উদ্দীন আলবানী রহ. পৃ. ২৪, তিনি এ বর্ণনাগুলোকে সহীহ বলেছেন।
[8] তিরমিযী, হাদীস নং ৮০৬, ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। নাসাঈ, হাদীস নং ১৬০৫, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ২২০৬, ‘আযামী রহ. বলেছেন, হাদীসের সনদটি সহীহ। ইবন হিব্বান, ২৫৪৭। শু‘আইব আরনাঊত বলেছেন, হাদীসের সনদটি মুসলিমের শর্তে সহীহ।
[9] আবু দাউদ, হাদীস নং ১৩৯৮। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।