সহীহাইনে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ، الْحَسَنَةُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعمِائَة ضِعْفٍ، قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: إِلَّا الصَّوْمَ، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي. لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ، ولَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ».
“আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই দশগুণ থেকে সাতশত গুণ বৃদ্ধি করা হয়। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কিন্তু সাওম ব্যতীত। কেননা তা আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেবো। সে আমার সন্তুষ্টির জন্য কামাচার ও পানাহার পরিত্যাগ করে। সাওম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। সাওম পালনকারীর মুখের (না খাওয়াজনিত) ঘ্রাণ আল্লাহর নিকট মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম”।[1]
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
«قَالَ اللَّهُ: كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلَّا الصِّيَامَ، فَإِنَّهُ لِي».
“সাওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য; কিন্তু সাওম আমার জন্য”।[2]
বুখারীর বর্ণনায় এসেছে,
«لِكُلِّ عَمَلٍ كَفَّارَةٌ، وَالصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ».
“প্রত্যেক আমলেরই কাফফারা আছে। সাওম আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেবো”।[3]
মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় এসেছে,
«لِكُلِّ عَمَلٍ كَفَّارَةٌ، وَالصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ».
“প্রত্যেক আমলেরই কাফফারা আছে। সাওম আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেবো”।[4]
প্রথম বর্ণনায় সাওমকে অন্যান্য আমলের বর্ধিত সাওয়াব থেকে আলাদা করা হয়েছে। অন্যান্য আমলের সাওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশত গুণ করার কথা বলা হলেও সাওমের ব্যাপারটি আলাদা। কেননা এর সাওয়াব সীমাবদ্ধ নয়; বরং আল্লাহ সাওমের সাওয়াব বহু গুণে দান করবেন। কেননা সাওম সবর তথা ধৈর্য থেকে এসেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِ حِسَابٖ ١٠﴾ [الزمر: ١٠]
“কেবল ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পূর্ণরূপে দেওয়া হবে কোনো হিসাব ছাড়াই”। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ১০]
এ কারণে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«شَهْرُ رمضان شهر الصَّبْرِ».
“রমযান মাস ধৈর্যের মাস”।[5]
ধৈর্য তিন প্রকার। আল্লাহর আনুগত্যের ওপর ধৈর্যধারণ করা, আল্লাহর হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকতে ধৈর্যধারণ করা এবং আল্লাহর ফয়সালাকৃত কষ্টের উপর ধৈর্যধারণ করা। এ তিন ধরণের ধৈর্য সাওমের মধ্যে একত্রিত হয়। সালমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
«وَهُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ، وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ».
“রমযান মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত”।[6]
.....
জেনে রাখুন আমলের সাওয়াব দ্বিগুণ থেকে বহুগুণ হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে। সেগুলো হলো:
প্রথমত: কাজটি করার স্থানটি মর্যাদাবান হওয়ার কারণে কাজের প্রতিদান বহুগুণে বেড়ে যায়। যেমন, হারাম শরীফের মর্যাদা। এ কারণেই মসজিদুল হারাম ও মসজিদ নববীতে সালাত আদায়ের সাওয়াব অনেকগুণ। যেমনটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
«صَلاَةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ صَلاَةٍ فِيمَا سِوَاهُ، إِلَّا المَسْجِدَ الحَرَامَ»
“আমার এ মসজিদে এক রাকাত সালাত আদায় করা অন্য মসজিদে একহাজার রাকাত সালাত আদায়ের চেয়েও উত্তম; তবে মসজিদুল হারাম ব্যতীত”।[7]
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,
«صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ».
“আমার এ মসজিদে সালাত আদায় করা উত্তম”।[8]
...
দ্বিতীয়ত: সময়ের মর্যাদার কারণে আমলে সাওয়াব অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। যেমন, রমযান মাস, যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন। ইবন ‘আব্বাসরাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাথেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
« عمرة في رمضان تَعْدِلُ حَجَّةً أو حجة مَعِي يَعْنِي عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ».
“রমযানে উমরা পালন হজের সমতুল্য অথবা আমার সাথে হজ পালনের সওয়াবের সমতুল্য হবে”।[9]
...
যেহেতু সাওমের সাওয়াব অন্যান্য আমলের চেয়ে বহুগুণ, সেহেতু রমযান মাসে সময়ের মর্যাদার কারণে সাওম পালন অন্যান্য সময় সাওম পালনের চেয়ে অনেকগুণ সাওয়াব। যেহেতু রমযানের সাওম আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর ফরয করেছেন এবং সাওমকে ইসলামের রুকনসমূহের অন্যতম একটি রুকন করেছেন।
আরো অন্য কারণে সাওয়াব দ্বিগুণ থেকে বহুগুণ করা হয়। যেমন, আল্লাহর কাছে আমলকারীর মর্যাদা, তার কাছে নৈকট্য ও তার তাকওয়ার কারণে। যেমন এ উম্মাতের সাওয়াব পূর্ববর্তী অন্যান্য উম্মাতের চেয়ে অনেকগুণ বেশি।
দ্বিতীয় বর্ণনায় বান্দার জন্য অন্যান্য আমলের থেকে সাওমের আলাদা সাওয়াবের কথা বলা হয়েছে। কেননা সাওমকে আল্লাহ নিজের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন। এ ব্যাপারে সামনে আরো আলোচনা আসছে।
তৃতীয় বর্ণনায় আমলের দ্বারা কাফফারা থেকে সাওমকে আলাদা করা হয়েছে।
এখানে সুফইয়ান ইবন ‘উয়াইনাহ রহ. এর বাণীটি খুবই চমৎকার। তিনি বলেছেন: নিম্নোক্ত হাদীসটি সবচেয়ে সুন্দর ও প্রজ্ঞাময়, কিয়ামতের দিন আল্লাহ বান্দার হিসেব নিবেন। তাকে সমস্ত আমলের সাওয়াব থেকে যুলুমের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, তবে সাওম ব্যতীত। তার অবশিষ্ট যুলুমের গুনাহ আল্লাহ নিজে বহন করে সাওমের কারণে তাকে তিনি জান্নাত দান করবেন।[10] এ হাদীস থেকে বুঝা গেল, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সাওম পালনকারীর সাওয়াব অন্য কেউ নেওয়ার সুযোগ নেই, বরং আল্লাহ তা ব্যক্তির জন্য সংরক্ষণ করে রাখেন। এ কারণেই বলা হয়, সমস্ত আমল ব্যক্তির গুনাহ কাফফারা। তখন তার আর কোন সাওয়াব অবশিষ্ট থাকবে না। যেমন বর্ণিত আছে, “কিয়ামতের দিনে ব্যক্তির ভালো ও মন্দ আমল ওজন করা হবে এবং একটির দ্বারা অন্যটির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিসাস তথা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পরে সৎ আমল অবশিষ্ট থাকলে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে”। এ ব্যাপারে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত হাদীস রয়েছে। অতএব, সাওমের ব্যাপারে বলা যায় যে, কোন গুনাহের কাফফারাস্বরূপ বা অন্য কোন কারণে সাওমের সাওয়াব কর্তন করা হবে না; বরং সাওমের সাওয়াব ব্যক্তিকে পরিপূর্ণ দেওয়া হবে, এমনকি এ কারণে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন জান্নাতে তার পরিপূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে।
>[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৪।
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৩৮।
[4] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১০৫৫৪। হাদীসের সনদটি শাইখাইনের শর্তানুযায়ী সহীহ।
[5] নাসাঈ, হাদীস নং ২৪০৮, আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ। ইবন হিব্বান, ৩৬৫৯।
[6] সহীহ ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ১৮৮৭। মুহাক্কীক মুহাম্মাদ মুস্তফা আল-‘আযামী রহ. হাদীসটিকে দ‘ঈফ বলেছেন।
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৯০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৪।
[8] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯৪।
[9] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১২৫৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ১৯৯০।
[10] সুনান আল-কুবরা, বাইহাকী, হাদীস নং ৮৩৩৫।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরবাণী «فإنه لي» “সাওম আমার জন্য” এর ব্যাখ্যা হলো, আল্লাহ সাওমকে তাঁর নিজের দিকে সম্বন্ধযুক্ত করেছেন যা তিনি অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রে করেন নি। এর কয়েক ধরণের অর্থ হতে পারে। সবচেয়ে সুন্দর দু’টি ব্যাখ্যা নিম্নরূপ:
প্রথমত: যখন প্রবৃত্তির চাহিদা চরম আকার ধারণ করে এবং তার সে চাহিদা পূরণের শক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এমন স্থানে সে চাহিদা পূরণ করা থেকে বিরত থাকে যেখানে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ তাকে দেখে না। এটি বান্দার সঠিক ঈমানের প্রমাণ। কেননা সাওম পালনকারী জানে যে, তার রয়েছ এমন একজন রব যিনি তার নির্জনের সব অবগত আছেন। তিনি নির্জনে তার স্বভাবজাত প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করতে হারাম করেছেন। ফলে বান্দা তার রবের শাস্তি থেকে রেহাই পেতে ও সাওয়াবের প্রত্যাশায় তাঁর আনুগত্য করল ও তাঁর আদেশ মান্য করল এবং তারঁ নিষেধ থেকে বিরত থাকল। এভাবে সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করল। তিনি তার অন্যান্য আমলের থেকে সাওমকে নিজের জন্য খাস করলেন। এ কারণেই তিনি এর পরে বলেছেন:
«يَتْرُكُ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِي».
“সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে”।[1]
একজন সৎপূর্বসূরী বলেছেন: ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যে গায়েবী প্রতিশ্রুতি পাওয়ার জন্য বর্তমানের প্রবৃত্তি পরিহার করল। মুমিন যেহেতু জানে যে, প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে বিরত থেকে সাওম পালনে তার প্রভুর সন্তুষ্টি রয়েছে, তাই সে নিজের প্রবৃত্তির ওপর তার মাওলা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ফলে সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। যেহেতু তার দৃঢ় ঈমান আছে যে, আল্লাহর দেওয়া সাওয়াব ও শাস্তি নির্জনে তার প্রবৃত্তির আনন্দের চেয়ে অধিক বেশি ও ভয়ানক। তাই সে তার প্রবৃত্তির ওপর তার রবের সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। বরং মুমিন কঠোর প্রহরের আঘাতের চেয়েও নির্জনে তার রবের অসন্তুষ্টিমূলক কাজ করতে বেশি অপছন্দ করে। এ কারণেই অনেক মুমিনকে বিনা ওযরে সাওম ভঙ্গ করতে বাধ্য করে প্রহর করলেও সে সাওম ভঙ্গ করতে রাজি হয় না। কেননা সে জানে, এ মাসে সাওম ভঙ্গ করা আল্লাহর অপছন্দ। আর এটির ঈমানের নিদর্শন। মুমিন প্রবৃত্তির চাহিদার কাজসমূহ অপছন্দ করে, যেহেতু সে জানে যে, এগুলো আল্লাহর অপছন্দ। তখন আল্লাহর সন্তুষ্টি মূলক কাজই তার আনন্দময়; যদিও তা তার প্রবৃত্তির বিপরীত। সাওমের কারণে যেহেতু নিম্নোক্ত কাজসমূহ হারাম যেমন, পানাহার, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি, অতএব যেসব কাজ সর্বদা ও সর্বত্রে চিরতরে হারাম সেগুলো থেকেও বিরত থাকা জরুরী যেমন, যিনা, মদপান, অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা, অন্যায়ভাবে অন্যের মান-সম্মান হানী করা, নিষিদ্ধ রক্তপাত করা ইত্যাদি। কেননা আল্লাহ এসব কাজ সর্বাবস্থায়, সর্বত্রে ও সর্বকালেই অপছন্দ করেন।
দ্বিতীয়ত: সাওম বান্দা ও তার রবের মধ্যকার গোপন ব্যাপার যা অন্য কেউ জানে না। কেননা সাওম সংঘটিত হয় গোপন নিয়াতের দ্বারা যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না এবং প্রবৃত্তির চাহিদা বর্জন করার মাধ্যমে যা বান্দা ইচ্ছা করলে গোপনে সেসব চাহিদা পূরণ করতে পারে। এ কারণেই বলা হয়ে থাকে, সাওমের সাওয়াব সংরক্ষণকারী ফিরিশতা লিপিবদ্ধ করেন না। আরও বলা হয়, এ ইবাদতের মধ্যে কোনো রিয়া তথা লৌকিকতা নেই। এটি প্রথম প্রকার তথা সঠিক ঈমানের প্রমাণের সাথে মিলে। কেননা যে ব্যক্তি তার নফসের কামনাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করে, যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানেন না এটি তার সঠিক ঈমানের প্রমাণ। আর আল্লাহ তাঁর ও বান্দার মধ্যকার গোপন আমলসমূহ পছন্দ করেন যা তিনি ব্যতীত কেউ জানে না।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, «ترك شهوتهُ وطعامه من أجلي» “সে আমার জন্য কামাচার ও পানাহার পরিত্যাগ করে”। এতে ঈঙ্গিত বহন করে যে, সাওম পালনকারী নিজের প্রবৃত্তির চাহিদা যেমন, পানাহার ও কামাচার ইত্যাদি সর্বোচ্চ প্রবৃত্তির কামনা পরিহার করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন।
আর সাওমের মাধ্যমে প্রবৃত্তির খাম-খেয়ালী পরিহার করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে রয়েছে অনেক উপকারিতা। সেগুলো নিম্নরূপ:
১- প্রবৃত্তিকে বিনষ্ট করে দেওয়া। কেননা উদরপূর্তি করে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস করলে প্রবৃত্তি ব্যক্তিকে অন্যায় কাজ, অকর্মণ্যতা ও অলসতার দিকে ঠেলে দেয়।
২- অন্তরকে চিন্তা-গবেষণা ও আল্লাহর যিকিরের জন্য খালি করা। কেননা এসব প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করলে অন্তর কঠিন ও অন্ধ হয়ে যায়। তখন তা অন্তর ও আল্লাহর যিকির ও তাঁর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-গবেষণার মাঝে বাধা সৃষ্টি করে এবং অলসতায় পেয়ে বসে। আর পানাহার ত্যাগ করে উদরশূণ্য করলে অন্তর আলোকিত হয়, নরম হয়, কঠোরতা দূরীভূত হয় এবং আল্লাহর যিকির ও তাঁর সৃষ্টি নিয়ে গবেষণার জন্য খালি হয়।
৩- ধন-ঐশ্বর্যবানরা তার ওপর আল্লাহর নি‘আমতের পরিমাণ বুঝতে পারে। সে গরীবের তুলনায় তার যথেষ্ট পরিমাণ পানাহার ও বিয়ে-শাদীর সামর্থ দেখতে পায় যা আল্লাহ তাকে দান করেছেন। আর সাওমের মাধ্যমে আল্লাহ তাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তা গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখেন। এতে তার কষ্ট অনুভব হয় এবং যাদেরকে আল্লাহ এ নি‘আমত থেকে বঞ্চিত করেছেন তখন সে উক্ত নি‘আমতের কথা স্মরণ করে। তখন তার ধন-ঐশ্বর্যের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় করে এবং এ কাজ তাকে অভাবী দুঃখী ভাইয়ের প্রতি সহযোগিতা ও সাধ্যমত সমবেদনা প্রকাশে অত্যাবশ্যকীয় করে তোলে।
৪- সাওম রক্ত চলাচলের রাস্তা সংকুচিত করে যা আদম সন্তানের মধ্যে শয়তানের চলাচলের পথ। কেননা শয়তান বনী আদমের রক্ত চলাচলের রাস্তায় চলে। ফলে সাওমের দ্বারা শয়তানের সে ধোঁকা বন্ধ হয়, মানুষের প্রবৃত্তি ও ক্রোধ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওমকে প্রবৃত্তির দমককারী বলেছেন। কেননা সাওম বিবাহের প্রবৃত্তিকে নি:শেষ করে দেয়।
জেনে রাখুন, সাওম পালন ছাড়া শুধু এসব বৈধ প্রবৃত্তি ত্যাগের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয় না যতক্ষণ সে সর্বাবস্থায় হারাম কাজ পরিহার না করবে। যেমন, মিথ্যা বলা, যুলুম করা, মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মানের ওপর সীমালঙ্ঘন করা ইত্যাদি পরিহার করা। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ، فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ».
“যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই”।[2]
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:
«لَيْسَ الصِّيَامُ مِنَ الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ فَقَطْ وَلَكِنَّ الصِّيَامَ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ».
“সাওম শুধু পানাহার ত্যাগ করা নয়; বরং অনর্থক ও অশ্লীল কথা-কাজ পরিহার করাই সাওম।”[3]
সহীহাইনে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«َالصِّيَامُ جُنَّةٌ، وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ، فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ».
“সাওম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সাওম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সাওম পালনকারী”।[4] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী «الجُنةُ» অর্থ ঢাল, যা দ্বারা ব্যক্তি আত্মরক্ষা করে, নিজেকে আড়াল করে এবং গুনাহে পতিত হওয়া থেকে তাকে রক্ষা করে। «والرَّفثُ» অর্থ অশ্লীলতা ও মন্দ কথাবার্তা।
মুসনাদে আহমাদ ও নাসাঈতে আবু ‘উবাইদাহ রহ. থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত,
«الصَّوْمُ جُنَّةٌ مَا لَمْ يَخْرِقْهَا».
“সাওম ঢালস্বরুপ যতক্ষণ পর্যন্ত তা ভেঙ্গে না ফেলে।”[5]
....
কতিপয় সৎপূর্বসূরী বলেছেন: সবচেয়ে দুর্বল সাওম হলো পানাহার পরিহার করা। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন: তুমি যখন সাওম পালন করবে তখন তোমার শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও জিহ্বাকে মিথ্যা ও হারাম কাজ থেকে সাওম (বিরত) রাখিও, প্রতিবেশিকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকো, তোমার যেন গম্ভীরতা ও প্রশান্তি থাকে, তুমি সাওমের দিন ও সাওম ব্যতীত দিনকে সমান করো না।
আমার শ্রবণ যদি হিফাযতকারী না হয়, আমার দৃষ্টি যদি অবনত না হয়, আমার কথা যদি চুপ না হয় তাহলে আমার সাওম শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা ছাড়া কিছুই হবে না। যদিও তুমি বলো, আজকে আমি সাওম পালন করছি, অথচ তুমি সায়িম নও।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«رُبَّ صَائِمٍ حَظُّهُ مِنْ صِيَامِهِ الْجُوعُ وَالْعَطَشُ، وَرُبَّ قَائِمٍ حَظُّهُ مِنْ قِيَامِهِ السَّهَرُ».
“কিছু সাওম পালনকারীর সাওমের বিনিময়ে ক্ষুধা ও পিপাসা ছাড়া কিছুই পায় না, আবার রাতে জাগরণকারী কিছু সালাত আদায়কারীর রাত্রি জাগরণ ব্যতীত কিছুই পায় না”।[6]
এর রহস্য হলো, বৈধ জিনিস পরিহার করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার পদ্ধতি হলো, উক্ত সে বৈধ জিনিস পরিহার করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের পরে ততক্ষণ তা পরিপূর্ণ হয় না যতক্ষণ হারাম জিনিস পরিহার করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা না হয়। সুতরাং যে ব্যক্তি হারামে পতিত হয়ে মুবাহ জিনিস পরিহার করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে তার উদাহরণ এরূপ যে ফরয ত্যাগ করে নফলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে।
....
«لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا: إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ، وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ».
“সাওম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে।”[7]
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৩।
[3] আততারগীর ওয়াততারহীব, ২/৩৬২, হাদীস নং ১৭৭৪। ইবনুল মাদীনী হাদীসের সনদটিকে মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ বলেছেন।
[4] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫১।
[5] নাসাঈ, হাদীস নং ২২৩৫; আলবানী রহ. হাদীসটির সনদটিকে সহীহ ও মাকতু‘ বলেছেন। মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১৬৯০, মুহাক্কীক শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[6] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১৬৯০, ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ১৯৯৭, ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৪৮১। হাদীসটির সনদ সহীহ।
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৪।
ইফতারের সময় সাওম পালনকারীর আনন্দ হলো, মানুষ সর্বদা তার উপযোগী জিনিস যেমন, খাদ্য, পানীয় ও সহবাস ইত্যাদির প্রতি আকৃষ্ট থাকে। এগুলো যখন নির্দিষ্ট সময় তার জন্য নিষিদ্ধ করা হয় অতঃপর অন্য সময় তা আবার হালাল করা হয় তখন সে নিষিদ্ধ হওয়ার পরে হালাল হওয়ার কারণে আনন্দিত হয়, বিশেষ করে উক্ত জিনিসের প্রতি যখন তার তীব্র প্রয়োজন দেখা দেয়।
অতএব, মানুষের অন্তর স্বাভাবিকভাবেই তখন আনন্দিত হয়, যখন সে কাজটি আল্লাহর প্রিয় কাজ হবে এবং শরী‘আতের দৃষ্টিতেও পছন্দনীয়। সায়িমের ইফতার এমনই একটি কাজ। দিনের বেলায় আল্লাহ তার জন্য প্রবৃত্তির সেসব কাজ করা হারাম করেছেন কিন্তু তিনি রাতের বেলায় উক্ত কাজগুলো হালাল করেছেন; বরং রাতের প্রথমভাগে ও শেষভাগে সেগুলো (ইফতার) তাড়াতাড়ি গ্রহণ করা তাঁর কাছে খুবই পছন্দনীয়। এমনকি তাঁর কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় বান্দা সে ব্যক্তি যে দ্রুত ইফতার গ্রহণ করে। কেননা সহীহাইনে সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছন,
«لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الفِطْرَ».
“লোকেরা যতদিন যাবৎ ওয়াক্ত হওয়া মাত্র ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে”।[1]
....
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত , রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ».
“আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর ফিরিশতাগণ সাহরী গ্রহণকারীদের ওপর সালাত পেশ করেন, অর্থাৎ তাদের কথা আলোচনা করেন”।[2]
সায়িম আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও তাঁর আনুগত্য করতে দিনের বেলায় নিজের প্রবৃত্তিকে দমন করেছে এবং আবার তাঁর সন্তুষ্টি ও আনুগত্যের জন্যই রাতের বেলায় সেসব প্রবৃত্তির দিকে দ্রুত এগিয়ে যায়। সুতরাং সে যা কিছু পরিহার করে তা তার রবেরই সন্তুষ্টি ও আদেশের জন্য আবার যখন সে সেসব বৈধ প্রবৃত্তির দিকে ফিরে যায় তখনও তার রবের আদেশেই ফিরে যায়। সুতরাং সে দু’ অবস্থায়ই তার রবের অনুগত। তাই সে যখন তার রবের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার করতে দ্রুত এগিয়ে যায় এবং তাঁর প্রশংসা করে তখন তার মাগফিরাত ও সর্বোচ্চ সন্তুষ্টি আশা করা যায়।
হাদীসে এসেছে,
«إِنَّ اللهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الْأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا».
“আল্লাহ তা‘আলা সে বান্দার প্রতি অবশ্যই সন্তুষ্ট হন যে বান্দা কোন খানা খেয়ে এর জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে অথবা পানীয় পান করে এর জন্য আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা করে”।[3] হয়ত তখন তার দো‘আ কবুল করা হয়। ... আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ثَلَاثَةٌ لَا تُرَدُّ دَعْوَتُهُمْ: الصَّائِمُ حَتَّى يُفْطِرَ».
“তিন ব্যক্তির দো‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। সাওম পালনকারী যতক্ষণ না ইফতার করে।”[4]
.....
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন,
«ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ، وَثَبَتَ الْأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ».
“তৃষ্ণা চলে গেছে, শিরাগুলো আদ্র হয়েছে আর ছাওয়াব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে”।[5]
সাওম পালনকারী যদি রাতে সালাত আদায় ও দিনের বেলায় সাওম পালনের উদ্দেশ্যে শরীরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য পানাহার করে তাহলে তা তার জন্য সাওয়াব হিসেবে ধর্তব্য হবে যেমনিভাবে সে রাতে ও দিনে কাজের জন্য শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘুমালে সেটি তার জন্য ইবাদত হবে। .....
আবু ‘আলিয়াহ রহ. বলেছেন: সাওম পালনকারী গীবত না করা পর্যন্ত ইবাদতে থাকে, যদিও সে বিছানায় ঘুমায়”।
অতএব, সায়িম রাত-দিন সব সময়ই ইবাদতে থাকে এবং সাওম অবস্থায় ও ইফতারির সময় তার দো‘আ কবুল করা হয়। সে দিনের বেলায় সাওম পালনকারী ও ধৈর্যশীল এবং রাতের বেলায় আহার গ্রহণকারী ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী। ইমাম তিরমিযী ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেন,
«الطَّاعِمُ الشَّاكِرُ بِمَنْزِلَةِ الصَّائِمِ الصَّابِرِ».
“আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী আহারকারীর মর্যাদা হলো ধৈর্যশীল সাওম পালনকারীর মতো”।[6] সুতরাং যে ব্যক্তি উপরোক্ত অর্থ বুঝবে সে সাওম পালনকারীর ইফতারের সময়ের আনন্দের অর্থও বুঝতে পারবে। কেননা ইফতার আল-কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়ার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿قُلۡ بِفَضۡلِ ٱللَّهِ وَبِرَحۡمَتِهِۦ فَبِذَٰلِكَ فَلۡيَفۡرَحُواْ هُوَ خَيۡرٞ مِّمَّا يَجۡمَعُونَ٥٨﴾ [يونس : ٥٨]
“বলুন ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়’। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম”। [সূরা ইউনুস, আয়াত: ৫৮] তবে এ আনন্দের পূর্বশর্ত হচ্ছে হালাল ইফতার। কিন্তু তার ইফতার যদি হারাম হয় তাহলে সে ঐসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে যারা আল্লাহর হালালকৃত বস্তু থেকে সাওম পালন করে; কিন্তু আল্লাহর হারামকৃত বস্তু দ্বারা ইফতার করে। তাদের দো‘আ কবুল করা হবে না।
আর তার রবের সাথে মিলিত হওয়ার সময় তার আনন্দ হলো, তার সাওমের গচ্ছিত সাওয়াব আল্লাহর কাছ থেকে অত্যন্ত প্রয়োজনের সময় প্রাপ্ত হবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيۡرٗا وَأَعۡظَمَ أَجۡرٗا٢٠﴾ [المزمل: ٢٠]
“আর তোমরা নিজদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রে পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে প্রতিদান হিসেবে উৎকৃষ্টতর ও মহত্তর রূপে”। [সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত: ২০]
«فَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ».
“(সাওম পালনকারীর জন্য রয়েছে দু’টি খুশী যা তাঁকে খুশী করে) এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে”।[7]
... ‘ঈসা ‘আলাইহিস সালাম বলেছেন: নিশ্চয় এ রাত-দিন দু’টি খাজাঞ্চি। তাই লক্ষ্য করো এ দু’টি ভাণ্ডারে তোমরা কী জমা করছ? দিনসমূহ মানুষের ভালো-মন্দ দ্বারা ভর্তি ভাণ্ডার। কিয়ামতের দিনে ব্যক্তির জন্য এ ভাণ্ডার খোলা হবে। মুত্তাকীরা তাদের ভাণ্ডারে ইজ্জত ও সম্মান পাবে আর অপরাধীরা তাতে পাবে আফসোস ও লাঞ্ছনা।
>[2] মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ১১৩৯৬; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ৩৪৬৭, শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। তবে গ্রন্থকারের বর্ণিত হাদীসের নস হুবহু পাওয়া যায়নি।
[3] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭৩৪।
[4] তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৯৮, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে দ‘ঈফ বলেছেন, তবে তিনি হাদীসের প্রথম অংশ ইমামুল ‘আদিলের পরিবর্তে মুসাফিরের কথা বা অন্য বর্ণনায় আল-ওয়ালিদের কথা উল্লেখ পূর্বক সহীহ বলেছেন। মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং ৮০৪৩, শু‘আইব আরনাঊত হাদীসটিকে তার অন্যান্য বর্ণনাসূত্র ও শাওয়াহেদের ভিত্তিতে সহীহ বলেছেন।
[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩৫৭। আলবানী রহ. হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
[6] তিরমিযী, হাদীস নং ২৪৮৬, তিরমিযী রহ. হাদীসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৪; ইবন খুযাইমাহ, হাদীস নং ১৮৯৬।
সাওম পালনকারীগণ দু’টি শ্রেণিতে বিভক্ত:
প্রথম প্রকার: যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ও কামভাব ত্যাগ করেছে বিনিময়ে জান্নাত পাওয়ার আশায়। এ শ্রেণির লোকেরা আল্লাহর সাথে ব্যবসা করেছে। আর যারা উত্তম কাজ করেন তাদের প্রতিদান আল্লাহ নষ্ট করেন না। যারা আল্লাহর সাথে ব্যবসা করবে তারা বিফল হবে না, বরং তারা বিরাট লাভবান হবে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّكَ لَنْ تَدَعَ شَيْئًا اتِّقَاءَ اللهِ إِلَّا أَعْطَاكَ اللهُ خَيْرًا مِنْه».
“আল্লাহর তাকওয়ার উদ্দেশ্যে যা কিছুই তুমি পরিহার করো, তিনি তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দিবেন”।[1] এসব সাওম পালনকারীকে জান্নাতে তাদের ইচ্ছামত খাদ্য, পানীয় ও নারী দান করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
﴿كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيَٓٔۢا بِمَآ أَسۡلَفۡتُمۡ فِي ٱلۡأَيَّامِ ٱلۡخَالِيَةِ٢٤﴾ [الحاقة: ٢٤]
“(তাদেরকে বলা হবে) বিগত দিনসমূহে তোমরা যা অগ্রে প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান করো। [সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত: ২৪] মুজাহিদ রহ. বলেছেন: এ আয়াতটি সাওম পালনকারীদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।
ইয়াকূব ইবন ইউসুফ রহ. বলেন, আমার কাছে এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিনে তার অলীদের (বন্ধুদেরকে) বলবেন, হে আমার বন্ধুগণ, আমি যখনই তোমাদের দিকে তাকাতাম তখনই তোমাদের ঠোঁট খাদ্যাভাবে শুষ্ক (কুঁচকানো) দেখতাম, তোমাদের চক্ষু বিনিদ্র দেখতাম, পেট ক্ষুধায় কাঁপত, আজকের দিনে তোমরা তোমাদের নি‘আমতে থাকো, তোমরা পরস্পরে পেয়ালা ভরা শরাব পান করো, তোমরা তোমাদের জন্য যা অগ্রে প্রেরণ করেছ তার বিনিময়ে তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান করো।
হাসান রহ. বলেন, নারী হুর মধুর নদীতে তার সাথে হেলান দিয়ে বসা আল্লাহর বন্ধুকে বলবেন, তুমি পান পেয়ালার পানীয় গ্রহণ করো। আল্লাহ তোমার প্রতি কঠিন গরমের দিনে তাকাতেন, তুমি প্রচণ্ড তৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও পিপাসিত ছিলে। তখন আল্লাহ তোমাকে নিয়ে ফিরিশতাদের সাথে গর্ববোধ করতেন। তিনি বলতেন, হে ফিরিশতাগণ তোমরা আমার বান্দাকে দেখো, সে তার স্ত্রী, কামভাব, খাদ্য ও পানীয় আমার সন্তুষ্টির জন্য আমার কাছে যা কিছু আছে তার বিনিময়ে ত্যাগ করেছে। তোমরা সাক্ষ্য থাকো, আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তিনি সেদিনই তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং আমাকে তোমার সাথে বিবাহ দিয়েছেন।
সহীহাইনে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِنَّ فِي الجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، يُقَالُ: أَيْنَ الصَّائِمُونَ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ».
“জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাঁদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তাঁরা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাঁদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে”।[2]
....
কোনো এক সৎপূর্বসূরী বলেছেন: আমার কাছে এ মর্মে সংবাদ পৌঁছেছে যে, হাশরের দিনে তাদের (সায়িমদের) জন্য দস্তরখানা বিছানো হবে, তারা সেখান থেকে খাবে আর অন্যান্য লোকদের হিসেব চলবে। তখন লোকজন বলবেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের হিসেব নিচ্ছেন অথচ তারা খাচ্ছে। তখন তাদেরকে বলা হবে, দুনিয়াতে তারা সাওম পালন করছিল আর তোমরা তখন খাচ্ছিলে। তারা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান ছিল আর তোমরা ঘুমিয়েছিলে।
কোন এক আল্লাহর ওলী স্বপ্নে দেখেন, তিনি যেন জান্নাতে প্রবেশ করেছেন। তিনি একজনকে বলতে শুনলেন, তোমার কী মনে আছে তুমি অমুক দিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সাওম পালন করছিলে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, অতঃপর তিনি (ফিরিশতা) আমাকে উপর ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দিয়ে সংবর্ধনা দিলেন। দুনিয়াতে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সামান্য সময় পানাহার ত্যাগ করলে আখিরাতে আল্লাহ এর বিনিময় এমন খাদ্য ও পানীয় দান করবেন যা কখনও নিঃশেষ হবে না এবং এমন সহধর্মীনী দান করবেন যারা কখনও মারা যাবে না।
....
রমযান মাসে সাওম পালনকারীদেরকে জান্নাতে বিবাহ দেওয়া হয়।
....
জান্নাতের হুরদের মহর হলো দীর্ঘ সময় ধরে তাহাজ্জুদের সালাত। আর এ সালাত রমযান মাসে অধিক হারে আদায় করা হয়।
দ্বিতীয় প্রকার: কতিপয় সাওম পালনকারী দুনিয়াতে আল্লাহ ব্যতীত সবকিছু থেকেই সাওম পালন তথা বিরত থাকে। তারা তাদের মস্তিষ্ক ও এর চিন্তাধারাকে হিফাযত করে, পেট ও পেটে যা কিছু ধরে সবকিছু সংরক্ষণ করে, মৃত্যু ও মৃত্যুপরবর্তী পরীক্ষাকে স্মরণ করে, তারা আখিরাত কামনা করে এবং দুনিয়ার সমস্ত চাকচিক্য বর্জন করে। এ ধরণের লোকদের ঈদুল ফিতর হবে তাদের রবের সাথে সাক্ষাতের দিন, তাঁকে দর্শন হবে তাদের আনন্দ-উল্লাস। হে সাওম পালনকারীগণ! আজকে তোমাদের প্রবৃত্তিকে দমন করে সাওম পালন করো যাতে আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার দিবস ঈদুল ফিতর হিসেবে পাও। দীর্ঘ জীবনের কারণে বেশি দিন বাঁচার প্রত্যাশা করবে না। তোমার জীবনে অধিকাংশ সাওম পালনের দিন শেষ হয়ে গেছে। তোমার ঈদের দিন তোমার রবের সাথে মিলিত হওয়ার দিন নিকটবর্তী হয়ে গেছে।
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:
«ولَخُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ».
“সাওম পালনকারীর মুখের (না খাওয়াজনিত) ঘ্রাণ আল্লাহর নিকট মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম”।[3] خلُوفُ الفم হলো সাওম অবস্থায় না খাওয়ার কারণে মুখের ঘ্রাণ। এ ঘ্রাণ দুনিয়াতে মানুষের কাছে অছন্দনীয়; কিন্তু আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। যেহেতু বান্দা আল্লাহর আনুগত্য ও তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের কারণেই তার এ গন্ধের সৃষ্টি হয়। এখানে দু’টি অর্থ হতে পারে:
প্রথম অর্থ: দুনিয়াতে সিয়াম যেহেতু বান্দা ও তার রবের মধ্যকার গোপনীয় বিষয়, তাই তিনি আখিরাতে সিয়াম পালনকারীদের মর্যাদা সুউচ্চ করতে সৃষ্টিকুলের কাছে সিয়ামের মর্যাদা স্পষ্ট করেছেন ও দুনিয়াতে মানুষের মাঝে সিয়াম পালনকারীগণ তাদের সিয়াম গোপন রাখার প্রতিদানে আল্লাহ আখিরাতে তাদেরকে মানুষের মাঝে সুপরিচিত করবেন।
...
মাকহূল রহ. বলেন, জান্নাতীগণ জান্নাতে সুঘ্রাণ পাবে। তখন তারা বলবেন, হে আমাদের রব! জান্নাতে প্রবেশের পর থেকে এত সুন্দর সুঘ্রাণ আর কখনও পাইনি। তখন তাদেরকে বলা হবে: এ হলো সিয়াম পালনকারীগণের মুখের সুঘ্রাণ।
দুনিয়াতে সাওম পালনকারীর মুখের দুর্গন্ধ তীব্র হয় তাই আখিরাতে তাদের মুখ থেকে সুঘ্রাণ বের হবে। এ সুঘ্রাণ দুভাবে হতে পারে।
প্রথমত: যা বাহ্যিক অনুভুতি দ্বারা বুঝা যায়। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন গালিব সালাত ও সাওম পালনকারী একজন একনিষ্ঠ ইবাদতকারী ছিলেন। তিনি মারা গেলে তাকে দাফন করা হলে তার কবরের মাটি থেকে মিসকের মত সুঘ্রাণ বের হতে লাগল। একজনকে স্বপ্নে দেখানো হলো তার কবর থেকে এত সুঘ্রাণ আসার কারণ কী? তাকে বলল, এগুলো কুরআন তিলাওয়াত ও সাওমের সু-ঘ্রাণ।
দ্বিতীয়ত: রূহ ও ক্বলব থেকে যে সুঘ্রাণ বের হয়। অতএব, যারা ইখলাসের সাথে ভালোবাসা নিয়ে সাওম পালন করবে তাদের অন্তর ও রূহ থেকে সুগন্ধি বের হবে। যেমন, হারিস আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যাকারিয়া আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলদেরকে বললেন,
«وَآمُرُكُمْ بِالصِّيَامِ، فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ فِي عِصَابَةٍ مَعَهُ صُرَّةٌ فِيهَا مِسْكٌ، فَكُلُّهُمْ يَعْجَبُ أَوْ يُعْجِبُهُ رِيحُهَا، وَإِنَّ رِيحَ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ».
“তোমাদের আমি সিয়ামের নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি একটি দলে অবস্থান করছে। তার সঙ্গে আছে মিশক ভর্তি একটি থলে। দলের প্রত্যেকের কাছেই এ সুগন্ধি ভালো লাগে। আল্লাহ তা‘আলার কাছে মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষা সিয়াম পালনকারীর (মুখের) গন্ধ অনেক বেশি সুগন্ধময়।”[4]
.....
দ্বিতীয় অর্থ: কেউ দুনিয়াতে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করার কারণে তা থেকে অপছন্দের কিছু সৃষ্টি হয়, আল্লাহর কাছে তা অপছন্দনীয় থাকে না। বরং সেটি তার কাছে হয়ে যায় অত্যন্ত পছন্দনীয়, খুবই প্রিয় ও পবিত্রতম। কেননা তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণের কারণেই উক্ত অপছন্দনীয় জিনিসের সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং এ ধরণের আমলকারীদেরকে দুনিয়াতে তাদের পুরষ্কারের ঘোষণা দিয়ে তাদের অন্তরে প্রশান্তি দিয়েছেন যাতে দুনিয়াতে কেউ তাদেরকে অপছন্দ না করেন।
...সাওম পালনকারীর মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও অধিক সু-ঘ্রাণ। আল্লাহর ভয়ে কোনো অপরাধীর বিলাপ তাঁর তাসবীহর চেয়েও উত্তম, তাঁর মহত্ব ও বড়ত্বের ভয়ে কেউ ভেঙ্গে পড়াই হলো প্রকৃত পূর্ণতা, তাঁর ভয়ে অপমানিত হওয়াই প্রকৃত সম্মান, তাঁর সন্তুষ্টির জন্য সাওম পালন করে ক্ষুধার্ত থাকা প্রকৃত পরিতৃপ্তি, তাঁর সন্তুষ্টির অন্বেষণে পিপাসার্ত থাকা প্রকৃত তৃষ্ণা নিবারণ ও তাঁর কাজে নিজেকে নিবেদিত করে দেওয়াই হলো প্রকৃত আরাম-আয়েশ। রমযান মাসে শয়তানকে যেহেতু শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় এবং সাওমের মাধ্যমে প্রবৃত্তিকে দমন করা হয় তখন তার প্রবৃত্তির শক্তি দূরীভূত হয়ে যায় এবং বিবেকের জন্যই সবকিছু হয়ে যায়। তাই অপরাধীর আর কোনো ওযর থাকল না। অতএব, হে ঘুমন্ত আত্মা জেগে ওঠ। হে তাকওয়া ও ঈমানের সূর্য তুমি উদিত হও, হে সৎকর্মকারীদের আমলনামাসমূহ, তোমরা উত্থিত হও, হে সৎকর্মকারীদের আত্মাগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য বিনয়ী হও, হে কঠোর পরিশ্রমীগণের পাসমূহ তোমরা তোমাদের রবের জন্য রুকু-সাজদাহ করো, হে তাহাজ্জুদ আদায়কারীদের চক্ষু আর ঘুমিও না, হে তাওবাকারীগণের গুনাহ তুমি আর ফিরে এসো না।
[2] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৯৬।
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫১।
[4] তিরমিযী, হাদীস নং ২৮৬৩, ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ গরীব বলেছেন। আলবানী রহ. হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।